অস্ত্র মামলায় খালাস পেলেন সেই বৃদ্ধা রাবেয়া
শতবর্ষী রাবেয়া খাতুনকে অস্ত্র মামলা থেকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এ মামলা দায়ের ও বিচারে জড়িতদের সতর্ক করে আদালত বলেছেন ভবিষ্যতে আরও সতর্ক হয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ রুল নিষ্পত্তি করে এ আদেশ দেন। গত ১৫ অক্টোবর রাবেয়া খাতুনকে নিয়ে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষ হয়।
গত ২০ আগস্ট এ মামলায় ক্ষমা চেয়েছিলেন ভোলার পুলিশ সুপার (এসপি)। শুনানিতে পুলিশ সুপার তার লিখিত বক্তব্যে ক্ষমা প্রার্থনা করার পাশাপাশি আদালতকে বলেছিলেন, ভবিষ্যতে আর এ ধরনের ভুল হবে না। পরে আদালত ক্ষমার আবেদন মঞ্জুর করেন।
এর আগে গত ৩ জুলাই এক অস্ত্রমামলার আসামি জুলহাস বেঁচে আছেন কিনা সে বিষয়ে পুলিশের কাছে প্রতিবেদন আকারে জানাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওই আদেশের ধারাবাহিকতায় গত ১৭ জুলাই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে দেয়া প্রতিবেদনে জানানো হয়, জুলহাস ১০ থেকে ১২ বছর আগে পরিবার নিয়ে ভোলায় চলে গেছেন। অন্যদিকে ভোলার পুলিশ সুপারের দাখিল করা প্রতিবেদন বলছে, ভোলায় জুলহাস নামে কোন ব্যাক্তি নেই এবং তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এরপর রাবেয়ার আইনজীবী আশরাফুল আলম নোবেল আদালতকে বলেন, ২০০৪ সালের ১ নভেম্বর ফার্মগেইটের তেস্তুরি বাজারে জুলহাসকে দুষ্কৃতিকারীরা হত্যা করে। এ ঘটনায় তার মা নুরজাহান বেগম বাদি হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। কিন্তু এরপরও পুলিশের পরষ্পর বিরোধী প্রতিবেদনে অসন্তোষ প্রকাশ করেন হাইকোর্ট।
পরে আদালত জুলহাস জীবিত নাকি মৃত সে বিষয়ে দাখিল করা প্রতিবেদনটি যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করায় ভোলার পুলিশ সুপারকে গত ১৭ জুলাই তলবের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ এপ্রিল একটি জাতীয় দৈনিকে ‘অশীতিপর রাবেয়া: আদালতের বারান্দায় আর কত ঘুরবেন তিনি’শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তা সংযুক্ত করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।
ওই প্রতিবেদনে বৃদ্ধার বরাত দিয়ে বলা হয়, ‘১৮ বছর ধরে আদালতে হাজিরা দেই। মামলা শেষ হয় না। কবে শেষ হবে, তাও জানি না। পুলিশরে শরবত, মোরাব্বা বানাই খাওয়াছি। তারপরেও মামলায় আমারে আসামি বানাইছে। আমি আর বাঁচতে চাই না। মরতে চাই। অনেকদিন ধরে এই মামলায় হাজিরা দেই। আদালত আমাকে মামলা থেকে খালাসও দেয় না, শাস্তিও দেয় না।’
পরে ওই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত বিচারিক আদালতে থাকা মামলার কার্যক্রম হাইকোর্ট স্থগিত করেন এবং মামলার অগ্রগতি নিয়ে শুনানি চলমান রাখেন।