ঋণ বিতরণে বাংলাদেশ ব্যাংককে ৯ সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশ
ব্যাংকের ঋণ বিতরণ ও আদায়ে ঘাটতি চিহ্নিত করতে ৯ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই কমিটির সুপারিশ ও পরামর্শ অনুসরণ করতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে।
আদেশে আদালত আরও বলেছেন, গত ১৬ মে ২ শতাংশ ঋণ সুবিধা দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তি আইনত বৈধ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এখতিয়ার রয়েছে এ ধরণের বিজ্ঞপ্তি জারি করার। এ বিজ্ঞপ্তির মেয়াদ আরও ৯০ দিনের জন্য বাড়াতে পারবে কর্তৃপক্ষ। খেলাপিদের নতুন ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে ২০১২ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা বিজ্ঞপ্তির আলোকে ১৫% ডাউন পেমেন্ট দিয়ে আবেদন করতে হবে।
রোববার (৩ নভেম্বর) ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধে কমিশন গঠনের রুলের নিষ্পত্তি করে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলম সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ রায় দিয়েছেন।
পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, অর্থ হচ্ছে অর্থনীতির রক্ত। এর সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকা দরকার। মানবদেহে হৃৎপিণ্ড যেমন রক্ত সঞ্চালন করে তেমনি অর্থনীতিতে রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যম ব্যাংক।
পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, দেশে কয়েকটি আর্থিক কেলেঙ্কারি ঘটেছে। এর মধ্যে হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ ও বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি উল্লেখযোগ্য। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশন আর্থিক অনিয়ম রোধে পদক্ষেপ নিয়েছে।
ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা বন্ধে তদন্ত কমিশন গঠন এবং ঋণখেলাপিদের ২ শতাংশ সুবিধার রুলের রায়ে এ পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন আদালত।
গত ২৮ অক্টোবর রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে রায়ের জন্য ৩ নভেম্বর দিন নির্ধারণ করেছিলেন আদালত।
রায় ঘোষণার সময় রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি ও ব্যারিস্টার মনিরুজ্জামান ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
আদেশের পর মনজিল মোরসেদ বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরে যারা বিশেষজ্ঞ আছেন সেই রকম নয়জন ব্যক্তিকে দিয়ে একটি কমিটি গঠন করে, সেই কমিটি সরকারি বেসরকারি সকল ব্যাংকের যে দুর্বলতা, বিশেষ করে ঋণ পরিশোধ, ঋণ অনুমোদন এবং সংগ্রহে অনিয়মসহ সব বিষয়ে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি করবেন। সেখানে তারা এগুলো তৈরি করে কি কি উপায়ে এগুলো দূর করা যায় তা সুপারিশ করবেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই সুপারিশ করবে।
২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টের বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০১২ সালের ‘মাস্টার সার্কুলার অন লোন রিশিডিউল’ সংক্রান্ত সার্কুলার-যেটাতে বলা আছে কেউ যদি ঋণ পুন:তফসিলের সুযোগ গ্রহণ করে পরবর্তীকালে সে যদি ঋণ নিতে যায় তার কাছে যে ঋণ পাবে তার ১৫ শতাংশ অর্থ দিতে হবে। এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে। এবং সিআইবিতে তার নাম পাঠাতে হবে।
আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, আদালত বাংলাদেশ ব্যাংককে একটি কমিটি করতে বলেছেন। কমিটির কাজ হচ্ছে- ব্যাংকিং সেক্টরে অনিয়ম কেন হয়েছে সেটি তদন্ত করে দেখে প্রতিবেদন তৈরি করবে।
আইনজীবী মুনিরুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সব সময়েই বিভিন্ন সময়ে গঠিত কমিটির পরামর্শ নিয়ে কাজ করে থাকে। আমি মনে করি আদালতের আদেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজে প্রভাব পড়বে না।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) রিট অনিয়ম রোধে কমিশন গঠনের নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদনটি দায়ের করে। আইনজীবী মনজিল মোরসেদ এইচআরপিবির প্রেসিডেন্ট।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি ঋণখেলাপিদের তালিকা দাখিলের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট । একই সঙ্গে ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা বন্ধে তদন্ত কমিশন গঠনের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না ও এই কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়।
পরে গত ২৪ জুন বাংলাদেশ ব্যাংক সিলগালা করে ঋণখেলাপিদের তালিকা হাইকোর্টে দাখিল করে। সিলগালা থাকায় ঋণখেলাপিদের নাম প্রকাশ হয়নি।
এরমধ্যে গত ১৬ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে খেলাপি ঋণের ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হলে এইচআরপিবির সম্পূরক আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২১ মে ওই বিজ্ঞপ্তির ওপর স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ দিয়েছিলেন আদালত।
এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ২ জুলাই আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত ৮ জুলাই পর্যন্ত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন। ৮ জুলাই এ স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরও দুই মাস বাড়ানো হয়।
আপিল বিভাগ তখন বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চকে রুল নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেন।