ওয়াকফ সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারবেন না প্রশাসক: হাইকোর্ট
২০১৩ সালের ওয়াকফ হস্তান্তর ও উন্নয়ন আইনের তিনটি ধারা ও একটি দফা বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। ফলে ওয়াকফ প্রশাসক এখন থেকে সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারবেন না। রায়ে ওয়াকফ (সম্পত্তি হস্তান্তর ও উন্নয়ন) আইনের ৩, ৪(চ), ৮ ও ১২ ধারা অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেন আদালত।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) জনস্বার্থে দায়ের করা একটি রিটের রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. ফারুক (এম ফারুক) সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ রায় দিয়েছেন। ২০১৩ সালে জনস্বার্থে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ বি এম নুরুল ইসলাম ওই আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদনটি করেছিলেন।
আইনের ৩ ধারায় আইনের প্রাধান্য, ৪ (চ) ধারায় হস্তান্তর পদ্ধতি-অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে উন্নয়নের জন্য হস্তান্তরের মাধ্যমে, ৮ ধারায় হস্তান্তরের উদ্দেশ্যে বিশেষ কমিটি এবং ১২ ধারায় অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে উন্নয়নের জন্য হস্তান্তরের বিধান রয়েছে।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন রিট আবেদনকারী জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ বি এম নুরুল ইসলাম। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. গিয়াসউদ্দিন আহম্মেদ, ড. মো. ইদ্রিস মোল্লা ও মো. মহিউদ্দিন (মহিম)। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান।
রায়ের পর আইনজীবী এ বি এম নুরুল ইসলাম বলেন, রাসুল (সা.) এর জীবিত অবস্থা থেকে ওয়াকফ এর বিধান চালু হয়েছে। এটা কুরআন নির্দেশিত পন্থা যে, যার অঢেল সম্পত্তি রয়েছে তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ওয়াকফে তার সম্পত্তির কিছু অংশ দান করে থাকেন। ওয়াকফের সম্পত্তির আয় থেকে তিনটি উদ্দেশ্যে ব্যয় করা যাবে যথা-ধর্মীয়, দাতব্য ও মানবহিতৈষী কাজে। অন্য কোনো কাজে এ সম্পত্তি হস্তান্তরযোগ্য নয়।
তিনি বলেন, ২০১৩ সালের সরকার বিশেষ আইন ওয়াকফ (সম্পত্তি হস্তান্তর ও উন্নয়ন) প্রণয়ন করে। এ আইনের ৩ ধারায় আইনটিকে সকল আইনের থেকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। পাশাপাশি ওয়াকফ সম্পত্তি হস্তান্তরের বিধান রাখা হয়। আইনে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে প্রশাসক ওয়াকফ সম্পত্তি ঢাকায় বসে একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে হস্তান্তর বা অংশীদারিত্বের দেখভাল করছেন। ওই কমিটিতে মোতায়াল্লী, স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ বা প্রশাসনকে সম্পৃক্ত নন। ফলে গত পাঁচ বছরে উন্নয়নের নামে অনেক ওয়াকফ সম্পত্তি হস্তান্তর হয়ে গেছে।
হাইকোর্ট রুল নিষ্পত্তি করে আইনের তিনটি ধারা ও একটি উপধারা বাতিল ঘোষণা করেছেন। ফলে এখন থেকে ওয়াকফ প্রশাসকের ক্ষমতা খর্ব হলো। তিনি আর সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারবেন না।
২০১৩ সালে ওয়াকফ (সম্পত্তি হস্তান্তর ও উন্নয়ন) আইনের বিধান চ্যালেঞ্জ করে রিটের পর ওই বছরের ২৯ এপ্রিল হাইকোর্ট আইনটি কেন অসাংবিধানিক এবং ওয়াকফ সংক্রান্ত অন্যান্য আইনের পরিপন্থী হবে না তার কারণ জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। কয়েক কার্যদিবস শুনানি শেষে রুল যথাযথ ঘোষণা করে এ রায় দিলেন হাইকোর্ট।