১০০ কোটি টাকা পেলেন মুন সিনেমা হলের মালিক
দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ে অবশেষে ৯৯ কোটি ২১ লাখ ৭৩ হাজার ৭৪ টাকা ২৭ পয়সার চেক পেয়েছেন পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাটে মুন সিনেমা হলের মালিক মাকসুদুল আলম।
আপিল বিভাগে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ চেক হস্তান্তর করেছে।
একইসঙ্গে মুন সিনেমা হলের জায়গা মঙ্গলবার, বুধবার অথবা সুবিধাজনক সময়ের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ কল্যাণ ট্রাস্টের অনুকূলে রেজিস্ট্রি করে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের বেঞ্চে এ চেক হস্তান্তর করা হয়।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। মুন সিনেমা হলের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সাইফুল্লাহ মামুন।
আজমালুল হোসেন কিউসি আদেশের পর বলেন, এ লড়াইটা শুরু হয়েছে ১৯৭২ সালে। উনি (মুন সিনেমার মালিক) তিনটি রিট করেছেন। তৃতীয় রিট ২০০৫ সালে শুনানি হয়েছিল হাইকোর্ট ডিভিশনে। তারপরে আপিল বিভাগে ২০১০ এ। তারপর আদালত অবমাননার মামলা করেছিলেন ২০১৩ সালে। যেটার ফল আজকে আমরা পেয়েছি। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট, যে টাকাটা দেওয়ার কথা ছিল সেটা দিয়েছে। তারপরেও কাজ শেষ হয়নি। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট যেন এ জমিটির মালিক হয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আদেশ দিয়েছেন। এটা আজকে কালকে অথবা অন্য একদিন রেজিস্ট্রেশন করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। টাকা এখন খরচ করতে পারবেন। তবে জমি রেজিস্ট্রেশন করে দিতে হবে। ৫ জানুয়ারি চূড়ান্ত আদেশের জন্য তারিখ রেখেছেন।
জমির মালিক মাকসুদুল আলম জানান, আমার ডিমান্ড ছিল অনেক। আমি পাইলাম অনেক কম। মাত্র ৯৯ কোটি পেলাম।
এর আগে পুরান ঢাকার ওয়াইজ ঘাটে একসময়ে মুন সিনেমা হলের মালিক ছিল ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি। মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই সম্পত্তি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। পরে ওই সম্পত্তি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে ন্যস্ত করা হয়। ইটালিয়ান মার্বেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুল আলম এই সম্পত্তির মালিকানা দাবি করেন।
জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ঘোষিত এক সামরিক ফরমানে সরকার কোনো সম্পত্তি পরিত্যক্ত ঘোষণা করলে তা আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না বলা হয়। ইটালিয়ান মার্বেল ২০০০ সালে হাইকোর্টে ওই ফরমানসহ সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করেন।
২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট মোশতাক, সায়েম ও জিয়ার ক্ষমতাগ্রহণ সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করে রায় দেওয়া হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয় ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন। পাশাপাশি ৯০ দিনের মধ্যে ইটালিয়ান মার্বেলকে মুন সিনেমা হল ফেরত দিতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ অবস্থায় সম্পত্তি ফিরে পেতে ২০১২ সালের ১০ জানুয়ারি ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করেন।
এর ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের ১৫ জানুয়ারি আপিল বিভাগ ওই সম্পত্তি অভিজ্ঞ ও নিরপেক্ষ এক প্রকৌশলীকে দিয়ে জমি ও স্থাপনার মূল্য নির্ধারণ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন।
অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে দিয়ে এই মূল্য নির্ধারণ করতে বলা হয়। এর ধারাবাহিকতায় এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। সেই প্রতিবেদন অনুসারে মুন সিনেমা হল মালিককে প্রায় ১০০ কোটি টাকা পরিশোধে নির্দেশ দেয় আপিল বিভাগ।