কী করবেন, কী করবেন না
দেশে করোনাভাইরাসে (কভিড-১৯) আক্রান্ত রোগী দিনদিন বেড়েইে চলেছে। সেইসাথে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমিত হয়ে সর্বোচ্চ ২১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু বরণ করেছেন ১৬ হাজার ৪ জন। অন্যান্য সময়ের চেয়ে এখন সারা দেশে করোনা সংক্রমণের প্রবণতা অনেক বেশি। এই সময়ে পরিবারের কেউ করোনা আক্রান্ত হলে কী করবেন আর কী করবেন না- তা নিয়ে অনেকে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন। গণমাধ্যমকে দেওয়া ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সাবেক প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদের কিছু পরামর্শ তুলে ধরা হলো-
আশ্বাস দিন সেরে উঠবেন : পরিচিত কারোর করোনা হয়েছে বলেই তাকে একঘরে করে দেবেন না। বাড়ির জানালা-দরজা অযথা আতঙ্কে বন্ধ করে রাখবেন না। কেউ আক্রান্ত হলে তাকে আশ্বাস দিন যে চিন্তার কোনো কারণ নেই। আর পাঁচটা ভাইরাস সংক্রমণের মতোই এটা। তিনিও ঘরে থেকে ঠিক সেরে উঠবেন। সেই সঙ্গে বলুন যে আপনি তাঁর পাশে আছেন। এতে ব্যক্তিটি দুশ্চিন্তা ঝেড়ে বরং মনোবল পাবেন।
দুশ্চিন্তা একদম নয় : সাধারণ সর্দি-কাশিও করোনাভাইরাসের কারণে হয়। সুতরাং কেউ করোনা আক্রান্ত হলেই যে তিনি জটিল হয়ে যাবেন—বিষয়টি তা নয়। তাই করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ হলে একদম দুশ্চিন্তা করা যাবে না। এতে ইমিউনিটি সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাধাগ্রস্ত হয়। এই সময় তাই হাসি-খুশি থাকার চেষ্টা করুন।
নিয়মিত মনিটর করুন : করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি সময়ে ওষুধ, খাবার, পানি খাচ্ছেন কি না সেদিকে খেয়াল রাখুন। তাঁর অক্সিজেন লেভেল বারবার চেক করতে বলুন। জ্বর কত আছে তাও দেখুন। যদি প্রয়োজনে তাঁর ঘরে ঢুকতে হয় তাহলে তিনটা মাস্ক, গ্লাভস পরে যান। মাথায় ক্যাপ রাখুন। যতটা সম্ভব শরীরী স্পর্শ থেকে দূরে থাকুন।
গরম পানি ব্যবহার করুন : দিনে চার থেকে ছয়বার গার্গল করুন। এ ছাড়া দিনে বেশ কয়েকবার গরম পানির তাপ নিতে পারেন। লাল চা, ভেষজ চা পান করুন।
নিরাপদ দূরত্বে থাকুন : কেউ করোনা আক্রান্ত হলে সম্পূর্ণ আলাদা ঘরে আইসোলেশনে থাকুন। পরিবারের অসুস্থ ব্যক্তিটির কাছ থেকে অন্যরা অন্তত এক মিটার বা ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন। কেননা হাঁচি বা কাশির ড্রপলেটের মাধ্যমে এই রোগ দ্রুত ছড়ায়। অসুস্থ পশু-পাখি থেকেও দূরে থাকুন।
খাবার ভালোভাবে সিদ্ধ করুন : তরিতরকারি বা রান্না করা খাবারদাবার ভালো করে সিদ্ধ করে খান। আধা সিদ্ধ বা আধা কাঁচা কোনো কিছু খাবেন না। অসুস্থ প্রাণীর রান্না করা মাংস, কাঁচা ডিম ইত্যাদি খাবেন না।
পর্যাপ্ত ভিটামিন ‘সি’ গ্রহণ করুন : দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন ‘সি’ বেশ কার্যকর। ভিটামিন ‘সি’-সমৃদ্ধ খাবার খেলে শরীর দ্রুত চাঙ্গা হবে। তাই এই সময় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ জাতীয় খাবার ও ফলমূল খান। বিশেষ করে লেবু, মালটা, আমলকী, লটকন ইত্যাদি ফল বেশি খান।
পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ করুন : এই সময় পর্যাপ্ত প্রোটিন জাতীয় খাবার খান। সম্ভব হলে প্রতিদিন ২-৪টি করে ডিম খান। স্যুপ খেতে পারেন। অন্যান্য প্রাণিজ প্রোটিন খেতে পারেন। এগুলো শারীরিক দুর্বলতা কাটানোসহ করোনা সংক্রমণ থেকে সেরে উঠতে দ্রুত সহায়তা করে।
বেশি রাত জাগবেন না : করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য পর্যাপ্ত ঘুম খুব উপকারী। এই সময় কমপক্ষে সাত-আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। বেশি রাত জাগা ক্ষতিকর। বরং রাতের প্রথম ভাগে ঘুমিয়ে পড়া জরুরি। ভোর ৩টা-৪টা পর্যন্ত ঘুমানো ভালো। করোনা সংক্রমণ হলে দেহের মধ্যে যে ভাঙচুর হয় এই সময়ের ঘুমে তা মেরামত হয়।
জ্বর হলেই হাসপাতাল নয় : জ্বর হলেই হাসপাতালে ছোটার দরকার নেই। কারণ এই রোগ খুবই সংক্রামক। এতে একজন থেকে অন্যজন আক্রান্ত হতে পারেন। তাই যথাসম্ভব হাসপাতালের পরিবেশ এড়িয়ে চলুন। তবে শ্বাসকষ্ট হলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হন।
অক্সিজেন স্যাচুরেশন দেখুন : ইদানীং করোনা আক্রান্ত রোগীদের হঠাৎ শ্বাসকষ্ট দেখা দিচ্ছে। এ জন্য পালস অক্সিমিটার সঙ্গে রাখুন। নিয়মিত অক্সিজেনের মাত্রা চেক করুন। সাধারণত পালস অক্সিমিটারে ৯৫ থেকে ১০০ শতাংশ অক্সিজেন মাত্রাকে স্বাভাবিক হিসেবে ধরা হয়। এই মাত্রা ৯৫ শতাংশের কম হলে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়।
অন্যদের দিকে নজর দিন : বাসায় কোনো সদস্যের করোনা পজিটিভ হলে এবং ওই বাসার অন্য সদস্যদের নানা উপসর্গ দেখা দিলে ধরে নিতে হবে তিনিও করোনা পজিটিভ। সেই বিবেচনায় তাঁদেরও চিকিৎসা দিতে হবে।
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন : চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া করোনার চিকিৎসা নিজে নিজে করবেন না। অনেকে ইন্টারনেট থেকে নিয়ে অন্যের দেওয়া প্রেসক্রিপশন ফলো করে। এটা কিন্তু মোটেই ঠিক না। মনে রাখতে হবে, একেকজনের রোগের ধরন, বয়স ও জটিলতা একেক রকম।