কপিরাইট সুরক্ষার নামে হয়রানির প্রতিবাদ
কপিরাইট সুরক্ষার নামে কতিপয় কুচক্রী মহলের হাতে দেশের সংগীতশিল্পী, মিউজিক কোম্পানি, চলচ্চিত্র প্রযোজক ও সার্ভিস প্রোভাইডারদের হয়রানি করা হচ্ছে বলে প্রতিবাদ জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সংগঠন।
প্রতিবাদকারী সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ মিউজিক্যাল ব্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন (বামবা), মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এমআইবি) ও বাংলাদেশ ফিল্ম প্রোডিউসার্স অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউটর্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফপিডিএ)।
বৃহস্পতিবার (৬ আগস্ট) রাজধানীর একটি রেস্তোরাঁয় এই যৌথ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বামবার সভাপতি ব্যান্ড তারকা হামিন আহমেদ বলেন, মিউজিক বা চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে আদৌ সংশ্লিষ্ট নন, ওলোরা আফরিন নামে নিজেকে আইনজীবী পরিচয়দানকারী একজন ব্যক্তি কিভাবে লাইসেন্সিং অ্যান্ড কালেক্টিং সোসাইটি ফর সিনেমাটোগ্রাফ ফিল্ম (এলসিএসসিএফ) নামে একটি সংগঠনের অনুমোদন পেলেন, তা বিস্ময়কর। শুধু তাই নয়, ওই সোসাইটির ব্যানার কাজ লাগিয়ে কপিরাইট সুরক্ষার নামে তিনি নিজের স্বার্থ হাসিলে একের পর এক অপকর্মের মাধ্যমে এ শিল্পখাতে গভীর অস্থিরতা তৈরি করে চলছেন।
তিনি বলেন, অথচ কপিরাইট আইন লঙ্ঘনের নীতিমালায় সুনির্দিষ্টভাবে বলা আছে, কপিরাইট নিয়ে কোনো জটিলতা হলে প্রথমে কপিরাইট অফিসের সহায়তায় পারস্পরিক আলাপ ও সালিশির মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে বিষয়টি সুরাহা করার, অথচ এসব বিধির তিনি কোনো তোয়াক্কা করছেন না। মোটকথা, এ লাইসেন্সই পাওয়া অবৈধ। এ লাইসেন্স পেয়ে শুধু হয়রানি করতো, এটা মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির জন্য ভীতিকর। অবিলম্বে ওই সংগঠনের লাইসেন্স বাতিল করতে হবে।
হামিন আহমেদ বলেন, গত ২৬ জুলাই একটি মিথ্যা মামলায় বিনা ওয়ারেন্টে বামবার সদস্য জামশেদ চৌধুরীকে গ্রেফতার করে গুলশান থানা পুলিশ। এ ঘটনা মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির জন্য একটি বিস্ময়কর ও মর্মাহত ছিলাম। যে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে, আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। কপিরাইট আইনে এ মামলা করা হয়েছে, কিন্তু এটি কোনো ক্রাইটেরিয়াতেই পড়ে না। এটি একটি সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলা। এছাড়া তার বিরুদ্ধে আইসিটি আইনের ধারাও যুক্ত করা হয়। এ যদি অবস্থা হয়, তাহলে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির জন্য উদ্বেগজনক। একটি মিথ্যা মামলায় যদি একজন মিউজিক ব্যান্ড শিল্পীকে হাতকড়া পরাতে পারে, তাহলে সেটা দুঃখজনক।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আইনজীবী বলে দাবি করা ওলোরা আফরিন তার লাইসেন্সিং অ্যান্ড কালেক্টিং সোসাইটি ফর সিনেমাটোগ্রাফ ফিল্ম নামের প্রতিষ্ঠানটি কপিরাইট দেখার অনুমতি (সিএমও) নিয়েছে। এবং কপিরাইট প্রশ্নে নানা ধরনের মামলা ও নোটিশ পাঠিয়ে যাচ্ছেন। অথচ এই প্রতিষ্ঠানে সিনেমা সংশ্লিষ্ট কেউ নাই। সেই আইনজীবী নিজেও সিনেমার সঙ্গে যুক্ত নন। তার দেওয়া ‘অবৈধ, অনৈতিক ও অস্বাস্থ্যকর’ প্রস্তাবে কেউ রাজি না হলেই তার বিরুদ্ধে নোটিশ পাঠান সেই আইনজীবী। যার শিকার হন ইউটিউব কন্টেন্টের বাংলাদেশ অংশের দেখভাল করা কাইনেটিক নেটওয়ার্কের জুয়েল মোর্শেদ, নাফিস, জামশেদ ও সানজি। এমনকি কারাগারে যেতে হয় জামশেদকে।
মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিজ ওনারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এমআইবি) প্রেসিডেন্ট এ কে এম আরিফুর রহমান বলেন, আমাদের সমস্যা আমরা সমাধান করবো। কোনও তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ গ্রহণযোগ্য নয়।
বাংলাদেশ ফিল্ম প্রোডিউসার্স অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউটর্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফপিডিএ) সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু বলেন, দ্রুত ওলোরা আফরিন ও তার প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সিং অ্যান্ড কালেক্টিং সোসাইটি ফর সিনেমাটোগ্রাফ ফিল্মকে দেওয়া কপিরাইট দেখভালের সিএমও বাতিল চাই। এটাকে বাতিল না করলে আমরা সম্মিলিতভাবে আইনি পদক্ষেপ নেবো।
সংবাদ সম্মেলনে ওলোরা আফরিনের ফোন কথোপকথনের রেকর্ড শোনানো হয়। যেখানে শোনা যায়, তিনি কথায় কথায় মামলা করার হুমকি দিচ্ছেন শিল্পীদের।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন এমআইবি’র মহাসচিব এসকে সাহেদ আলী পাপ্পু, কাইনেটিক নেটওয়ার্কের প্রতিনিধি ও সংগীতশিল্পী জুয়েল মোর্শেদ, চেনা সুরের স্বত্বাধিকারী ও গীতিকার হাসান মতিউর রহমান, ইবিএসের পরিচালক এনামুল হক, গীতিকার মনিরুজ্জামান মনিরসহ অনেকে। এতে জানানো হয়, এখন থেকে বামবা, এমআইবি ও বিএফপিডিএ একযোগে কাজ করবে।