বঙ্গবন্ধুর চলার পথের প্রেরণা ছিল বঙ্গমাতা
বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রতিটি ধাপে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী হিসেবে নয় একজন নীরব দক্ষ সংগঠক হিসেবে যিনি নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছেন এবং বঙ্গবন্ধুকে হিমালয় সমআসনে অধিষ্ঠিত করেছেন তিনি বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।
বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিন উপলক্ষে ৮ আগস্ট রাতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে আয়োজিত হয় 'গৃহকোণ থেকে জনগণের হৃদয়ে' শীর্ষক বিশেষ ওয়েবিনার। সাবেক ছাত্র নেতা ও কলামিস্ট সুভাষ সিংহ রায়ের সঞ্চালনায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমীর হোসেন আমু, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও কবি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সিনিয়র সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত।
আমির হোসেন আমু আলোচনার শুরুতে বঙ্গমাতাকে বঙ্গবন্ধুর সহযোদ্ধা হিসেবে উল্লেখ করেন এবং ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের নিহত হওয়ার ঘটনার কথা উল্লেখ করে শোক ও শ্রদ্ধা জানান।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর কোনো পিছুটান ছিলো না বলেই বঙ্গবন্ধু দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে যেতে পেরেছিলেন, আর বঙ্গবন্ধুর এই চলার পথকে মসৃণ করেছিলেন তার স্ত্রী বঙ্গমাতা শেখ মুজিব। বেগম মুজিবের মধ্যে কিছু ঐশ্বরিক ক্ষমতা থাকতে পারে নয়ত যে বয়সে ছেলেমেয়েদের বাবা-মার কাছে আবদার থাকে সে বয়সেও বেগম মুজিব বায়না না করে বঙ্গবন্ধুর হাতে তার জমানো টাকা তুলে দিতেন যাতে বঙ্গবন্ধুর কলকাতাতে কষ্ট না হয়। এই যে তার ত্যাগ, সেই ত্যাগের বিনিময়েই বঙ্গবন্ধুর কিন্তু বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠা। বঙ্গবন্ধুর জীবনে সবচেয়ে বড় আশির্বাদ হিসেবে বেগম মুজিব এসেছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাকে যেভাবে স্বীকার করে নিয়েছেন, মূল্যায়ন করেছিলেন তা তার লেখনীর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।
মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, আমার সৌভাগ্য হয়েছিলো বঙ্গমাতাকে দেখার, বাবার সাথে ৩২ নম্বর বাড়ি গিয়েছিলাম একবার। তাকে দেখে আমি অবাক হয়েছিলাম, এত বড় একজন মানুষের স্ত্রী এত সাধারণ হবে আমার ধারনাই ছিলো না। পরবর্তীতে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়লে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কাছ থেকে বঙ্গমাতাকে নিয়ে আমার জানার আরো সুযোগ হয়- তার মধ্যে আদর্শ ছিলো, মানবতা ছিলো, দেশপ্রেম ছিলো বলেই বঙ্গবন্ধুর চলার পথে কখনও বাধা হননি তিনি, বরং হয়েছেন চলার পথের শক্তি, হয়েছেন প্রেরণা।
সিনিয়র সাংবাদিক অজয় দাস গুপ্ত মূল প্রবন্ধ উপস্থানের সময় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব সম্পর্কে নানা জানা-অজানা কথা তুলে ধরেন। তিনি তার প্রবন্ধে, বঙ্গমাতাকে একজন শান্ত ধীরস্থির ধৈর্যশীল সাহসী প্রজ্ঞাবান তেজস্বিনী এবং অমায়িক হিসেবে উল্লেখ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও কবি অধ্যাপক ডঃ মুহাম্মদ সামাদ বলেন, পৃথিবীতে কিছু মহিয়সি নারী আছেন যারা একজন মহামানবকে তৈরি করতে সাহায্য করেছিলেন আমাদের বঙ্গমাতা বেগম মুজিব তাদের মধ্য একজন। বঙ্গবন্ধুর যে তিন খন্ড আত্মজীবনী বের হয়েছে সেগুলো লিখতে অনুপ্রেরনা দিয়েছিলেন বঙ্গমাতা। ছয় দফা, গনঅভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচন, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অনুপ্রেরনা হয়ে কাজ করেছেন বঙ্গমাতা মুজিব বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য ডঃ নাসরীন আহমদ বলেন, আমরা প্রতিবেশি ছিলাম, দুই বাড়ির মাঝে ছোট একটা দেয়াল, একটা ছোট গেইট। সেই গেইট দিয়ে আমাদের অবাদ যাতায়াত ছিলো। তাদের বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন থেকে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের অবাদ যাতায়াত ছিলো, আর এসব সামলাতেন বঙ্গমাতা শেখ মুজিব।