রংপুর জেলা জুড়ে অবৈধ ইটভাটার নির্গত গ্যাসে কৃষিজমিসহ চরম হুমকির মধ্যে পড়েছে ফলফলাদির গাছ। এছাড়াও ক্ষতির বাহিরে নেই জনস্বাস্থ্য। রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ ইটভাটা। কৃষিজমি নিধন করে স্থাপন করা হচ্ছে এসব বৈধ- অবৈধ ইটভাটা। অধিকাংশ ইটভাটায় নেই পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র। কাগজপত্রের বৈধতা ছাড়াই চলছে ইটভাটার রাজত্ব। ফলে ইটভাটার নির্গত ধোয়ায় পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ ও ফসলের মাঠ।
পরিবেশ অধিদফতরের তথ্য সূত্রে জানা গেছে, রংপুরের বদরগঞ্জে ইটভাটা রয়েছে ৪৯ টি এবং ছাড়পত্র দেয়া আছে মাত্র ১৩ টি, রংপুর সদরে ২৭ টি ইটভাটার মধ্যে ছাড়পত্র পেয়েছে ৯ টি, এবং গঙ্গাচড়ায় ৩ টি অবৈধ ইটের ভাটা, তারাগঞ্জে ১৮টির মধ্যে ছাড়পত্র পেয়েছে ৫ টি। কাউনিয়া ৯ টির মধ্যে ছাড়পত্র দেয়া আছে মাত্র ১ টির।
তবে ৮ উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইটভাটা রয়েছে পীরগঞ্জে, সেখানকার স্থানীয়দের অভিযোগ এ উপজেলায় ৫৫টি অবৈধ ইটভাটার একটিও নেয়নি পরিবেশ ছাড়পত্র। একই অবস্থা পীরগাছা উপজেলায় এখানে ২৩ টি ভাটায় অবৈধভাবে চলছে।
পরিবেশের বিধিমালা অনুযায়ী এসব ইটভাটা বন্ধে সরকার একাধিকবার প্রজ্ঞাপন জারি করে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ প্রদান করলেও নেয়া হয়না যথাযথ আইনি ব্যবস্থা। ক্ষমতার জোরে কাগজপত্র ছাড়াই রমরমা ব্যবসায় ইটভাটার রাজ্যে রাজত্ব করছে মালিকরা।
এসব অবৈধ ইটভাটা থেকে পরিবেশ অধিদফতর, জেলা প্রশাসক, কৃষি কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তারা মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। ইটভাটার মালিকদের সাথে তাদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সখ্যতার ফলে এ জেলায় ২১৬ টি ইটভাটার মধ্যে ১৮১টি ইটের ভাটা অবৈধ থাকা সত্ত্বেও নেয়া হয়না যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা।
পরিবেশ অধিদফতর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ, অনেক অবৈধ ইটের ভাটায় অভিযান চালিয়ে অর্থ জরিমানা করলেও ওই সকল ইটভাটা পুনরায় তাদের ইশারায় চলছে পূর্বের গতিতে। এতে সাধারণ কৃষকসহ স্থানীয়দের ভোগান্তি থেকেই যাচ্ছে।
ফসলি জমি নিধন করে ইটভাটা স্থাপন করায় অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি কৃষিক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কৃষক। ক্ষোভ প্রকাশ করে এমনটি বলছেন সাধারণ কৃষকরা।
জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশকে চরম হুমকি থেকে রক্ষা করতে ইটভাটা বন্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেয়া একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করেন সচেতন মহল। তারা বলেন, অবৈধ ইটভাটার মাত্রাতিরিক্ত কার্বন সিসার কারণে ভালো ফসল উৎপাদন হচ্ছে না, এছাড়াও জমির উপরিভাগ থেকে মাটি সংগ্রহ করায় দিন দিন কমছে কৃষিজমি, এতে কৃষকরা অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থসহ ওই এলাকায় বসবাসরত মানুষ পড়ছে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ কৃষিখাত বিপন্ন থেকে রক্ষায় জোরালো পদক্ষেপ নেয়ার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরি বলে মনে করছেন তারা।
এ বিষয় রংপুর পরিবেশ অধিদফতরের উপ পরিচালক কমল কুমার বর্মন বার্তা২৪. কমকে বলেন,চলতি বছরের ১ লা জানুয়ারি ২০২৫ ইং তারিখে পরিবেশ অধিদফতর ও জেলা প্রশাসক কর্তৃক মিঠাপুকুর উপজেলার রামপুর ও দুগলাচরী নামক এলাকায় অবস্থিত রবিউল ইসলামের মেসার্স এস আর বি ব্রিকস ও সাজেদুল ইসলাম এর মালিকানাধীন এফ পি বি নামক অবৈধ ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে দুই ভাটায় ১ লাখ টাকা জরিমানা করেছি। এছাড়াও ২০২৪ সালের ৩১শে ডিসেম্বর গংগাচড়া উপজেলার উত্তর পানাপুকুর নামক এলাকায় অবস্থিত রেজাউল ইসলাম এর মালিকানাধীন মেসার্স এ বি সি ব্রিকস নামক অবৈধ ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। বিভিন্ন ইটভাটা থেকে ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি অকপটে এড়িয়ে যান। এছাড়াও রংপুরে ইটভাটার রাজধানী বদরগঞ্জ উপজেলার নাম শীর্ষে থাকলেও এবার তা গড়িয়েছে পীরগঞ্জে। এ উপজেলায় ৫৫ টি ইটভাটা রয়েছে, যার একটিরও পরিবেশ অধিদফতর ছাড়পত্র দেয়নি। সেইসব অবৈধ ইটভাটা কিভাবে চলছে জানতে চাইলে সে বিষয়ে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি তার কাছে।
অবৈধ ইটভাটার প্রসঙ্গে রংপুর জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল বলেন, নতুন বাংলাদেশে কোনো অবৈধ প্রতিষ্ঠান থাকবে না। পর্যায়ক্রমে সবগুলো ইটভাটা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।