টিউমার অস্ত্রোপচারে শিশুর কিডনি কেটে ফেললেন চিকিৎসক!
টিউমারের অস্ত্রোপচারের সময় রাজশাহীর একজন চিকিৎসক এক বছর বয়সী এক শিশুর কিডনি কেটে ফেলেছেন। এই ঘটনায় রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) রাতে শিশুটির বাবা উজ্জ্বল (৩০) রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
উজ্জ্বলের বাড়ি নওগাঁর আত্রাই উপজেলার বড়শিমলা গ্রামে। তার বাবার নাম নরেস। আর অভিযুক্ত চিকিৎসকের নাম সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম। তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজের পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। গত ১৩ এপ্রিল রাজশাহী নগরীর লক্ষ্মীপুরে অবস্থিত বেসরকারি রয়্যাল হাসপাতালে উজ্জ্বলের মেয়ে অনুর পেটে অস্ত্রোপচার করেন ডা. সিরাজুল।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অস্ত্রোপচারের সময় কিডনি ফেলে দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন ডা. সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, টিউমার ছিল কিডনিতে। সেটা ক্যান্সার। সে কারণেই ফেলে দেয়া হয়েছে। আর অস্ত্রোপচারের সময় শিশুটির অভিভাবক যারা ছিলেন তাদের জানিয়ে অনুমতি নেয়া হয়েছে। তবে ওই সময় শিশুর বাবা উজ্জ্বল হাসপাতালে ছিলেন না।
তবে শিশুর বাবা উজ্জ্বলের অভিযোগ, তার মেয়ের কিডনিতে টিউমার বা ক্যান্সারে আক্রান্ত এমন কোনো বিষয় তাদের জানানো হয়নি। তাদের না জানিয়েই শিশু অনুর কিডনি কেটে ফেলে দেয়া হয়েছে। এ কারণে তিনি আইনের আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি এর সঠিক বিচার দাবি করেছেন।
থানায় দেয়া লিখিত অভিযোগে উজ্জ্বল উল্লেখ করেছেন, জন্মের পর থেকেই অনু পেটের সমস্যায় ভুগছিল। তার পেট ছিল অস্বাভাবিক বড়। গত ১২ এপ্রিল উজ্জ্বল তার মেয়েকে রয়্যাল হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরদিন বেলা ৩টার দিকে তার মেয়ের পেটে অস্ত্রোপচার করেন ডা. সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম। এরপর ১৭ এপ্রিল হাসপাতাল থেকে বাড়ি যাওয়ার পর অনুর শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। ১৫ দিন পর তার বাবা উজ্জ্বল আবার ডা. সৈয়দ সিরাজুল ইসলামের কাছে যান। তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেন, তার মেয়ের ক্যান্সার হয়েছে।
অভিযোগে আরো বলা হয়, গত এপ্রিলের শেষ দিকে উজ্জ্বল তার মেয়েকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করেন। ছোট্ট শিশুটি এখনও এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এরই মধ্যে রামেক হাসপাতাল থেকে অনুর পেট আল্ট্রাসনোগ্রাম করে রিপোর্ট আনতে বলা হয়। উজ্জ্বল গত শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) লক্ষ্মীপুর এলাকার দ্য এপোলো ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টারে আল্ট্রাসনোগ্রাম করান। এপোলো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট দেখে বলা হয়, তার মেয়ের একটি কিডনিই নেই। একটি কিডনি কেটে ফেলা হয়েছে। রামেকের চিকিৎসকরা জানান, পেটের অস্ত্রোপচারের আগে যে সমস্ত ডায়াগনস্টিক রিপোর্ট আছে, সেসবে অনুর দুটি কিডনিই আছে। কিন্তু অস্ত্রোপচারের পর যে রিপোর্ট হচ্ছে তাতে তার একটি কিডনি দেখা যাচ্ছে না।
উজ্জ্বল বলেন, টিউমারের অপারেশনের সময় ডা. সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম আমার মেয়ের একটি কিডনি কেটে ফেলেছেন। এ কারণে আমার মেয়ের শারীরিক অবস্থার চরম অবনতি ঘটেছে। আমি একজন সামান্য চা দোকানি। মেয়ের চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে আমি সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি। আমি এ ঘটনার সঠিক তদন্ত চাই। অভিযুক্ত চিকিৎসকের শাস্তি চাই।
রাজশাহীর রাজপাড়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মেহেদী হাসান বলেন, এ ধরনের একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। থানার ওসি স্যার সেটি প্রাথমিক তদন্ত করতে আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। অভিযোগকারীকে রোগীর সমস্ত রিপোর্ট আনতে বলা হয়েছে। তদন্ত করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।