কেন ঘটলো সিলেটের গণধর্ষণ?



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ড. মহীবুল আজিজ, ড. মাহফুজ পারভেজ এবং ড. হেলাল মহিউদ্দিন

ড. মহীবুল আজিজ, ড. মাহফুজ পারভেজ এবং ড. হেলাল মহিউদ্দিন

  • Font increase
  • Font Decrease

সিলেটের এমসি কলেজের পরিত্যাক্ত ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে গৃহবধূকে পালাক্রমে গণধর্ষণের ঘটনায় দেশব্যাপী চরম চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। উত্তাল হয়ে উঠেছে সিলেট। প্রতিবাদে সরব দেশবাসী। মিডিয়া মুখর অপরাধের চুলচেরা বিশ্লেষণে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে হাজার হাজার মন্তব্য।

বার্তা২৪.কম এই স্পর্শকাতর অপরাধের ইস্যুতে কথা বলেছে তিনজন শিক্ষাবিদের সঙ্গে, যারা সমাজ, রাজনীতি, দর্শনের বিশেষজ্ঞ।সিলেটের গণধর্ষণের অন্তর্নিহিত বিশ্লেষণ প্রসঙ্গে  বিশেষজ্ঞদের কাছে জানতে চাওয়া হয় ‘কেন ঘটলো সিলেটের গণধর্ষণ?’ এই সমস্যার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে অনলাইন সাক্ষাৎকারে প্রাপ্ত তাদের মতামত উপস্থাপিত হলো।

‘অপরাধীদের সঙ্গে আদর্শ, দর্শন, মূল্যবোধ, চেতনা ও কমিটমেন্টের কোনো সম্পর্ক নেই’

ড. মহীবুল আজিজ

ডিন

কলা ও মানবিক অনুষদ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

সিলেটে গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনা চরম নিন্দনীয় কিন্তু বিচ্ছিন্ন নয়। কারণ, দেশের নানা স্থানে মাঝেমধ্যেই দুর্বৃত্তরা এহেন অপকর্ম করছে। লক্ষণীয় বিষয় হলো এই যে, অপরাধীদের অধিকাংশই তরুণ ও যুবক বয়সী। কেননা, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে এখন ২৫-৪০ বয়সের মানুষ সর্বাধিক। এই তরুণ-যুবকগণ, যত না পড়াশোনা ও দক্ষতা অর্জনে ইচ্ছুক, তারচেয়ে বেশি বৈশ্বিক ঘটনাপ্রবাহ ও কনজিউমারিজম-ভিত্তিক  সংস্কৃতি দেখে দেখে ভোগপ্রবণ বিকৃত মানসিকতাসম্পন্ন। তাদের যোগ্যতা থাক বা না থাক, তাদের মধ্যে প্রচণ্ডভাবে উচ্চাকাঙ্খা তৈরি হয়েছে। ফলে তারা রাজনীতির ছত্রছায়া গ্রহণ বা অপরাধ করে নিজেদের সুযোগ-সুবিধা হাসিলের জন্য। এই অপরাধীদের সঙ্গে রাজনীতি, আদর্শ, দর্শন, মূল্যবোধ, চেতনা ও কমিটমেন্টের কোনো সম্পর্ক নেই। এরাই সময়ে সময়ে ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে নিজের হীন স্বার্থে ও ব্যক্তিগত সুবিধার কারণে দল বদলায়।  

অন্যদিকে, বিভিন্ন দলের অসৎ ও কুচক্রী রাজনীতিবিদগণ সংখ্যায় নগন্য হলেও ক্ষমতাবান হয়ে উঠছেন। তারা নিজেদের ব্যক্তিগত বা দলগত স্বার্থে এই তরুণ-যুবকদের কাজে লাগান। এরাই তাদের পৃষ্ঠপোষক হয়ে তরুণ-যুবকদের বিপথগামী করেন। তরুণ-যুবকরাও ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে মাদক, ধর্ষণ বা অর্থ উপার্জনে লিপ্ত হয়। ফলে ক্ষমতা ও রাজনীতির আড়ালে একটি অপরাধচক্র প্রতিষ্ঠা পায়। তারা নৃশংস অপকর্ম করতেও পিছপা হয় না।

এজন্য তরুণ-যুবকরা যেমন দায়ী তাদের পরিবার-সমাজও তেমনি দায়ী। সন্তানদের এখন পরিবারের পক্ষ থেকে সময় দেওয়া বা নিয়ন্ত্রণ করা হয় না। কোচিং বা স্কুল-কলেজের নামে তারা কোথায় যায়, কি করে, মা-বাবা সে খবর রাখে না। সমাজও তার সদস্যদের সম্পর্কে অবহিত নয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়ন্ত্রণ হ্রাস পেয়েছে। এমতাবস্থায় তরুণ-যুবকরা নিজের উচ্চাশা পূরণের জন্য নির্বিঘ্নে রাজনীতির ছদ্মাবরণে অপরাধচক্রের সঙ্গে জড়িয়ে যায়। কালক্রমে সে বা তারা ভয়ঙ্কর অপরাধীতে রূপান্তরিত হয়, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে সিলেটের গণধর্ষণ কিংবা এরকমের অপরাধের ঘটনায়। 

‘গণধর্ষণকাণ্ডে রাজনীতিক ক্ষমতার অপব্যবহার ও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাও বিশেষভাবে দায়ী’

ড. মাহফুজ পারভেজ

প্রফেসর,

রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

অপরাধ বিজ্ঞানীরা ধর্ষণ নামক অপরাধ কর্মের সঙ্গে পাশবিকতা ও কামপ্রবণতার সম্পর্ক পেয়েছেন, যার সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের ক্ষমতা, যেমন আর্থিক, সামাজিক, শারীরিক এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা জড়িত। বিশেষ করে, গণধর্ষণকাণ্ডে রাজনীতিক ক্ষমতার অপব্যবহার ও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাও বিশেষভাবে দায়ী। সিলেটে গৃহবধূকে গণধর্ষণের অপরাধের নেপথ্যে কাজ করেছে অনেকগুলো কারণ।

সিলেট একটি ঐতিহ্যবাহী জনপদ এবং এমসি কলেজ একটি স্বনামধন্য প্রাচীন প্রতিষ্ঠান। সেখানে একটি পরিত্যক্ত বা অব্যবহৃত আবাসিক হল দখল করে একটি নির্দিষ্ট কক্ষকে অপরাধের কেন্দ্রে রূপান্তরিত করা কেমন করে সম্ভব হলো? জায়গাটি তো আকাশ থেকে পতিত হয় নি। কলেজ কর্তৃপক্ষ ছিল, আশেপাশে সমাজের মানুষজন ছিলেন এবং পুরো শহরের মতো ঐ জায়গাটিও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরের বাইরে থাকার কথা নয়। সবাই যে সেখানকার অপরাধচক্র সম্পর্কে উদাসীন ছিলেন, সে কথাও বলতে হবে। যদি সমাজ, প্রতিষ্ঠান ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আগেভাগে সতর্ক হতেন ও প্রতিরোধ করতেন, তাহলে এমন অপরাধচক্রই গড়ে উঠতে পারতো না এবং এহেন নৃশংস গণধর্ষণের ঘটনা ঘটাও সম্ভব ছিলো না।

ফলে অপরাধীদের ধরা ও শায়েস্তা করার পাশাপাশি পরিবার, সমাজ ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অপরাধ হওয়ার মতো পরিবেশ-পরিস্থিতি ঠেকানোর উদ্যোগ গ্রহণ করাও অতীব জরুরি। সেটা শুধু সিলেটের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়, দেশের সব জায়গার জন্যই দরকার। অপরাধ হওয়ার পর উত্তেজনা ও স্পর্শকাতরতা সৃষ্টির প্রবণতায় শরিক না হয়ে রাজনীতিক ক্ষমতার অপব্যবহার ও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে বর্জন করতে হবে, যে কর্তৃপক্ষের মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্র, সমাজ, প্রতিষ্ঠান, পরিবার থেকে সকলেই।   

‘ধর্ষণের প্ররোচক বললে ভুল বলা হয় না’

ড. হেলাল মহিউদ্দিন

প্রফেসর,

সেন্টার ফর পীস স্টাডিজ ও রাজনীতিবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়

সরকারে থাকা দলের ছাত্র সংগঠনের কর্মীদের একাংশ ছাত্র না হয়ে গুণ্ডা হয়, ধর্ষক হয়, ডাকাত হয়। কেন হয়? পেশির কারণে। পেশি বা ইংরেজি ‘মাসল’ মানে শুধুই কি গায়ের জোর? না, মোটেও তা নয়। এই ‘মাসল’-এর অর্থ ক্ষমতার জোর। দল ক্ষমতায়, ফলে ‘যা ইচ্ছে তাই করে পার পেয়ে যাওয়া যাবে’ বিশ্বাসের জোর। সিনিয়র নেতারা যাঁরা ছাত্রদের স্বীয় স্বার্থসিদ্ধিতে ব্যবহার করেন, তাঁদের আস্কারা ও মদদের জোর। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিরব থাকার জোর।

বেপরোয়াপনা ও ‘মাসল পাওয়ার’-এর আরো নেপথ্য কারণ আছে। তালিকা লম্বা করে লাভ নেই। বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতায় থাকা দলগুলোর ছাত্র সংগঠনের ধর্ষণকাণ্ড লিখতে গেলে কয়েক খণ্ড গ্রন্থ রচিত হয়ে যাবে।ধর্ষণকাণ্ডের অধিকাংশই খবরে আসে না। ধর্ষিতা ভয়েই ঘটনা প্রকাশ করে না। ছিঁটেফোটা যে দুয়েকটি খবর হয়, সেগুলোই সবার চোখে পড়ে। যেমন বর্তমানে সিলেট বা আগে জাহাঙ্গীরনগরে (১৯৯৩, ১৯৯৫, ১৯৯৮), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (২০০০) অথবা মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের ঘটনা (২০১৭), যার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছিল তৎকালীন রাজনৈতিক ক্ষমতা ও দলের।

সিলেটের এমসি কলেজে গণধর্ষণের ঘটনায় এক-দুইজন নয়, নয়জন জড়িত। কতোটা সঙ্ঘবদ্ধ অপরাধচক্র হলে এমনটি হওয়া সম্ভব? পত্রিকায় খবর এসেছে স্থানীয় নেতারা ধর্ষকদের পক্ষ নিয়ে আপোস রফা করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কেন? সরাসরি পুলিশের হাতে ধর্ষকদের তুলে দেওয়াই কি তাদের নৈতিক দায়িত্ব ছিল না? অর্থাৎ ধর্ষকদের মুরুব্বিদের পরোক্ষ ধর্ষক বা ধর্ষণের প্ররোচক বললে ভুল বলা হয় না।

   

‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের হাতিয়ার দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি’



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে দক্ষতা উন্নয়ন ও সবাের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে হাতিয়ার বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার এ লক্ষ্যে বিস্তৃত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার উদ্যোগে আয়োজিত ‘গ্লোবাল স্কিলস ফোরাম’ এর আলোচনায় শিক্ষামন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের সব উন্নয়ন নীতির মূলে রয়েছে সবার জন্য ন্যায়সঙ্গত কাজের সুযোগ সৃষ্টির প্রয়াস। সরকার সাধারণ শিক্ষার গুণগত উৎকর্ষের পাশাপাশি কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এ লক্ষ্যে সাধারণ শিক্ষার পাঠ্যক্রমে জীবন ও জীবিকা সংক্রান্ত পাঠ এবং প্রয়োজনীয় জীবন অভিজ্ঞতার পাঠ সন্নিবেশিত হয়েছে। তাছাড়া কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও মান উন্নয়নে সরকার বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে।

শিক্ষামন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের ধারাবাহিক বিনিয়োগের ফলে স্বাক্ষরতার হার ৭৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে বলে জানান। সাধারণ শিক্ষার ন্যায় কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে বলে তিনি জানান। বর্তমানে স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মেয়েদের হার ছেলেদের অংশগ্রহণের হারকে ছাড়িয়ে গেছে বলে মন্ত্রী জানান।

আলোচনায় অংশ নিয়ে আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থার মহাপরিচালক গিলবার্ট হোংবো সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপসমূহের ফলে দক্ষতা উন্নয়নে গুণগত অগ্রগতি সাধিত হয়েছে বলে জানান। মহাপরিচালক হোংবো নারী শিক্ষার প্রসার ও মান বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ বিশ্ববাসীর কাছে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করেন।

এক প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন সরকার বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ ও দেশজ বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে একদিকে যেমন কর্মসংস্থানমুখী বিভিন্ন অর্থনৈতিক খাতের উন্নয়নে কাজ করছে তেমনি মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য দক্ষতা উন্নয়ন ও নতুন নতুন দক্ষতা তৈরিতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এ লক্ষ্যে সরকার শিক্ষা ব্যবস্থাকে অর্থনৈতিক সেক্টরগুলোর চাহিদা অনুযায়ী ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে কাজ করছে।

গ্লোবাল স্কিলস ফোরামের অংশ হিসেবে আয়োজিত এ প্যানেল আলোচনায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কানাডা সরকারের অর্থায়নে বাংলাদেশের দক্ষতা উন্নয়ন ব্যবস্থার পরিবর্তনে বাস্তবায়িত প্রকল্পের সাফল্য তুলে ধরা হয়। আলোচনায় বাংলাদেশ এমপ্লয়ারস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ, বাংলাদেশ ফ্রি ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের সাকি রিজওয়ানা, বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি ছাড়াও জেনেভায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কানাডার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। বক্তারা এ প্রকল্পের সাফল্যের ক্ষেত্রে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতার জন্য সরকারকে সাধুবাদ জানান এবং এ প্রকল্প অন্যান্য দেশের দক্ষতা উন্নয়ন প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত হতে পারে বলে মন্তব্য করেন।

;

মেয়েকে ধর্ষণের দায়ে পিতার মৃত্যুদণ্ড



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
মেয়েকে ধর্ষণের দায়ে পিতার মৃত্যুদণ্ড

মেয়েকে ধর্ষণের দায়ে পিতার মৃত্যুদণ্ড

  • Font increase
  • Font Decrease

১৪ বছরের কিশোরী মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় পিতাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনাল।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-৪ এর বিচারক শাহরিয়ার কবির এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

রায় ঘোষণার আগে আসামিকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। রায় ঘোষণার পর আসামিকে ফের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ভুক্তভোগী কিশোরী বাবার সঙ্গে রাজধানীর কেরানীগঞ্জ এলাকায় বসবাস করত। কিশোরীর মা বিদেশে থাকতেন।

২০২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বাসায় ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে তার বাবা। এই ঘটনায় ওই কিশোরী বাদী হয়ে রাজধানীর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় বাবার বিরুদ্ধে মামলা করেন।

পরবর্তীতে আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের পর আসামি মেয়েকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন।

রায় ঘোষণার আগে মামলায় ছয় জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করে আদালত।

;

সাতক্ষীরায় পিলারে মোটরসাইকেলের ধাক্কা, চালক নিহত



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

সাতক্ষীরায় বাইপাস সড়কের ধারে পিলারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে রাজমোহন দাস (৩৫) এক মোটরসাইকেল চালক নিহত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সকাল দশটার দিকে সাতক্ষীরা বাইপাস সড়কে এই ঘটনা ঘটে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) নজরুল ইসলাম। 

নিহত রাজমোহন সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানার রাজেন্দ্রপুর গ্রামের প্রভাত কুমার দাসের ছেলে।

পুলিশ জানায়, রাজমোহন দাস মোটরসাইকেলে সাতক্ষীরা থেকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দিকে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে বেলা দশটার দিকে মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সাতক্ষীরা বাইপাস সড়কের ধারে থাকা একটি পিলারের সাথে সজোরে ধাক্কা লাগে। এতে মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে রাজমোহন দাস ঘটনাস্থলে নিহত হন।

 

;

একটা রিকশার আক্ষেপে ২৫ বছর পার



ছাইদুর রহমান নাঈম, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪ কম, কটিয়াদী ( কিশোরগঞ্জ)
একটা রিকশার আক্ষেপে ২৫ বছর পার

একটা রিকশার আক্ষেপে ২৫ বছর পার

  • Font increase
  • Font Decrease

তীব্র দাবদাহ ও কাঠফাটা রোদে রাস্তার মোড়ে মাথায় হাত দিয়ে বসা এক রিকশাচালক। টপটপ করে ঘাম ঝরছে। বারবার মাথার ঘাম গামছা দিয়ে মোছার চেষ্টা করছেন। গরমের কারণে রাস্তায় তেমন লোকজন নেই। রিকশাচালক গোলাপ মিয়ার মাথায় চিন্তার ভাঁজ। একদিকে রিকশার ভাড়ার চাপ, আরেকদিকে সংসার চালানো।

দিনটা পার হলেই রিকশার ভাড়া দিতে হবে, তিনশো টাকা৷ সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে দুপুর একটা পর্যন্ত তার উপার্জন মোট আশি টাকা। রাতে রিকশার মহাজনকে যেভাবেই হোক টাকা দিতেই হবে। উপার্জন হোক বা না হোক এ-টাকা তাকে দিতেই হবে। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কণ্ঠ ভারী হয়ে আসে তার।

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার পৌরবাজারে দেখা মিলেছে এমনই এক রিকশারচালকের৷ তার নাম গোলাপ মিয়া (৪০)। পার্শ্ববর্তী নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউপির পূর্ব বীরগাঁও গ্রামের মাঝিবাড়ির বাসিন্দা তিনি।

এলাকাবাসী ও রিকশাচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্ত্রী দুই মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে ছয় সদস্যের সংসার গোলাপ মিয়ার। মেয়ে এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী। বাকিরাও স্কুলে লেখাপড়া করছে। ছেলেমেয়েরা সবাই মেধাবী। লেখাপড়ায় তারা আগ্রহী। তীব্র অভাব অনটনে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

এলাকাবাসী জানান, গোলাপ খুবই সহজ সরল ও পরিশ্রমী মানুষ। নিয়মিত নামাজ পড়েন। নিজস্ব থাকার নিজস্ব কোন জায়গা নাই। ছেলেমেয়েরা পড়াশোনায় ভালো। অভাবের কারণে খাবার জোটানো কঠিন। লেখাপড়ার খরচ তাদের জন্য যুদ্ধ করার মতো কষ্ট হচ্ছে। তার নিজস্ব একটা গাড়ি হলে পরিবার নিয়ে উপার্জন করে ভালোভাবে চলতে পারতেন বলে ধারণা তাদের।

রিকশাচালক গোলাপ মিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, সংসার নিয়ে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করছি। ভাত জোটানো যেখানে দায় সেখানে লেখাপড়া কীভাবে করাব বলেন? তবুও সন্তানের মুখের দিকে তাকালে মনডা মানে না আর, তাদের আবদার রাখতে পারি না।

তিনি আরও জানান, একটা আনলে আরেকটা বাকি থাকে। আমার নিজস্ব একটা প্যাডেলের রিকশা ছিল। ২৫ বছর আগে চিকিৎসার খরচ আর তীব্র অভাবে বিক্রি করেছিলাম। পরে আর কেনার সাধ্য হয়নি। একটি অটোরিকশা হলে সংসারটা চালাতে পারতাম। বাড়িটাও ঝুপড়ি ঘর, বৃষ্টি আসলেই ভিজতে হয়; এভাবেই চলছি।

;