পাতা পোড়া রোগে দিশেহারা কৃষক
শরতের হিমেল হাওয়ায় দোল খাচ্ছে সদ্য বের হওয়া রোপা আমনের শিষ। সেই সঙ্গে দোল খাচ্ছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন। আর মাসখানিক পেরুলেই কৃষকরা ঘরে তুলবেন রাশি রাশি সোনালি ফসল। ভরে যাবে গোলা, মুখে ফুটবে নবান্নের হাসি। চলতি আমন মৌসুমে এমনটাই আশা ছিল চাষিদের। কিন্তু গেল কয়েক মাস ধরে হাড় ভাঙা খাটুনি শেষে ভেস্তে যেতে বসেছে যশোরের কৃষকদের সোনালি স্বপ্ন। হঠাৎ করেই ধানের পাতা পুড়ে যাওয়ায় হতাশ বহু কৃষক। শেষ সময়ে ধানে এই পোকার আক্রমণে ফলন বির্পয়য়ের শঙ্কায় কৃষক।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, পর্যপ্ত বৃষ্টি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় যশোরের আট উপজেলায় এবার রেকর্ড পরিমাণ জমিতে আমনধান চাষ হয়েছে। যশোরে আট উপজেলায় চলতি মৌসুমে এবার আমন ধানের চাষের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লক্ষ ৩৯ হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে। যা গত বছর লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিলো ১ লক্ষ ৩৪ হাজার ৯৭৫ হেক্টর। পুরো মৌসুম আবহাওয়া ভালো থাকলে ফলনেও রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে আশাবাদী কৃষিবিভাগ। চলতি আমন মৌসুমে যশোরের সদর উপজেলায় ২৫ হাজার ৮৩০ হেক্টর, শার্শা উপজেলায় ২১ হাজার ৪৭০ হেক্টর, ঝিকরগাছা উপজেলায় ১৮ হাজার ১শ হেক্টর, চৌগাছা উপজেলায় ১৭ হাজার ৫০ হেক্টর, অভয়নগর উপজেলায় ৭ হাজার ৬৩০ হেক্টর, বাঘারপাড়া উপজেলায় ১৭ হাজার ১৪০ হেক্টর, মণিরামপুর উপজেলায় ২২ হাজার ৫৩০ হেক্টর, কেশবপুর উপজেলায় ৯ হাজার ২ শ’৭৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে।
আমন মৌসুমে গুটিস্বর্ণা, ব্রি-৫১, ব্রি-৮৭, ব্রি-৯০সহ নানা জাতের আমন চাষ হয়েছে। মাঠের পর মাঠ সবুজ গাছে কলাপাতা রঙের ধানের শিষ দোল খাচ্ছে। এমন সময়ে ধান দেখে কৃষকের মুখে হাসি থাকার কথা। কিন্তু অবস্থা হয়েছে উল্টো। ধানের শিষের পাতা গুলো পচে ও শুকিয়ে যাচ্চে। পাতাগুলো তামাটে রং ধারণ করেছে। কোথাও কোথাও শিষ শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন সময় ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কায় পার করছে যশোরের কয়েক হাজার কৃষক। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বলছেন, গত দুই বছর ধরে আমন মৌসুমে ধানে এই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে তারা চিন্তায় থাকলেও স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা তাদের কোন খোঁজ নেননি।
মণিরামপুর উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের কৃষক সুলতান আহম্মদ বলেন, পাঁচবিঘা জমির ধানগাছ কমবেশি আগা পুড়ে যাচ্ছে। বেশি আক্রান্ত হয়েছে একবিঘা। দুইবার স্প্রে করেও ফল মিলছে না। দিনদিন আক্রান্তের মাত্রা বাড়ছে। একই এলাকার রোহিতা মাঠের
কৃষক আব্দুর রহিম বলেন, আট শতক জমিতে গুটিস্বর্ণা ধান চাষ করেছি। ধানের থোড় আসার মত হয়েছে। ১৫-২০ দিন আগে এক কোনায় কিছু ধানগাছের পাতা পোড়া দেখা দেছে। পরে এক সার দোকানির পরামর্শে তিন প্রকারের কীটনাশক একসাথে মিশিয়ে স্প্রে করিছি। এখন দেখছি পুরোজমি ধরা করেছে। কৃষি অফিসাররা কোনদিন মাঠে উঁকি মেরেও দেখেন না।
এই বিষয়ে মণিরামপুর খেদাপাড়া ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘ধানের আগা পোড়া রোধে নিয়মিত কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। তাদেরকে ব্যাকটোবান, বেকট্রোল ও নেকসুমিন নামক কীটনাশকের যেকোন একটি পরিমাণমত ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘উপজেলার বেশকিছু নিচু ও ছায়াযুক্ত জমির ধানে আগাপোড়া রোগ দেখা দিয়েছে। যেসব জমিতে বেশি ইউরিয়া ব্যবহার করা হয়েছে সেসব জমিতে এই সমস্যা বেশি। জমির পানি সরিয়ে দিয়ে পটাশ ব্যবহার করলে এই সমস্যা দূর হবে। আমাদের উপ-সহকারীরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন। কৃষকরা সেটা না শুনে বাকির আশায় কীটনাশকের দোকানে গিয়ে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করছেন। ফলে তারা প্র্রতিকার পাচ্ছেন না।’