ঠিকাদার ‘আফসার’ সিন্ডিকেটে জিম্মি রেলের কাজ
বাংলাদেশ রেলওয়ের উন্নয়ন কাজ মানেই ঠিকাদার আফসার বিশ্বাস। নিজের ও আত্মীয় পরিজনদের নামে বেনামে ঠিকাদারি লাইসেন্স নিয়ে পুরো রেলের কাজ নিয়ন্ত্রণ করেন এই আফসার বিশ্বাস। তার খুঁটি রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি)। নিজেকে ডিজির লোক পরিচয় দিয়ে সব কাজ বাগিয়ে নেন এই আফসার।
মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আফসার ঠিকাদারের নাম উঠে আসে।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এই আফসার হলেন জিকে শামীম ক্যাটাগরির। তিনি একাই সব নিয়ন্ত্রণ করেন। এভাবে সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হওয়ায় রেলওয়ের কাজের মান ঠিক থাকে না।’
বৈঠক শেষে শফিকুল ইসলাম শিমুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বার্তা২৪.কমকে মোবাইলে বলেন, ‘বৈঠকে আলোচনার বিষয় নিয়ে আমি কথা বলার কেউ না, কথা বলবেন সভাপতি।’ পরে জানতে চাওয়া হয় আফসার ঠিকাদারকে নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা? জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ হয়েছে। তবে বিস্তারিত সভাপতি বলতে পারবেন।
এরপর যোগাযোগ করা হয় রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমার গলার অবস্থা খুব খারাপ, আমি কথা বলতে পারছি না। আমার পিএসকে ফোন করেন, সে সব বলতে পারবেন।’
সভাপতির কথার সূত্র ধরে তার একান্ত সচিব (পিএস) এম মাসুমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি তো সার্বক্ষণিক বৈঠকে থাকি না। একবার যাই, আবার কাজে বের হই, ফলে আমি বিস্তারিত বলতে পারব না।’
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, রেলের কাজ সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি বিষয়টি নিয়ে সভাপতিসহ সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আলোচনায় উঠে আসে, বাংলাদেশ রেলওয়ের মোট ৩৮টি তালিকাভুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থাকলেও মূলত ঠিকাদার মাত্র ৪-৫ জন। তারাই নামে বেনামে ঠিকাদারি লাইসেন্স করে সকল কাজ নিয়ন্ত্রণ করেন। ফলে অন্য যোগ্য ঠিকাদাররা সেখানে কাজ পান না। এটা কেন হচ্ছে সে বিষয়ে রেলওয়ের মহাপরিচালকের কাছে জানতে চান কমিটির সদস্যরা। এক পর্যায়ে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
মূলত রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রণ দফতর (সিওএস), কেন্দ্রীয় লোকোমেটিভ কারখানা, সৈয়দপুর ক্যারেজ কারখানা, চট্টগ্রামের পাহাড়তলী ক্যারেজ কারখানা আফসার সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে।
এছাড়া বৈঠকে বাংলাদেশ রেলওয়ের ক্রয় পদ্ধতি, রেলওয়ের ২টি জোনকে ৪টি জোনে রূপান্তর করার সর্বশেষ অবস্থা, চট্টগ্রামে বাংলাদেশ রেলওয়ের জমিতে পেট্রোল পাম্প স্থাপনের জন্য লিজ প্রণয়ন সম্পর্কে, চট্টগ্রামে বাংলাদেশ রেলওয়ের জমিতে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার জন্য লিজ প্রদানের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা হয়।
বৈঠকে বাংলাদেশ রেলওয়ের জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ, বিভিন্ন পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও রেলওয়ের প্রয়োজন হবে না এমন জায়গা সঠিক উপায়ে ব্যবস্থাপনার বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে ক্রয় নীতিমালা সঠিকভাবে অনুসরণ ও টেন্ডার প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি খতিয়ে দেখার জন্য সাব-কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন, আসাদুজ্জামান নূর, শফিকুল ইসলাম শিমুল, মো. শফিকুল আজম খাঁন, মো. সাইফুজ্জামান, গাজী মোহাম্মদ শাহ নওয়াজ ও বেগম নাদিরা ইয়াসমিন জলি অংশগ্রহণ করেন।
এছাড়াও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক, রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সচিব ও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।