ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে মি. বেকারের ব্যাংক হিসাব তলব
ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে মি. বেকারের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে লেনদেনের হিসাব তলব করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা।
প্রতিষ্ঠানটির টঙ্গী ও গাজীপুরের প্রধান কার্যালয়ে (কারখানা) অভিযান পরিচালনা করে ভ্যাট গোয়েন্দারা। এতে গোয়েন্দা দল ব্যাপক ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পায়। অধিকতর তদন্তের জন্য ‘মি. বেকার’ এর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে লেনদেনের হিসাব তলব করে তারা।
প্রতিষ্ঠানটির রাজধানীতে পেস্ট্রি শপের ২৯টি ও সুইটমিটের ৫টি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। হেড অফিসের ঠিকানায় তাদের কারখানাও অবস্থিত।
বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর থেকে এ সংক্রান্ত টঙ্গীর ঢাকা ব্যাংক, কামারপারা শাখা ও সাউথইস্ট ব্যাংকে নোটিশ ইস্যু করা বেকার কেক অ্যান্ড পেস্ট্রি শপ লি., ১৬০/৪৮৫, মোকদাম আলী সরকার রোড, ধোউড়, তুরাগ, ঢাকা এবং মি. বেকার সুইটস, ২/১ কুনিয়া পাচর, তারগাস, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর সদর, গাজীপুর-১৭০৪ নামীয় প্রতিষ্ঠান দুটোর হেড অফিস কাম কারখানায় অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযান দুটোতে নেতৃত্ব দেন উপ-পরিচালক নাজমুন নাহার কায়সার, জনাব ফেরদৌসি মাহবুব ও জনাব তানভীর আহমেদ।
অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব আসিফ জামান গত ১৮ অক্টোবর তার নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর রোডে অবস্থিত ‘মি বেকার’ এর বিক্রয়কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ভ্যাট চালান না দেওয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেন।
তিনি ওই স্ট্যাটাসে এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের কাছে প্রতিকার চেয়ে উল্লেখ করেন, ভোক্তারা ভ্যাট দিলেও তা সরকার পাচ্ছে না। ওই কেন্দ্রটিতে ভ্যাট কর্তন করে একটা কাঁচা চালান দিয়ে ক্রেতাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
এই অভিযোগ ও আরও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম অভিযোগটির তদন্ত করার জন্য ভ্যাট গোয়েন্দাকে নির্দেশ দেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ভ্যাট গোয়েন্দা দলের আকস্মিক পরিদর্শনকালে প্রতিষ্ঠান দুটোতে ভ্যাট আইনের বাধ্যবাধকতা অনুসারে ক্রয় হিসাব পুস্তক (মূসক-৬.১) ও বিক্রয় হিসাব পুস্তক (মূসক-৬.২) পাওয়া যায়নি। ভ্যাট আইন অনুযায়ী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এই দুটো হিসাব সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
পরিদর্শনকালে ভ্যাট সংক্রান্ত অন্যান্য দলিলাদি দেখাতে বলা হলে, উপস্থিত মালিকপক্ষ তা দেখাতে পারেননি এবং এগুলো সংরক্ষণ না করার বিষয়ে তারা কোনো সদুত্তরও দিতে পারেননি।
ভ্যাট গোয়েন্দা দলের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে নিজস্ব মনগড়া হিসাবের ভিত্তিতে ‘মি. বেকার’ স্থানীয় ভ্যাট সার্কেলে রিটার্ন দাখিল করে আসছে। একই সঙ্গে তারা ভোক্তাদের নিকট থেকে সংগ্রহ করা ভ্যাট সরকারি কোষাগারে যথাযথভাবে জমা দেননি।
পাশাপাশি, ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের আরেকটি দল উত্তরার ৩ নং সেক্টরের ৪ নং রোডে অবস্থিত মি. বেকার কেক অ্যান্ড পেস্ট্রি শপের বিক্রয়কেন্দ্রটি পরিদর্শন করে। কর্মকর্তারা প্রথমে পরিচয় গোপন করে পণ্য ক্রয় করে দেখতে পান যে, এই বিক্রয়কেন্দ্রটি মূসক চালান (মূসক-৬.৩) ব্যতীত পণ্য বিক্রি করছে। এখানে তারা অভিযোগকারী অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিবের অভিযোগের সত্যতা পান।
একইসঙ্গে গোয়েন্দা দল ২১ অক্টোবর বেইলি রোডে অবস্থিত ‘মি. বেকার’ এর দুটো বিক্রয়কেন্দ্র থেকে পণ্য ক্রয় করেও দেখতে পান যে, তারা মূসক চালান ব্যতীত পণ্য সরবরাহ করছে।
এতে প্রমাণিত হয় ভ্যাট আইন অনুসারে রেকর্ডপত্র সংরক্ষণ না করে এবং ভ্যাট আইন লঙ্ঘন করে প্রতিষ্ঠানটি ৩৪টি বিক্রয়কেন্দ্রে ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে।
প্রতিষ্ঠানের কারখানা ও বিক্রয়কেন্দ্রে ভ্যাট চালান ব্যতীত পণ্য সরবরাহ ও বিক্রয় করায় ‘মি. বেকার’-কে ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করে আজ প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব সাময়িকভাবে অপরিচালনযোগ্য করা হয়েছে।
অভিযানে জব্দকৃত দলিলাদি ও ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত দলিলাদির ভিত্তিতে ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ নির্ণয় ও অন্যান্য আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
একইসঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে অভিযুক্ত ‘মি. বেকার’ এর যাবতীয় উৎপাদন, সরবরাহ ও বিক্রয় সরাসরি তত্ত্বাবধান করার জন্য সংশ্লিষ্ট ঢাকা উত্তর কমিশনারেটের নিকট সুপারিশ করা হয়েছে।