কিশোরগঞ্জের যে হাটে বাদ্যযন্ত্র নয়, বিক্রি হন বাদক!

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কিশোরগঞ্জ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বাদ্যযন্ত্র নয়, বিক্রি হয় বাদক। ছবি: বার্তা২৪.কম

বাদ্যযন্ত্র নয়, বিক্রি হয় বাদক। ছবি: বার্তা২৪.কম

শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে জমে উঠেছে ৫০০ বছরের বাদ্যযন্ত্র বিক্রির ঐতিহ্যবাহী হাট। দুর্গাপূজা শুরুর আগের তিন দিন এ হাট বসে। সোমবার বিকেলে শুরু হয়েছে এ হাট।

এ হাটে কোনো বাদ্যযন্ত্র বিক্রি হয় না। বিক্রি হন যন্ত্রীরা। যন্ত্রীসহ পছন্দের বাদ্যটি ভাড়া হয় এ হাটে। পূজা শুরুর আগে দরদাম ঠিক করে বায়নার টাকা দিয়ে বাদ্যযন্ত্রসহ যন্ত্রীদের সঙ্গে করে নিয়ে যান পূজার আয়োজকরা।

বিজ্ঞাপন

বাদ্যযন্ত্রসহ যন্ত্রীরা এসেছেন ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, সিলেট, ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, হবিগঞ্জসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে।

প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো দেশের একমাত্র বাদ্যযন্ত্রের এ হাট সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের দিচ্ছে বাড়তি আনন্দ। দিন দিন দুর্গোৎসবের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে এ হাট।

বিজ্ঞাপন

ঢাক-ঢোল ছাড়া দুর্গোৎসব ভাবাই যায় না। বাদ্যের তালে তালে মণ্ডপে মণ্ডপে নাচ-গান-আরতি আর দেবী বন্দনা দুর্গাপূজার প্রধান অনুষঙ্গ। তাই বাহারি রঙ আর আকারের ঢাক-ঢোল, বাঁশি, খাঁসি, খোলসহ অসংখ্য বাদ্যযন্ত্রের পসরা সাজিয়েছেন দোকানিরা।

তারা জানান, হাটে বিক্রি হচ্ছে ভালো। হাতের নাগালে পছন্দের বাদ্যসহ যন্ত্রী পেয়ে খুশি ক্রেতারাও। একেকজন ঢাকী ১২ থেকে ১৫ হাজার, বাঁশিবাদক ৫ থেকে ৭ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছেন। আর ছোট ব্যান্ডদল ১৫ থেকে ২০ এবং ৭/৮ জনের বড় দল ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছেন।

জনশ্রুতি আছে ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে রাজা নবরঙ্গ রায় চৌধুরী কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার চারিপাড়ায় তার রাজপ্রাসাদে প্রথম দুর্গাপূজার আয়োজন করেন।

যন্ত্রীসহ পছন্দের বাদ্যটি ভাড়া হয় এ হাটে। ছবি: বার্তা২৪.কম

রাজবাড়ির পূজায় ঢাক, ঢোল, বাঁশিসহ অন্যান্য যন্ত্রসহ অংশ নিতে খবর পাঠানো হয় বিক্রমপুর পরগনায় যন্ত্রীদের কাছে। সেসময় বিক্রমপুর থেকে আসা যন্ত্রীরা পূজার দুইদিন আগে কটিয়াদী-মঠখোলা সড়কের পাশে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে যাত্রাঘাট নামক স্থানে এসে জমায়েত হতেন। সেই থেকে প্রতিবছর এখানে বসে বাদ্য ও বাদকের হাট। পরে এ হাট স্থানান্তর করা হয় কটিয়াদীর পুরাতন বাজারের মাছ মহাল এলাকায়।

কটিয়াদী উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দিলীপ কুমার সাহা জানান, ঢাকের হাট ঘিরে কটিয়াদী বাজার এলাকায় শত শত মানুষের সমাগম ঘটে। হাটের ব্যবস্থাপনায় রয়েছে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারের সমন্বয়ে গঠিত ব্যবস্থাপনা কমিটি। ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয় স্থানীয় প্রশাসন।

তিনি জানান, ক্রেতা-বিক্রেতাদের সুবিধার্থে সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিনের দেয়া ১২ লাখ টাকায় বাজারে একটি সেড নির্মাণ করা হয়েছে।

কটিয়াদী হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি বেণীমাধব ঘোষ জানান, এটি দেশের একমাত্র বাদ্যযন্ত্রের হাট। সারা দেশ থেকে যন্ত্রীরা তাদের যন্ত্রসহ এ হাটে আসেন। আর কিশোরগঞ্জসহ আশপাশের জেলার পূজারিরা তাদের মণ্ডপে যন্ত্রসহ যন্ত্রীদের ভাড়া করে নিয়ে যান।