কুমিল্লায় করোনার সনদ পেতে ভিড় করছেন ৬ জেলার বিদেশগামীরা
সরকার বিদেশগামীদের জন্য কোভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ বাধ্যতামূলক করলেও সব জেলায় প্রবাসীদের করোনার নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু করা করেনি। যার কারণে কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে এসে কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলার প্রবাসীদের করোনা পরীক্ষার পর সনদ নিতে হচ্ছে।
তবে কুমিল্লায় আসা এ ছয়টি জেলার বিদেশগামী যাত্রীদের করোনাভাইরাস পরীার জন্য নমুনা প্রদান এবং সনদ সংগ্রহে হয়রানি আর ভোগান্তি এখন চরমে পৌঁছেছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা ও নমুনা সংগ্রহে ধীরগতিসহ নানা জটিলতা পোহাতে হচ্ছে তাদের। বিশেষ করে নারী ও বয়স্কদের বেশি বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।
গত রোববার দুপুরে নগরীর কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, ৬ জেলার অন্তত শতাধিক প্রবাসী করোনার সনদ পেতে ওই হাসপাতালে জড়ো হয়েছেন। তারা নমুনা দেওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি লাইনে দাঁড়িয়ে ধাক্কাধাক্কি করছেন।
একটি মাত্র বুথে তাদের কাছ থেকে নমুনা পরীক্ষার আবেদন ফরম ও পরীক্ষার ফি বাবদ এক হাজার ৫ শ টাকা নিচ্ছেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সিনিয়র মেডিকেল টেকনিশিয়ান জহিরুল ইসলাম। তার বিরুদ্ধে হয়রানির অসংখ্য অভিযোগ বিদেশগামীদের। চরম ধীরগতিতে জহিরুল তাদের কাছ থেকে আবেদন নিচ্ছেন। আবেদন গ্রহণে মানা হচ্ছে না সামাজিক দুরত্বসহ স্বাস্থ্যবিধি। এসব কারণে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বিদেশগামীরা।
কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার গুনাইঘর গ্রামের আবুধাবি প্রবাসী মোশারফ হোসেন বলেন, বিদেশগামীদের ফাইট ধরার ৪৮ ঘণ্টা আগে করোনার সনদ গ্রহণ করতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আজকে কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে নমুনা প্রদান করলে কাল বা পরশু সিভিল সার্জন অফিস থেকে সনদ সংগ্রহ করতে হয়। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে এসব নমুনা পরীা করা হয়। এখানে প্রবাসীদের হয়রানি আর কষ্টের কোন শেষ নেই।
ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার গতিয়া সোনাপুর গ্রামের ওমান প্রবাসী মো.শাহজাহান বলেন, এখানে প্রবাসীদের কর্ম জীবন নিয়ে তামাশা করা হচ্ছে। ৬ জেলার প্রবাসীদের জন্য মাত্র একটি বুথে আবেদন নেওয়া হচ্ছে। আবেদন সংগ্রহকারীরা আসেন বেলা ১১টার দিকে। অথচ সকাল ৮টা থেকে প্রবাসীরা এসে দাঁড়িয়ে থাকে। দুপুরের পর তারা আবেদন গ্রহণ করতে চায় না। এসব কারণে অনেকের বিদেশ যাত্রা বাতিলের ঘটনাও ঘটেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের প্রবাসী বিল্লাল হোসেন বলেন, এভাবে বিদেশগামীদের হয়রানি আর কষ্ট দেওয়ার কোন মানে হয় না। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, হয় এখানে আরও কয়েকটি বুথ বাড়ানো হোক, আর না হয় প্রতিটি জেলায় নমুনা সংগ্রহ করে করোনা সনদ দেওয়া হোক।
তবে প্রবাসীদের এসব অভিযোগের বিষয়ে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সিনিয়র মেডিকেল টেকনিশিয়ান জহিরুল ইসলাম কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
কুমিল্লা সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানায়, কাগজপত্র পরীক্ষা, রেজিস্ট্রেশন ফি জমা নেওয়া ও করোনার নমুনা সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় লোকবল না থাকায় সঠিক সময়ের মধ্যে অনেককে সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। প্রতি ১০০ জনের নমুনা পরীক্ষা করলে অন্তত ১০ জনের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসছে। পজিটিভ আসা ব্যক্তিদের যাত্রা বাতিল হচ্ছে।
কুমিল্লা জেলার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মো. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, বিদেশগামীদের করোনা পরীক্ষার যাবতীয় কার্যক্রমের জন্য আমাদের নির্দিষ্ট কোন লোকবল নেই। আমাদের অফিসের লোকজন নির্দিষ্ট কাজের পাশাপাশি অতিরিক্তভাবে এই দায়িত্ব পালন করছেন। আর এখানে সবাই কুমিল্লার বাসিন্দা না, আরও পাঁচটি জেলা থেকে বিদেশগামীরা আসছেন সনদ নেওয়ার জন্য। লোকবল সংকটের কারণে সময় মতো সনদ দিতেও আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপরও আমার চেষ্টা করছি সকলকে সঠিক সময়ে সনদ দেওয়ার জন্য।
তিনি আরও বলেন, বিদেশগামীরা নমুনা দেওয়ার পর যেকোন স্থান থেকে অনলাইনের মাধ্যমেও সনদ সংগ্রহ করতে পারেন। আর সরকারি নির্দিষ্ট ফি ছাড়া এখানে অতিরিক্ত কোন টাকা নেওয়া হয় না।