যশোরে স্ত্রীর পরকীয়ার জেরে পরিকল্পিতভাবে স্বামীকে খুন
ছোটবোনের স্বামী (ভগ্নিপতি) শাহ আলমের সঙ্গে স্ত্রী শারমিন সুলতানা সুমির পরকীয়ার জেরে পরিকল্পিতভাবে ইসরাফিল হোসেন মান্নাত (৪২) খুন করা হয়েছে।
হত্যকাণ্ডে নিহতের ভগ্নিপতি শাহ আলমসহ ৭ জন অংশ নেন। মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে মাথায় ইটের আঘাত করে তাকে হত্যা করা হয়। হত্যকাণ্ডের দুইদিনের মধ্যেই রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ।
সোমবার দুপুরে নিজ দফতরে সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন। এই ঘটনায় জড়িত চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে হত্যকাণ্ডে ব্যবহৃত পাইপ, ইট, মোবাইল ফোন এবং মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে।
গত ২৩ অক্টোবর দিনগত রাতে খুন হন ইসরাফিল হোসেন মান্নাত। পরদিন সকালে মরদেহ উদ্ধার হয়। নিহত মান্নাত যশোর শহরের বকচর বিহারী কলোনী এলাকার মুক্তিযোদ্ধা বজলুর রহমানের ছেলে। খুনের ঘটনায় নিহতের মা আনোয়ারা বেগম থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
গ্রেফতারকৃত চার আসামিরা হলো- যশোর সদর উপজেলার মাহিদিয়া গ্রামের মো. হাবিবুর রহমানের ছেলে মো. আল-আমিন (১৯), শহরের পুরাতন কসবা কাঁঠালতলা নান্টুর বাগানের আবু তাহেরের ছেলে মো. রিফাত (১৯), সুজলপুরের আব্দুর রশিদ শেখের ছেলে মো. রায়হান শেখ (২২) এবং একই গ্রামের শফিকুল ইসলাম বাবুর ছেলে মো. নয়ন হোসেন (২০)।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন জানান, ইসরাফিল হোসেন মান্নাত ও শারমিন সুলতানা সুমি দম্পতির দুই সন্তান রয়েছে। তাদের এক যুগের দাম্পত্য জীবন। অপরদিকে শাহ আলমের সঙ্গে মান্নাতের ছোট বোনের বিয়ে হয়েছে দশ বছর আগে। তাদেরও তিন সন্তান রয়েছে। শহরের বকচর এলাকায় তাদের বসবাস।
এরমধ্যে শারমিন সুলতানা সুমী ও শাহ আলম পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। তিন মাস আগে সুমি তার স্বামী মান্নাতকে তালাক দেন। এরপর শাহ আলমের সঙ্গে বিয়ে করেন। শাহ আলম ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে ভাড়া বাসায় তোলেন সুমিকে। মান্নাত তার ডিভোর্সি স্ত্রীর সন্ধান করতে থাকে। এক পর্যায়ে জানতে পারে শাহ আলমকে বিয়ে করে কোটচাঁদপুরে সংসার করছে।
শাহ আলম কোটচাঁদপুরের কাউন্সিলেরর মাধ্যমে সেখানে শালিস বসিয়ে শাহ আলমকে তালাক দিতে বাধ্য করে। শালিসের মাধ্যমে দেনমোহর ও খোরপোষ বাবদ শাহ আলমের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা আদায় করা হয়। শালিসের পর সুমি অন্য জায়গায় থাকতো। মান্নাত তার স্ত্রীকে খুঁজতে থাকে। এরমধ্যে মান্নাতকে হত্যার পরিকল্পনা করে শাহ আলম। সে তার গাড়ি ড্রাইভার আল আমিনকে দায়িত্ব দেয় মান্নাতের গতিবিধি লক্ষ্য রাখার জন্য।
শুক্রবার (২৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় শাহ আলমের ড্রাইভার মান্নাতকে ফোন করে ডেকে নেয়া হয় শহরের কারবালা এলাকার সিএন্ডবি রোডে। মান্নাত মাথায় গামছা বেঁধে বাইসাইকেলে রওয়ানা হন। সেখানে পৌঁছলে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। হত্যাকাণ্ডে অন্তত সাতজনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এই ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী শাহ আলম ও নিহতের স্ত্রী সুমিসহ অন্যদের গ্রেফতারে পুলিশ তৎপর রয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম রব্বানী শেখ, জামাল আল নাসের, অপু সরোয়ার, সহকারী পুলিশ সুপার সোয়েব আহমেদ খান ও জুয়েল ইমরান, কোতয়ালী থানার ওসি মনিরুজ্জামান প্রমুখ।