পদ হারাতে যাচ্ছেন এমপি পুত্র কাউন্সিলর ইরফান!
ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ছেলে ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ ইরফান সেলিম তার পদ থেকে বরখাস্ত হতে পারেন।
স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন ২০০৯ (সংশোধিত ২০১১) অনুযায়ী এ ধরনের অপরাধের জন্য মেয়র বা কাউন্সিলররা বরখাস্ত হয়ে থাকেন। এ আইনের ১২ ধারায় মেয়র ও কাউন্সিলরদের বরখাস্ত করার বিষয়ে বলা হয়েছে। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী এ ধরনের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে স্থানীয় সরকার বিভাগকে অবহিত করতে হয়।
উপ-ধারা ১২ (১) এ বলা হয়েছে, যেকোনো সিটি করপোরেশনের মেয়র বা কাউন্সিলরের অপসারণের জন্য ধারা ১৩ এর অধীন কার্যক্রম আরম্ভ হয়েছে অথবা তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার অভিযোগ আদালত কর্তৃক গৃহীত হয়েছে। সে ক্ষেত্রে সরকার লিখিত আদেশের মাধ্যমে মেয়র বা কোন কাউন্সিলরকে বরখাস্ত করতে পারবে।
এ আইনের ১৩ ধারায় মেয়র এবং কাউন্সিলরগণের অপসারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে। ১৩ এর উপধারা ১ এর খ-তে বলা হয়েছে, নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে আদালত কর্তৃক দণ্ডিত হলে তিনি অপসারিত হবেন। ১৩ এর ঘ-তে বলা হয়েছে, অসদাচরণ বা ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন তাহলেও তিনি অপসারিত হবেন।
সোমবার (২৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় মাদক ও অবৈধ ওয়াকিটকি ব্যবহারের দায়ে ইরফান সেলিমের এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় ইরফানের দেহরক্ষী মো. জাহিদুল ইসলামেরও এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দিনভর অভিযানের রাতে কাউন্সিলর ইরফান সেলিমের টর্চার সেলে হাড় পাওয়া গেছে। তবে এটি মানুষের হাড় কিনা তা প্রাথমিকভাবে জানা যায়নি। অভিযানে অংশ নেয়া র্যাব কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান।
র্যাব দাবি করেছে, ১৬ তলা ভবনের ছাদের ওপরের এই কক্ষটি হাজী সেলিমের ছেলে মোহাম্মদ ইরফান সেলিম টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করতো। এছাড়া চর্টার সেল থেকে দূরবীন, হকিস্টিক, লাঠি, রশি, ইয়াবা খাওয়ার নানা সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে র্যাব।
রাতে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমাদের কাছে তথ্য ছিল এই কক্ষটি টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এরপর আমরা অভিযান চালিয়েছি।
তিনি বলেন, টর্চার সেল থেকে হ্যান্ডকাফ, দড়ি, চাকুসহ আরো বিভিন্ন সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে। তবে মানুষের হাড়ের বিষয়ে নিশ্চিত করে কোনো মন্তব্য করেননি কেউ। ফরেনসিক করার পর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে বলে জানিয়েছে র্যাবের এই কর্মকর্তা।
অভিযানে চকবাজারের মদিনা আশিক টাওয়ারের ১৬ তলায় ইরফান সেলিমের আরো একটি টর্চার সেলের সন্ধান পেয়েছে র্যাব। ওই সেল থেকে ওয়্যারলেসের কন্ট্রোল ট্রান্সজেস্টার, বাইনোকুলার, হিট দেওয়ার ট্রান্সমিটার, ছুড়ি, একটি হকিস্টিক, বাঁধার রশি, চোখ বাঁধার গামছা, ইয়াবা খাওয়ার ফয়েল, ওয়াকিটকি, স্ক্রু ড্রাইভারের একটি বক্স, স্যাভলন ও ভিডিও রেকর্ডার উদ্ধার করা হয়।
তার রুমের তোশকের নিচে ম্যাগজিন ভর্তি একটি বিদেশি পিস্তল পাওয়া গেছে। এছাড়া ৫ম তলায় পূর্ব পাশের কর্নারে ৫টি ওয়ারল্যাস ভিপিএস সিস্টেম (ভার্চুয়াল প্রাইভেট সার্ভার) ও ৪০টি ওয়াকিটকি সেট, একটি হ্যান্ডকাপ, একটি বন্দুক, বিদেশি মদের বোতল ও বিয়ার পাওয়া গেছে। এসব সরঞ্জাম ও আগ্নেয়াস্ত্র ফরেনসিক রিপোর্টের জন্য এখনো যে অবস্থায় ছিল, তেমনটি রেখে দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরওয়ার আলম।
উল্লেখ্য, রোববার (২৫ অক্টোবর) রাতে ঢাকা-৭ আসনের এমপি হাজী মোহাম্মদ সেলিমের সংসদ সদস্য লেখা সরকারি গাড়ি থেকে নেমে নৌ বাহিনীর কর্মকর্তা ওয়াসিফ আহমেদ খানকে মারধর করে ইরফান। রাতে এ ঘটনায় জিডি হলেও ২৬ অক্টোবর ভোরে হাজী সেলিমের ছেলেসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ওয়াসিফ। মারধর ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগে মামলাটি করা হয়েছে। আর আসামিরা হলেন- ইরফান সেলিম, এ বি সিদ্দিক দীপু, জাহিদ, মীজানুর রহমান ও অজ্ঞাতনামা আরও দুই/তিনজন।
মামলায় বলা হয়, ইরফানের গাড়ি ওয়াসিফকে ধাক্কা মারার পর তিনি সড়কের পাশে মোটরসাইকেলটি থামান এবং গাড়ির সামনে দাঁড়ান এবং নিজের পরিচয় দেন। এরপরই গাড়ি থেকে কয়েকজন বের হয়ে ওয়াসিফকে কিলঘুষি মারেন এবং তার স্ত্রীকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। তারা মারধর করে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে যান। পরে তার স্ত্রী, স্থানীয় জনতা এবং পাশে ডিউটিরত ধানমন্ডির ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা তাকে উদ্ধার করে আনোয়ার খান মডেল হাসপাতালে নিয়ে যান।