‘একান বাঁধ করি দিলে হামরা বাঁচমো বাহে’



ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর
এবারের বন্যায় ছয়মুদ্দিনের আবাদি জমি তিস্তা গ্রাস করেছে

এবারের বন্যায় ছয়মুদ্দিনের আবাদি জমি তিস্তা গ্রাস করেছে

  • Font increase
  • Font Decrease

বয়সের ভারে নুয়ে পড়া ছয়মুদ্দিনের চোখে এখনো ভাসে তার আবাদি জমির ক্ষেত। কোথাও পানি, কোথাও চর জেগে উঠলেও ভুট্টার ক্ষেত আর দেখতে পায় না আশি বছরের এই বৃদ্ধ। এবারের বন্যায় শংকরদহের এক নম্বর ওয়ার্ড বিলীন হবার সঙ্গে সঙ্গে ধুয়ে মুছে নিয়ে গেছে তার আবাদি জমিও। এখন বন্যার ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন ছয়মুদ্দিন। কিন্তু তার এলাকায় নদী রক্ষায় বেড়িবাঁধ না থাকায় শঙ্কা কাটেনি। বরং এই শুকনো মৌসুমেও তার মনে নদী ভাঙনের ভয় তাড়া করছে।

বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) সকালে তিস্তা নদী বেষ্টিত রংপুরের গঙ্গাচড়ার ৫নং লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের বাগেরহাট এলাকায় নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ছয়মুদ্দিনের সাথে বার্তা২৪.কম-এর কথা হয়। তার বর্ণনায় এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে শংকরদহ, বিনবিনারচর, পশ্চিম ইচলী ও পূর্ব ইচলীসহ বেশি কিছু গ্রাম। বন্যায় দীর্ঘদিনের চেনা পথঘাট, দোকানপাট ও আবাদি জমির ক্ষেত সবই বিলীন হয়েছে, শুধু বাঁধ না থাকায়।

তিস্তাপাড়ে এখনো নদী ভাঙন থামেনি

চারণ সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিনের স্মৃতি বিজড়িত এখানকার পশ্চিম ইচলী গ্রামে যাবার সময় বাঁশের তৈরি সাঁকোয় দাঁড়িয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কৃষক আজবর আলী বলেন, ‘আসল জাগাত পানি নাই, নদী এ্যলা হামার এত্তি। তিস্তা শুকি খা খা করেছে। আর হামার শংকরদহ, ইচলীত বন্যার পানি এ্যালাও আছে। বাঁধ না থাকাতে বানের পানি উচলি নদী এদি দিয়ে গেইচে। হাজার হাজার মাইনসের ক্ষতি হইচে। ঘরবাড়ি, আবাদি জমি, আস্তাঘাট সোগে নদীত বিলীন। তিস্তা হামাক শ্যাষ করিছে। একান বাঁধ করি দিলে হামরা বাঁচমো বাহে। নাইলে শংকরদহ গোটালে নদী হয়্যা যাইবে।’

যেখানে এক সময় ফসল ফলিয়েছে, সেই আবাদি জমির বুকে এখন ভাসছে নৌকা। অসহায় ইব্রাহিম মিয়া নৌকায় করে বাড়ি ফেরার পথে বার্তা২৪.কম-কে জানান, ‘শংকরদহের এক নম্বর ওয়ার্ড বিলীন হওয়ার পর এখন হুমকিতে রয়েছে দুই ও তিন নম্বর ওয়ার্ড। শুধু তাই নয়, শুকনো মৌসুমেও নয়া তিস্তায় পানির প্রবাহ না কমায় হাজার হাজার ফসলি জমি, ভিটেমাটি এখনো নদীর পেটেই আছে। কোথাও কোথাও পানি কমে জেগে উঠেছে বন্যায় ক্ষত-বিক্ষত রাস্তাঘাট,
ব্রিজ, কালভার্টসহ ঘরবাড়িবিহীন ধুধু চর।’

মূল তিস্তায় পানি নেই, শেখ হাসিনা সড়ক সেতুর নীচে জেগেছে বালুচর।

বন্যায় নদী ভাঙনের শিকার মধ্য ইচলির রমজান আলী, রেহেনা খাতুন, পশ্চিম ইচলির বিপ্লব মিয়াও একই কথা বলেছেন। অনেক আক্ষেপ নিয়ে তিস্তাপাড়ের এসব মানুষ জানান, ‘একটা বেড়িবাঁধ হলে তারাও বাঁচবে, বাঁচানো যাবে শেখ হাসিনা তিস্তা সড়ক সেতুটিও। নইলে মানচিত্র থেকে শংকরদহের সাথে হারিয়ে যাবে অনেক কিছুই।’

এবছর গঙ্গাচড়ায় পাঁচ দফায় বন্যা দেখেছে তিস্তাপাড়ের মানুষ। ভয়াবহ অভিজ্ঞতাও হয়েছে। বন্যার পানিতে অশান্ত হয়ে উঠা সেই তিস্তার বুক এখন শুকিয়ে গেছে। পানি শূন্যতায় জেগে উঠেছে ধুধু বালুচর। শেখ হাসিনা তিস্তা সড়ক সেতুর নীচে শুকনো চরে চলছে ফসল ফলানোর প্রস্তুতি। অথচ চারণ সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিনের স্মৃতি বিজড়িত এখানকার শংকরদহ, পশ্চিম ইচলী ও পূর্ব ইচলী গ্রাম দিয়ে এখনো বহমান রয়েছে বন্যার পানি। হঠাৎ মূল তিস্তার গতির পথ পরিবর্তন হয়ে বয়ে যাওয়া স্রোতে তিস্তা ঢুকে পড়েছে শংকরদহ ও ইচলীর দিকে।

নদীর গতিপথ পরিবর্তনে তিস্তা এখন আবাদি জমিতে, ভাসছে নৌকা

এখন শুকনো মৌসুমে নদী রক্ষা ও ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে চায় তিস্তাপাড়ের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা। তারা বলছেন, বন্যার সময় বাঁধ না থাকা এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের খামখেয়ালিতে শংকরদহের একটি ওয়ার্ড বিলীন হয়েছে। চারণ সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিনের নামে প্রতিষ্ঠিত চরের বাতিঘর স্কুলটির কাছাকাছি নদী এসে পৌঁছেছে। বন্যায় পশ্চিম ইচলী, কাশিয়াবাড়ি, বাগেরহাট, বাগদোহারার সহস্রাধিক বাড়িঘর, জমিজমাসহ বিভিন্ন স্থাপনা বিলীন হয়েছে। শুধু তাই নয়, হাজার হাজার আমনের উঠতি ক্ষেত তলিয়ে গেছে নয়া তিস্তায়।

সরকারের কাছে নদী শাসনের জন্য টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণের পাশাপাশি গঙ্গাচড়ার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষায় এখানে সাত কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি স্থানীয়দের।

তিস্তার বুকে জেগে উঠছে চর ও বালুচর

এনিয়ে শংকরদহ ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মোন্নাফ আলী জানান, ‘শংকরদহ, জয়রামওঝা, ঈশরকুল, পূর্ব ইচলী, পশ্চিম ইচলী গ্রামের ২০ হাজার মানুষের দুর্দশার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলীয় প্রধান প্রকৌশলী দায়ী। শেখ হাসিনা তিস্তা সেতু যে শুকনায় পড়েছে। সেটিও তার কারণেই। আমরা বারবার বলছি শেখ হাসিনা তিস্তা সেতুর মোকা থেকে হুমায়ুন চেয়ারম্যানের বাঁধ পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার একটি বোল্ডার বাঁধ তৈরি করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।’

এদিকে লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল হাদি বার্তা২৪.কম-কে অভিযোগ করে বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা উপজেলা প্রশাসনসহ সবখানেই ধরনা দিয়েও এ বিষয়ে মেলেনি কোনো সমাধান। একারণে এখানকার মানুষের জীবন ও জীবিকা রক্ষার দাবি থাকলেও সেই দাবি এখন অন্ধকারে। এলাকার এমপি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রীর ডিও লেটার পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন দপ্তরে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। এখানে ৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ না হলে আগামী বন্যায় শেখ হাসিনা তিস্তা সড়ক সেতুসহ শংকরদহের মতো অনেক গ্রাম বিলীন হয়ে যাবে ।’

এ ব্যাপারে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক এবং নদীরক্ষা-বিষয়ক সংগঠন রিভারাইন পিপলের পরিচালক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘নদীর চরিত্র বুঝে দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই পরিকল্পনার মাধ্যমে তিস্তার উৎসমূল থেকে শেষ পর্যন্ত একটি ডেল্টা পরিকল্পনায় যেমন নদী শাসন প্রয়োজন। তেমনি এখন শংকরদহ, ইচলীর মতো গ্রাম রক্ষা ও এখানকার মানুষের জীবন-জীবিকা বাঁচাতে একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণেরও প্রয়োজন রয়েছে।

   

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে মানবাধিকার সম্পর্কিত একটি নতুন শাখা চালু করার পরামর্শ দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এই পরামর্শ দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বৈঠকে ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প কুতুপালং এবং ভাসানচর পরিদর্শনের জন্য বৈঠকে প্রস্তাব করা হয়।

কমিটির সভাপতি এ কে আব্দুল মোমেনের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, শাহরিয়ার আলম, নাহিম রাজ্জাক, নিজাম উদ্দিন জলিল, নুরুল ইসলাম নাহিদ, হাবিবুর রহমান, সাইমুম সারওয়ার, জারা জাবীন মাহবুব অংশ নেন।

 

;

ঢাকাসহ ৮ জেলায় ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের শঙ্কা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঢাকাসহ দেশের আট জেলার ওপর দিয়ে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অফিস। সেইসঙ্গে বজ্রসহ বৃষ্টি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলা হচ্ছে।

শুক্রবার (২৯ মার্চ) সকাল ৯টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য দেওয়া এক পূর্বাভাসে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, ঢাকা এবং সিলেট জেলার ওপর দিয়ে পশ্চিম অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ সময় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। তাই এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

এদিকে, আবহাওয়া অফিসের অপর এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তার কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।

এ অবস্থায় শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।

;

ইসলামি সংগীত শিল্পী সালমানের মৃত্যুতে শোকের ছায়া



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ময়মনসিংহ
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ময়মনসিংহের ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় নিহত তিনজনের একজন সালমান আজাদী। তিনি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী এবং ইসলামি সঙ্গীত শিল্পী ও প্রশিক্ষক। তার মৃত্যুতে ক্যাম্পাসের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং স্বজন-শুভাকাঙ্ক্ষীদের মাঝে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সালমান আজাদী।

তিনি বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার হাপানিয়া এলাকার মৃত কোরবান আলীর ছেলে। নিহত সালমান স্ত্রী ও এক শিশুপুত্রকে নিয়ে নগরীর মাসকান্দা এলাকায় থাকতেন।

জানা গেছে, ইসলামি সংঙ্গীত শিল্পী হিসেবে ময়মনসিংহে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন সালমান আজাদী। ইসলামি সঙ্গীতের প্রসারে নিজেই প্রতিষ্ঠা করেছেন সালমান ইসলামি সঙ্গীত একাডেমি। প্রায় দুই বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানে শিশুদের ইসলামি গান শেখাতেন। এছাড়াও ত্রিশালে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ইসলামি সঙ্গীতের প্রশিক্ষক ছিলেন তিনি।

উদীয়মান এ ইসলাম সঙ্গীত শিল্পীর মৃত্যুতে শোকাভিভূত পরিবার, আত্নীয়-স্বজন, ক্যাম্পাসের সহপাঠী-শিক্ষার্থী, ইসলামি সংস্কৃতি প্রেমিসহ শুভাকাঙ্ক্ষীরা। শতশত মানুষের ফেসবুক স্ট্যাটাসে যেন শোক বইয়ে পরিণত হয়েছে সানমানের ফেসবুক টাইমলাইন।

আব্দুর রহিম ভূঁইয়া নামে একজন লিখেছেন, কিছু মৃত্যুর সংবাদ মানুষকে ভীষণ বেদনা দেয়, ভীষণ কষ্ট দেয়। আর এই মৃত্যু যদি অকালে হয় বা আকস্মিক হয় তার শোক কাটিয়ে উঠা মোটেও সহজ না। সালমান আজাদী ইসলামিক শিল্প একাডেমির শিক্ষক ও স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন। তিনি বাচ্চাদের নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতেন। বাচ্চাদের সুস্থ ধারার ইসলামিক সাংস্কৃতিক চর্চার ব্যাপারে তার অনেক পরিকল্পনা ছিল।

হানজালা রমজান মুন্না নামে আরেকজন লিখেছেন, প্রিয় হাসিমাখা মুখ ও সুন্দর করে কথা উপস্থাপন ছিল যার নৈমিত্তিক অভ্যাস। ইসলামি সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেয়ায় পেছনে ময়মনসিংহ শহরে যাদের অবদান, তাদেরই একজন ছিলেন। মনের মধ্যে ছিল ইসলামের জন্য তীব্র ভালবাসা। ভাইয়ের ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দিয়ে জান্নাতের উঁচু মাক্বাম দান করুন।

স্বামীর শোকে বাকরুদ্ধ স্ত্রী খাদিজা খাতুন জানান, সালমান নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত ছিলেন। বৃহস্পতিবার ক্লাস করতেই ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে ত্রিশাল যাচ্ছিলেন তিনি।

এদিকে সালমান আজাদীর অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার। এক শোকবার্তায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের ২০১৭-'১৮ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকের শিক্ষার্থী এবং বর্তমানে স্নাতকোত্তরে ২০২১-'২২ সেশনে অধ্যয়নরত মো. সালমান আজাদী (২৫) বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটায় ত্রিশালে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছে। তাঁর এই অকাল মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়-পরিবারের পক্ষে আমি গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছি। সেইসঙ্গে সালমানের বিদেহী আত্মার চিরশান্তির জন্য প্রার্থনাসহ শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাঈন উদ্দিন জানান, বিনা ময়নাতদন্তের জন্য আবেদনের প্রেক্ষিতে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এর আগে, ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার তিন যাত্রী নিহত হয়। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৪ জন। বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে উপজেলার ত্রিশাল বাজারের সাইফুল কমিশনারের বাসার সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত অন্য দুইজন হলেন, উপজেলার বৈলর ইউনিয়নের রুদ্রগ্রামের এনামুল হকের মেয়ে রুবাইরা তাজনিম (২) ও চিকনা মনোহর এলাকার মৃত আব্দুস সামাদের ছেলে শরিফুল ইসলাম (৩৪)।

;

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীরাঙ্গনাদের সম্মাননা দাবি



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নরসিংদী
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের বহু যুবক ও ছাত্র জনতার আত্মহুতির অবদান। এই যুদ্ধে নারীদের অবদানও কোন অংশে কম নয়। এ যুদ্ধে অসংখ্য নারী সরাসরি অংশগ্রহণের পাশাপাশি ইজ্জতও দিতে হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন নরসিংদীর পলাশ উপজেলার বেদনা দত্ত। বেদনা দত্তের মতো বীরাঙ্গনাদের স্মরণীয় করে রাখতে বীরাঙ্গনা স্মৃতিসৌধ বা রাস্তা ও প্রতিষ্ঠানের নামকরণের দাবি মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয়দের।

নরসিংদীর পলাশ উপজেলার বড়ি-বাড়ির বেদনা দত্ত স্বাধীনতা সংগ্রামের পূর্বেই স্বামী মারা যাওয়ায় অবুঝ তিন শিশুকে নিয়ে অনেক দুঃখ কষ্টে দিন পার করছিলেন। ঠিক সেই সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের রান্না করে খাওয়ানোসহ তাদের নানাভাবে সহয়তা করতেন বেদনা দত্ত। আর এমন খবর পেয়ে রাজাকার সদস্যরা বেদনাকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে পাকিস্তানি হায়েনাদের হাতে তুলে দেয়। বাড়ির পাশে রেল ব্রিজের নিচে পাকিস্তানিদের ক্যাম্পে ৪ দিনে নির্যাতন শেষে মৃত ভেবে পাশের জঙ্গলে ফেলে দেয় বেদনাকে।

পরে সেখান থেকে দুইদিন পর প্রাণ ফিরে পেলেও ইজ্জত আর সন্তানদের জীবন রক্ষায় এলাকা ছেড়ে নিজেকে আড়াল করে রাখেন তিনি। দীর্ঘদিন পর বাড়ি ফিরে আসলেও জীবন চলে অনাহারে অর্ধাহারে। এভাবেই পার করতে হয়েছে জীবনের প্রায় অর্ধশতাব্দি। অবশেষে এই ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের পর প্রশাসনের নজরে আসলে তার কাগজপত্র যাচাই বাছাই শেষে তাকে বীরাঙ্গনা হিসেবে নথিভুক্ত করেন এবং ভাতার আওতায় আনেন। সেই সাথে মুজিব বর্ষের উপহার হিসেবে তার জন্য তৈরি করা হয় বীর নিবাস। এখন এলাকাবাসীর দাবি বেদনা দত্তের অবর্তমানে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য স্মৃতিসৌধ নির্মাণের। অথবা তার নামে স্থানীয় কোন রাস্তা বা প্রতিষ্ঠানের নামকরণের দাবি মুক্তিযুদ্ধাসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

স্থানীয় জিনারদী ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সুলতান উদ্দিন পাঠান বলেন, আমরা জানতামই না আমাদের এলাকায় একজন বীরাঙ্গনা রয়েছে। সরকার যখন বেদনা দত্তকে একটি বীর নিবাস তৈরি করে দেয় তখনই জানতে পারি এই এলাকায় একজন বীরাঙ্গনা রয়েছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নির্মম নির্যাতনের শিকার এই নারী হয়তো একদিন থাকবেনা। কিন্তু তাকে যেনো পরবর্তী প্রজন্ম মনে রাখে এবং স্মরণ করে সেজন্য তার নামে একটি সড়কের নামকরণ বা স্মৃতিসৌধ নির্মাণের দাবি জানাই।

নরসিংদী জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধে নারী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বেদনা দত্তের মতো আরও যারা বীরাঙ্গনা রয়েছেন তাদের অসামান্য অবদান রয়েছে। নরসিংদীর নারী মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি রক্ষার্থে কয়েকটি আবেদন জমা পড়েছে যা প্রক্রিয়া দিন রয়েছে। অচিরেই এ বিষয়ে কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।

;