বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে ২০০০ সালেই উন্নত বাংলাদেশ হতো: তাজুল ইসলাম
স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, যদি বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতেন ২০০০ সালেই উন্নত বাংলাদেশ অর্জন করতে পারতাম। কিন্তু বঙ্গবন্ধু নেই। তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো, হতভম্ব হলো সমস্ত মানবতার বিবেক। তারপর দীর্ঘদিন পর্যন্ত বিভিন্ন বাহিনী, দল গঠন করে দেশের কোনো মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা হয় নাই। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তার কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত আমরা ভিক্ষুকের জাতি হিসেবে সারা পৃথিবীতে খ্যাতি লাভ করি। বঙ্গবন্ধুর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি করেছেন।
বুধবার (১১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে মুজিবর্ষের বিশেষ অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর ওপর আনীত প্রস্তাব সাধারণের আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
তাজুল ইসলাম বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটা বিশাল নাম এবং স্বল্প জীবনে সকল বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে সারাবিশ্বে একজন অত্যন্ত সম্মানিত মানুষ হিসেবে তার নিজের স্থান নিজেই তৈরি করে নিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য জনগণকে সংগঠিত করে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। বঙ্গবন্ধু সারা জীবনে অসংখ্য মূল্যবান সময় জেলে কাটিয়েছেন। সংগ্রাম করেছেন, আন্দোলন করেছেন। বঙ্গবন্ধু সামনের দিকে আগাতে কখনো দিধাবোধ করেন নাই। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে দেশের অনেক রাজনৈতিক দল অংশ গ্রহণ না করার জন্য বলেছিলেন। বঙ্গবন্ধু জনগণের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা, গণতন্ত্রের প্রতি তার সম্মানের কারণে সেদিন নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেন।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু হঠাৎ করে ফিরে আসলেন। বাঙালি জাতি যেন নতুন বিজয় অর্জন করল। এই অধিবেশনের প্রথম দিনে বঙ্গবন্ধুর ১০ জানুয়ারির ভাষণ শুনে আমি অভিভুত হয়েছি, এতোদিন খণ্ড খণ্ড শুনেছি, সেদিন পুরোটা শুনলাম। রাস্তাঘাট বিধ্বস্ত, কোর্ট-কাচারি, ব্যাংক-বীমা, সেনাবাহিনী নাই, পুলিশ নাই সবকিছু পুনর্গঠন করলেন। রাস্তঘাট বিধ্বস্ত, রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, চট্টগ্রাম বন্দর অচল, সাড়ে ৭ কোটি মানুষ ছাড়া আর কিছুই নাই বঙ্গবন্ধুর হাতে। নেতা বঙ্গবন্ধু সাহসী মানুষ। আল্লাহর উপর ভরসা রেখে সবাইকে আহ্বান করলেন, আমাদের যা কিছু আছে, আমরা তাই নিয়ে এগিয়ে যাব। তিনি আমাদের স্বপ্ন দেখালেন, যাত্রা আরাম্ভ করলেন।
অত্যন্ত দুঃখ নিয়ে বলতে হয়, আমাদের ভাগ্যের উন্নতির জন্য বঙ্গবন্ধু যখন কাজ আরম্ভ করলেন, একটি গোষ্ঠী তখন বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে লেগে গেল। লন্ডনে পূর্ব পাকিস্তান কমিটি গঠন করে সেখানে অফিস স্থাপন করে ওই গোষ্ঠীটি। এখানে স্বাধীনতা বিরোধীসহ তৎকালীন যারা রাজনীতির নতুন নতুন দল গঠনের মাধ্যমে ছাত্র সংগঠন করে, তাদের সাথে সংযোগ স্থাপন করে বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করার চেষ্টা করলেন, বিভ্রান্ত ছড়ানোর চেষ্টা করলেন, বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেন। দোহা বাহিনী, তোহা বাহিনী, সর্বহারা পার্টি এবং সিরাজ শিকদার বাহিনী গঠন করে বাংলাদেশের মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করলেন। টেলিফোন করে টাকা আদায় করা এবং ডাকিত করা শুরু হলো। বিদেশি চক্রান্ত আবার নতুন করে শুরু হলো। বঙ্গবন্ধু সে সমস্ত চক্রান্তকে মোকাবিলা করে বাংলার মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য কাজ শুরু করলেন।
তিনি আরও বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে। আমি মনে করি যদি বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতেন ২০০০ সালেই উন্নত বাংলাদেশ অর্জন করতে পারতাম। কিন্তু বঙ্গবন্ধু নেই। নির্মমভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত মানসিক যন্ত্রণায় ভুগতাম, জাতি ভুগত। ১৫ আগস্ট যায়, ২৬ মার্চ যায়, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চ শুনি না। যে ৭ মার্চের ভাষণ শুনে স্বাধীনতার জন্য ৩০ লাখ লোক রক্ত দিয়েছে। যারা স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছে, তারা রেডিও-টেলিভিশনে দেশপ্রেমের গল্প শোনাত। বড় কষ্ট ছিল, দুঃখ ছিল। তখন বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার হয়নি। ইনডেমনিটি দিয়ে তাদের বিচারের পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। নেত্রী ক্ষমতায় আসার পর শত বাধা পেরিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের কার্যক্রম শেষ করতে পেরেছেন। খুনিদের বিচার হয়েছে। যারা আত্ম স্বীকৃত খুনি তারা বলেছিল- তাদের বিচার কে করবে? যারা ক্ষমতায় ছিল, তখন তারাই পৃষ্ঠপোষকতা করেছিল।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন আর ভিক্ষুকের দেশ নয়। আজকে আমরা উন্নত দেশের স্বপ্ন দেখছি। উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হবার সুযোগ পেয়েছি। এই যাত্রা অব্যাহত থাকবে। ষড়যন্ত্র এখনো হচ্ছে, ষড়যন্ত্র হবে এবং সেই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার জন্য সবার সম্মিলিত শক্তি আছে। বঙ্গবন্ধু তার শাসন আমলের সময় সবাইকে আহ্বান করেছেন ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য, একত্রিত হবার জন্য, ঐক্যবদ্ধভাবে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য। পঞ্চায়েত ব্যবস্থা বাতিল করে বঙ্গবন্ধু ইউনিয়ন পরিষদ করেছেন। ইউনিয়ন পরিষদকে উন্নয়নের চাবিকাঠি হিসেবে সেখানে একটি মডেল করেছেন। প্রধানমন্ত্রী সেই মডেলকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু সমবায়ের কথা বলেছেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ কার্যকর করার চেষ্টা করছি।