আদিতমারী উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ইউএনওসহ ১৮ অফিসারের লিখিত অভিযোগ
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ইউএনওসহ ১৮ জন অফিসার।
বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) রাতে গণস্বাক্ষরকৃত অভিযোগটি জেলা প্রশাসক বরাবর দায়ের করে বিভিন্ন দফতরে অনুলিপি দেওয়া হয়েছে।
দুই পাতার অভিযোগে প্রকাশ, আদিতমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বিধিবিধান ও নীতিমালা লঙ্ঘন করে কাজের জন্য চাপ প্রয়োগ করে আসছেন। এর ব্যর্তয় ঘটলে সেই দফতরের কর্মকর্তাকে অশ্রব্য ভাষায় গালমন্দসহ প্রাণনাশের হুমকি দেন চেয়ারম্যান। উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড, ভিজিডি, মাতৃত্বভাতা, কৃষি প্রণোদনা, সামাজিক নিরাপত্ত বেষ্টনীর সুবিধাভোগীর তালিকায় নিজের অংশ দাবি করেন চেয়ারম্যান। বিধি বহির্ভূত ভাবে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ না দেয়ায় এবং প্রাক্কলন কাজ সমাপ্ত না হতেই বিল পরিশোধ না করায় সাম্প্রতিক সময় উপজেলা প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলীকে রুমে বেঁধে পেটানোর হুমকি দেন চেয়ারম্যান। শুধু তাই নয়; তার কথামত কাজ না করায় একজন মহিলা কর্মকর্তাকে বহিরাগতদের দিয়ে মানহানীর ঘটনা ঘটানোর হুমকি দিয়েছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। সকল দফতরের কর্মকর্তাদের সাথে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনা তুলে ধরা হয় অভিযোগে।
অভিযোগে আরো বলা হয়, বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) মাসিক সমন্বয় সভায় ভিজিডি ও মাতৃত্ব ভাতার তালিকায় নিজের অংশ দাবি করেন উপজেলা চেয়ারম্যান। যা বিধি সম্মত না হওয়ায় ইউএনও নাকোচ করে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সভা অসমাপ্ত রেখে চলে যান চেয়ারম্যান। এরপর চেয়ারম্যান ইউএনও অফিসের সিসিটিভি ক্যামেরা লোক মার্ফতে খুলতে গেলে তার ছবি তুলেন ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন। একই সাথে ক্যামেরা খুলে ফেলার কারন জানতে চাইলে ইউএনওকে অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ করা হয় (‘‘বেশি কথা বললে পিটিয়ে নরসিংদী পাঠিয়ে দিবো। উপজেলা পরিষদ কি তোর বাবার সম্পত্তি, উপজেলা পরিষদ কি তুই চালাবি?’’)। এভাবে গালমন্দ করা হয় বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
চরম উত্তেজিত হয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোবাইলে ফোনে তার দলের লোকদের ডাকলে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে থানা পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। ঘটনার পর থেকে উপজেলা পরিষদ চত্বরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনার পরপরই ইউএনওসহ উপজেলার সকল দফতরের কর্মকর্তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন।
একই দিনগত রাতে ইউএনওসহ উপজেলার ১৮ জন কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক বরাবরে এ সংক্রান্ত গণস্বাক্ষরকৃত একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। যার স্মারক নং- ০৫.৪৭.৫২০২.০০০.০২.০৮৩.২০- ৭৬৪। এর অনুলিপি স্থানীয় সংসদ সদস্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ও রংপুর বিভাগীয় কমিশনারকে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগে উপজেলা পরিষদ আইনের লঙ্ঘন করায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়।
আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বলেন, আমরা সকল দফতরের কর্মকর্তারা লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলেও আমরা বিশ্বাস রাখি।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, জনস্বার্থে গত অর্থ বছরের সকল দফরের কাজের অগ্রগতি জানতে চাওয়ায় অফিসাররা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। ইউএনও নিজেই বিধি বহির্ভুতভাবে ঠিকাদারের নামে নিয়ে এডিপি ও আশ্রয়ন প্রকল্প ২ এর কাজ করছেন। স্থানীয় ভাটা মালিকদের চাপ দিয়ে ইট নিয়ে এসে উপজেলা পরিষদে রেখেছেন তার ঠিকাদারী কাজের নির্মান সামগ্রী। তদারকি কর্মকর্তা হয়ে নিজে কাজ করার বিষয়টির প্রতিবাদ করায় ইউএনও আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনায়ন করেছেন। তবে এসব বিষয়ের সুষ্ঠু তদন্ত করার জোর দাবি জানান তিনি।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের উপ সচিবকে (ডিডিএলজি) তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।