ভয়ঙ্কর ‘কঙ্কালচোর’ বাপ্পি, পর্দায় ঢাকা থাকত তার বাসা!
ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকায় মাঝেমধ্যেই ঘটতো কবরস্থান থেকে মানব কঙ্কাল চুরির ঘটনা। এ বিষয়টি নিয়েই নজরদারি বাড়ায় পুলিশ। সে প্রেক্ষিতেই শনিবার (১৪ নভেম্বর) দিনগত রাত ২টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ময়মনসিংহ নগরীর আর. কে. মিশন রোড এলাকায় ‘আশানীড়’ নামে একটি তিনতলা বাসায়।
সেই বাসার দুই তলায় থাকত বাপ্পি (৩২) নামে এক ব্যক্তি। সেখানে তল্লাশি চালানোর সময় বস্তা আর কার্টুনভর্তি মাথার খুলি ও হাড়গোড় দেখে আতকে উঠে অভিযানে থাকা পুলিশ সদস্যরা।
সেই অভিযানে থাকা কোতোয়ালি মডেল থানার ৩ নং ফাঁড়ির উপপরিদর্শক রাশেদুল ইসলাম জানান, এত বিপুল পরিমাণ মানবদেহের অংশবিশেষ ও মাথার খুলি দেখে আমরা অবাক হই। যেখানে একে একে বের হয় ১২টি মাথার খুলি ও দুই বস্তা হাড়গোড়। সেই সাথে পাওয়া যায় বিশেষ কেমিক্যাল। যা দিয়ে মানবদেহ দ্রুত পচানো ও কঙ্কাল প্রক্রিয়াজাত করা হতো।
এমন ঘটনায় রীতিমতো হতবাক এলাকাবাসী। রোববার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে নগরীর আর. কে. মিশন রোড এলাকায় গিয়ে কথা হয় স্থানীয়দের সঙ্গে। আব্দুল কাইয়ুম নামে এক ব্যক্তি বলেন, দোতলার বারান্দা পুরোটাই একটা পর্দা দিয়ে ঢাকা থাকতো। ওই বাসার জানালাও কখনো খোলা থাকতে দেখা যায়নি। মাঝেমধ্যে কিছুটা সন্দেহ হলেও আমরা ভাবতাম তার স্ত্রী হয়তো পর্দাশীল তাই সে বিষয়ে খুব একটা মাথা ঘামাতাম না।
আবুল কালাম নামে স্থানীয় আরেক ব্যক্তি বলেন, তাকে ঘরের বাইরে খুব একটা বের হতেও দেখি নাই। তবে সে অনেক রাত জাগতো। রাত ৩টা/৪টা পর্যন্ত তার বাসার লাইট জ্বালানো থাকতো। ভেতরে এত কিছু হত তা আমাদের ধারণাতেই ছিল না।
আটক বাপ্পির ব্যাপারে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার বলেন, বাপ্পি দীর্ঘদিন ধরে কঙ্কালের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ইতোপূর্বে সে একবার কঙ্কালসহ গ্রেফতার হয়েছিল। ওই মামলায় জেলও খেটেছে। কিন্তু এরপরও তার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিল। বাপ্পিসহ বেশ কয়েক সদস্যের একটি চক্র জড়িত কঙ্কাল চুরির সঙ্গে। নিষ্ঠুরভাবে কবর থেকে মরদেহগুলো তুলে ক্যামিকেলের মাধ্যেম প্রক্রিয়াজাত করা হতো। পরে সেগুলো দেশে বিভিন্ন ক্রেতার পাশাপাশি দেশের বাইরেও বিক্রি করতো।
ওসি আরও জানান, হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে রোববার দেশের বাইরে পাচারের কথা ছিলো কঙ্কালগুলো। কিন্তু পুলিশ খবর পেয়ে তার আগেই অভিযান চালায়। চক্রের সঙ্গে জড়িত অন্যদেরও দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।