বাসে আগুন, এটার উদ্দেশ্যটা কি?- প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর
সকল বাধা অতিক্রম করে যখন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। তখন নতুন আপদ আসলো করোনাভাইরাস। এই করোনার কারণে আমাদের সমস্ত প্রচেষ্টা কিছুটা ব্যাহত হল। সেটাও মোকাবিলা করে যখন চলছি, তখন আসলো ঘূর্ণিঝড়, তারপর আসলো বন্যা। আবার এরইমধ্যে কোনও কথা নেই বার্তা নেই, হঠাৎ করে বাসে আগুন দিয়ে অগ্নিসন্ত্রাস। কেন, কী স্বার্থে? কিসের জন্য? নির্বাচন হয়। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার নামে অংশগ্রহণ করে। টাকা-পয়সা যা পায়, পকেটে নিয়ে রেখে দেয়। নির্বাচনের দিন নির্বাচনও করে না। এজেন্টও দেয় না। কিছুই করে না। মাঝপথে ইলেকশন বয়কটের নাম দিয়ে, বাসে আগুন দিয়ে পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায় বলে জানিয়েছেন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (১৫ নভেম্বর) বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনে আনা সাধারণ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ নেতা এসব কথা বলেন। গত সোমবার (৯ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতাকে শ্রদ্ধা জানাতে ১৪৭ বিধিতে সাধারণ প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, বাসে আগুন, এটার উদ্দেশ্যটা কি? আজকে বাংলাদেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের মানুষ একদিকে করোনা সামলাচ্ছে, অপরদিকে অর্থনীতির গতিটা যাতে সচল থাকে তার ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা বিশেষ প্রণোদনা দিয়েছি। আমাদের বাজেটের প্রায় ৪ শতাংশ প্রণোদনা দিয়েছি। টাকা পয়সা যখন যেটা দরকার আমরা দিয়ে মানুষের জীবনটা যাতে সচল থাকে সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা চিকিৎসা ব্যবস্থা নিচ্ছি। ভ্যাকসিন আবিষ্কার হচ্ছে। আমরা অ্যাডভান্স টাকা পয়সা দিয়ে ইতিমধ্যেই ভ্যাকসিন কেনার ব্যবস্থা করে রেখে দিয়েছি। যখনই চালু হবে তখনই যেন আমরা এটা নিতে পারি আমার দেশের মানুষকে দিতে পারি, সেই ব্যবস্থাটাও আমরা নিয়েছি। যখনই যেটা প্রয়োজন আমরা কিন্তু করে যাচ্ছি। তাদের অভিযোগটা কোথায়? সেটাই তো সব থেকে বড় প্রশ্ন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার একটা স্বপ্ন ছিল। এই বাংলাদেশকে নিয়ে। আর সেই স্বপ্ন নিয়েই এই দেশটাকে স্বাধীন করেছিলেন। স্বাধীনতা কিন্তু চট করে একদিনে আসেনি। দীর্ঘ দিন তার সেই লালিত স্বপ্ন। সেটা তিনি নিজে বলেছেন। তিনি যখন যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলছেন তখন স্বাধীনতা বিরোধী চক্র এবং দেশীয়-আন্তর্জাতিক চক্র তার যাত্রাপথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করল। দুর্ভিক্ষ হলো, এদেশের মানুষ হত্যা করল। রাতের আধারে সংসদ সদস্যদের হত্যা করা শুরু করল, এমন কি ঈদের নামাজে পর্যন্ত সংসদ সদস্যদের হত্যা করা হলো।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশকে কিভাবে উন্নতি করবেন। বাংলাদেশে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ছিল তার লক্ষ্য। অনেকেই এটা নিয়ে নানা ধরনের সমালোচনা করেন যখন এই পদক্ষেপটা নেন। তিনি এর উল্টো ব্যাখা দিয়ে সেটাকে নসাৎ করেছিলেন। জাতির পিতার জীবনী নিয়ে আলোচনা করেছি কিন্তু যে কাজটা তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন করার পদক্ষেপও নিয়েছিলেন কিন্তু আর করে যেতে পারলেন না। ফলাফলটা কি আজকে স্বাধীনতার ৪৯ বছর এখনো বাংলাদেশ কোথায় দাঁড়াচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার আসতে পেরেছিল বলেই কিন্তু যতটুক উন্নতি করতে পেরেছি। এর বাইরে যারা ক্ষমতায় ছিল তারা তো দেশের উন্নতি করেনি মানুষের উন্নতি করেনি। করার ইচ্ছাও ছিল না এবং জানতও না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু তো বাংলাদেশ ঘুরেছেন তিনি মানুষের কষ্ট বুঝতেন আর সেটা জানতেন বলেই এদেশের ভাগ্যটা কিভাবে পরিবর্তন হবে সে বিষয়ে তিনি যথেষ্ট সচেতন ছিলেন। এবং সেভাবেই তিনি কাজ করতে চেয়েছিলেন। আমরা যখনই সরকারে এসেছি আমরা সব সময় সেই চেষ্টাই করেছি এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে যে স্বপ্ন তিনি দেখেছেন সেটাও যেন সম্পন্ন করতে পারি এটাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের নির্বাচন পদ্ধতি বঙ্গবন্ধু পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। তিনি তার ভাষণে বলেছিলেন আমি যাকে নমিনেশন দিয়ে দেব সে জিতে আসবে। যে সত্যিকারে মানুষের দরদী সে তো কখনো ইলেকশনে জিতে আসতে পারবে না। তিনি একটা সিস্টেম করেছিলেন প্রার্থী কারা হবে একজন, দুইজন, তিনজন, চারজন যেই প্রার্থী হোক তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে সেই চারজনের মধ্যে থেকে জনগণ যাকে আপন মনে করবে যাকে দিয়ে কাজ হবে তাকে বেছে নেবে। যেহেতু খরচপাতি সরকারি পার্টি থেকে দেওয়া হবে সেখান থেকে জনগণ যাকে চায় তাকেই জিতে নিয়ে আসবে। দুটো ইলেকশন হয়েছিল একটা কিশোরগঞ্জে আর একটা বোধ হয় পটুয়াখালীতে। সেখানে একজন স্কুলশিক্ষক জিতে আসে। উনার যে স্বপ্নটা ছিল সেটাই দেখা গেল সামান্য একজন স্কুল শিক্ষক সে জিতে আসল। টাকা নাই পয়সা নাই কিন্তু যেহেতু জনগণের আস্থা ভরসা তার ওপরে কাজেই সে জিততে পারে। তিনি নিজে বলেছেন। তা নাহলে যার টাকা পয়সা আছে লাঠির জোর আছে সেই জিতে আসতো। নির্বাচনে যে টাকার খেলা বা অস্ত্রের ঝনঝনানি বা মাসেল খেলা। আর কখনো নির্বাচন নিয়ে কেউ কিছু করতে পারবে না কিন্তু সেটা তো তিনি করতে পারেন নাই। যার জন্য নির্বাচন নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে। সত্যি কথা বলতে ১৯৭৫ এর পরে যারা ক্ষমতা দখল করেছে তারা তো নির্বাচন প্রহসন করে করে সিস্টেমটাই নষ্ট করে দিয়ে গেছে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি যে একটা সিস্টেমে নিয়ে আসতে। কিন্তু এটা তো হয়ে গেছে। গণতন্ত্রকে সুসংহত করা শোষিতের গণতন্ত্র কায়েম করা ক্ষমতা বিকেন্দ্রিকরণ করে তিনি তৃণমূল মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা এটাই ছিল জাতির পিতার স্বপ্ন। সেই স্বপ্নটা বাস্তবায়ন করাই আমাদের লক্ষ্য। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছে।