‘মানুষের দুঃসময়কে কাজে লাগিয়ে বিএনপি ফায়দা লুটতে চায়’
সম্প্রতি বাসে আগুন দেওয়া নিয়ে বিএনপি নেতারা সরকারের ওপর দোষ চাপাতে ব্যস্ত। এর কড়া জবাব দিয়েছেন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আমরা ক্ষমতায় আছি, আমরা আগুন দিয়ে আমাদের সরকারকে বদনামের ভাগিদার করব কেন? আর মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। এখন সব জায়গায় সিসিটিভি আছে। কারা আগুন দিচ্ছে পরিষ্কার ছবি আছে আমার কাছে। ছবি দেখানোর সুযোগ থাকলে সেটাও দেখাতে পারি।
সোমবার (১৬ নভেম্বর) রাতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে গাড়ি পোড়ানোর ইস্যু নিয়ে বিএনপি নেতাদের অহেতুক দোষ চাপানো হচ্ছে এবং এরজন্য সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি তোলেন বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদ। পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে এসব কথা বলার পর স্পিকারের অনুমতি নিয়ে সংসদে কথা বলেন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়। বিএনপির উনাকে (হারুনকে) আমার সামনের সিটেই বসিয়েছি, উনি কথা বলেন। উনি বিভিন্ন সময় এমন এমন কথা তোলেন, সবসময় আমরা কথার উত্তরও দেই না। আমার মনে হয় আজকে উনি যেভাবে কথাটা বললেন, আমার মনে হয় নিজেদের পার্টি সম্পর্কে তথ্যগুলো জেনে নিয়ে তারপর কথা বলা উচিত ছিল।
বিএনপির সংসদ সদস্য হারুন সাহেব নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন। আমার প্রশ্ন হচ্ছে আদৌ তারা কি নির্বাচন করে কি না? নির্বাচনে উনারা অংশ নেন, নমিনেশন নিচ্ছেন, যাচ্ছেন কিন্তু তাদের না প্রচার, না কাজ বা নির্বাচনের দিনে কোথাও একটা এজেন্টও ঠিকমত দেবে না, কোনো কিছু করবে না। মাননীয় স্পিকার যদি প্রতিটি উপ-নির্বাচন দেখেন একটা সময়ের পর তারা নির্বাচন থেকে প্রত্যাহার করেই অমনি বলে নির্বাচন ঠিক হচ্ছে না। আসলে জনগণের সমর্থন তারা হারিয়েছে অনেক আগেই। ২০০১ সালে চক্রান্ত করে ক্ষমতায় আসার পর থেকে তারা যে সমস্ত ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে, বিশেষ করে তাদের সন্ত্রাস, মানুষ খুন করা, নারী নির্যাতন থেকে শুরু করে এমন কোনো অপরাধ নাই ২০০১ সালে বিএনপি করে নাই। একেবারে সেই ১ অক্টোবর থেকে শুরু হাজার হাজার মেয়েদের ওপর পাশবিক অত্যাচার করা। তারপর আসে তাদের অগ্নিসন্ত্রাস। জীবন্ত মানুষগুলোকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। এখনো আমাদের পার্লামেন্টের মেম্বার আছে, কোনো অপরাধ ছিল না অগ্নিসন্ত্রাস করে তারা মানুষ পোড়াল। এটা তাদের একটি আন্দোলন, মানে মানুষ খুন করা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকায় দুটি আসনে নির্বাচন হলো। যখন একটি আসনে নির্বাচন হচ্ছে চট করে কয়েকটা বাসে আগুন দেওয়া এবং তারা নিজেরা আগুন দিয়ে আবার দোষ দিচ্ছে এটা নাকি সরকারি এজেন্ট করেছে। মাননীয় স্পিকার আমরা ক্ষমতায় আছি, আমরা আগুন দিয়ে আমাদের সরকারকে বদনামের ভাগিদার করব কেন? মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব।
এখন টেকনোলজির কারণে সব জায়গায় সিসিটিভি আছে, সেখানে তো হাতে নাতে ধরা পড়ে যাচ্ছে। অনেক জায়গায় কারা সত্যি আগুণন দিচ্ছে এবং একেবারে পরিষ্কার ছবি আছে আমার কাছে। ছবি দেখানোর সুযোগ থাকলে সেটাও দেখাতে পারি। তাদের একটা মিছিল চলে যাওয়ার সাথে সাথে কয়েকটা লোক দেখা গেল দিয়াশলাই দিয়ে বাসের মধ্যে আগুন দিয়ে দিল। সেই ছবি আমার কাছে আছে। রাস্তায় যে ভিডিও ফুটেজ থেকে বিশেষ করে সিসি ক্যামেরা থেকে নেওয়া। নিজেরা আগুন দিয়ে এসে পার্লামেন্টে সরকারকে দোষারোপ করা উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানো। এটা তাদের অভ্যাস।
তিনি বলেন, আসলে তো তাদের গোড়ায় গলদ। গোড়ায় গলদটা হচ্ছে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেছে হত্যা ক্যু ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে। তারপর প্রত্যেকটা ঘটনা যদি দেখেন তার ক্ষমতা দখলটাই খুনের মধ্যে দিয়ে। যে দলটি সৃষ্টি করে গেছে তারা ওই খুন খারাপি অস্ত্রের রাজনীতি এটাই ভালো বোঝে।
বাস পোড়ানো প্রসঙ্গে সংসদ নেতা বলেন, কোনো কারণ নাই এভাবে বাসে আগুন দিয়ে পোড়ানোর, কিন্তু তারা করল, কেন? নির্বাচনটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। যখন মানুষের ভোট পাচ্ছে না। মানুষের আস্থা বিশ্বাস হারিয়েছে আর হবেই বা না কেন, দলের নেতা বানিয়েছে কাকে? খুনের মামলার আসামি। দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারির মামলায় যিনি সাজাপ্রাপ্ত আসামি, যে দেশ থেকে পলাতক তাকে বানানো হল ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। বাংলাদেশে বিএনপির এমন কোনো যোগ্য নেতা নাই যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হতে পারে। তাদের যিনি নেত্রী তিনিও এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। তারপর তাকে বাসায় থাকতে দেওয়া হয়েছে। কাজেই এই অপরাধের মধ্য দিয়ে যাদের জন্ম আর অপরাধ করাটাকেই যারা নিয়ম মানে তারা আর যাই হোক মাননীয় স্পিকার সংসদ একটা পবিত্র জায়গা আমি আপনার মাধ্যমে বিএনপি সংসদ সদস্যকে বলব এভাবে এখানে অসত্য তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত না করাই ভালো। এটা মানুষ গ্রহণ করবে না। মানুষ বিশ্বাস করবে না।
তিনি আরও বলেন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যেন বিএনপি বন্ধ করে এটাই আমার আবেদন থাকবে। আমরা দেশের উন্নয়ন চাই। করোনাভাইরাসে এমনি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত, মানুষ কষ্টে আছে, আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। মানুষকে সাহায্য করে যেতে, অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে আর এই সুযোগে তারা মানুষের দুঃসময়টাকে কাজে লাগিয়ে সরকারকে বদনাম করতে চাইছে। মানুষ এখন অন্ধ না, মানুষ সব দেখে, জানে, আর একথা বিএনপি নেতাদের বোঝা উচিত। টেকনোলজির কারণে এখন অনেক কিছুই খুব তাড়াতাড়ি ধরা পরে যায়। আজকে বিএনপির সংসদ সদস্য আমি মনে করি একথা শোনার পর বোধ হয় আর কখনো এ ধরনের অসত্য তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে না।