গাজীপুর গণপূর্তের ৩৪ প্রকল্পে ‘লুটপাট’!
গাজীপুর গণপূর্ত বিভাগের ৩৪টি নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে প্রকল্পগুলোর কাজ সম্পাদন ছাড়াই কর্মকর্তাদের ‘সন্তুষ্ট’ করে হস্ত রশিদের মাধ্যমে ৪৯ কোটি ২৯ লাখ ২২ হাজার ৩০৬ টাকা বিল তুলে নিয়েছে ঠিকাদাররা। এই লুটপাটে নেতৃত্ব দিয়েছেন গাজীপুর গণপূর্তের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনোয়ারুল আজিম।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক লুটপাট ও অনিয়মের প্রমাণ পেয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর কাছে গত ২৫ অক্টোবর কৈফিয়ত চেয়ে চিঠি (স্মারক নম্বর-৩৫২) দিয়েছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মো. মিজানুর রহমান মজুমদার।
এতো লুটপাট ও অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও ব্যবস্থা না নিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনোয়ারুল আজিমকে গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে পাবনায় বদলি করা হয়েছে। অপরদিকে, মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো ওই চিঠির জবাব ২৭ দিনেও দিতে পারেনি গাজীপুর গণপূর্ত বিভাগ। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে- সবগুলো প্রকল্পের কাজের বিপরীতে বিল, এমবি ও ভাউচার লিখিতভাবে চাইলে গাজীপুর গণপূর্ত বিভাগ তা অডিট দলের কাছে প্রদর্শন করতে পারেনি। শুধুমাত্র এইচআরের (হস্ত রশিদ) মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা বিল পরিশোধ করা হয়েছে।
ওই চিঠিতে অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা পরিদপ্তর কর্তৃক উত্থাপিত গাজীপুর গণপূর্ত বিভাগের ২০১৯-২০২০ সালের অডিট আপত্তির অনুচ্ছেদ নম্বর ৫-এর বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য ও প্রমাণ সংযুক্ত করে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর সুপারিশ ও প্রধান প্রকৌশলীর মতামতসহ ব্রডশিট জবাব মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (শতামেক) নির্মাণ প্রকল্পের একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজের ৮২০টি পাইল ঢালাই ও ড্রাইভসহ অন্যান্য সমস্ত কাজের বিল বাবদ গত ১০ মার্চ ৭ কোটি ২৭ লাখ ২৭ হাজার ২৭৩ টাকা (ভাউচার নম্বর-৩৫৯), বালক হোস্টেল ভবন নির্মাণ কাজের ৩২৭টি পাইল ঢালাই ও ড্রাইভসহ অন্যান্য সমস্ত কাজের বিল বাবদ গত ১৩ মে ৩ কোটি টাকা (ভাউচার নম্বর-৪০৯) এবং বালিকা হোস্টেল ভবন নির্মাণ কাজের ৪৩৭টি পাইল ঢালাই ও ড্রাইভসহ অন্যান্য সমস্ত কাজের বিল বাবদ গত ৯ মার্চ ৬ কোটি ৬ লাখ ৬ হাজার ৬০ টাকা বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করা হয়েছে।
অথচ সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজিম সাক্ষরিত গত জুলাই মাসের প্রকল্প অগ্রগতি প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, এই প্রকল্পগুলোর শুধুমাত্র পাইল ড্রাইভ কাজ চলমান রয়েছে।
এছাড়াও শতামেকের ১২৫০ বর্গফুট কোয়াটার নির্মাণ কাজের জন্য গত ৩০ জুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ১ কোটি ৭১ লাখ ৪৪ হাজার ৮২৫ টাকা (ভাউচার নম্বর-৭২৯) পরিশোধ করা হয়েছে। যার বিপরীতে এই প্রকল্পের সার্ভিস পাইল ঢালাইয়ের কাজ চলমান রয়েছে বলে অগ্রগতি প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সমস্ত কাজের বিল অগ্রিম পরিশোধ করা হয়েছে। গত মার্চে পরিশোধিত অর্থের বিপরীতে কাজ আদায় ছাড়াই শতামেকের একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজের জন্য এস জে সি এল এইচ জেভি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে গত ২৯ জুন পুনরায় ১০ কোটি টাকা (ভাউচার নম্বর-৬৯৭) প্রদান করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (শতামেক) নির্মাণ প্রকল্পের ১০তলা বয়েজ হোস্টেল ও ডাক্তার ডরমেটরি ভবন নির্মাণের জন্য বঙ্গ বিল্ডার্সকে গত ২৫ জুন ৪ কোটি টাকা (ভাউচার নম্বর- ৫৬০), শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন কাজের জন্য এস এইচ জেভি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে গত ২৯ জুন ৬০ লাখ টাকা (ভাউচার নম্বর-৬৯৮), শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পের ১২৫০ বর্গফুট কোয়াটার নির্মাণের জন্য ডিইসিএল এন্ড বিএ জেভি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে গত ৩০ জুন এক কোটি ৭১ লাখ ৪৪ হাজার ৮২৫ টাকা (ভাউচার নম্বর-৭২৯), শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পের ১০তলা গার্লস হোস্টেল ও ডাক্তার ডরমেটরি ভবন নির্মাণ কাজের জন্য গত ২৫ জুন এম জে সি এল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ১ কোটি টাকা (ভাউচার নম্বর-৫৬১) এবং গত ২৩ জুন শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজের ৬ষ্ঠ চলতি বিল হিসেবে নুরানি কনস্ট্রাকশনকে ৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা (ভাউচার নম্বর-৫১৩) বিল প্রদান করা হয়েছে।
সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত জুনে এই প্রকল্পগুলোতে যে কাজের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সেই কাজ অদ্যবধি শুরুই হয়নি।
এসব ছাড়াও গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা ভূমি অফিস নির্মাণ কাজের জন্য বাবর এসোসিয়েশন নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে গত ৩০ জুন হস্ত রশিদের মাধ্যমে (ভাউচার নম্বর-৭৩৩) ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, কাপাসিয়া উপজেলা ফায়ার সার্ভিস অফিস নির্মাণ কাজের জন্য প্রবাল ইঞ্জিনিয়ার্সকে গত ২১ জুন ৫০ লাখ টাকা (ভাউচার নম্বর-৪৮৪), গাজীপুর জেলা রেজিস্ট্রি অফিস নির্মাণে আর ই এন্ড এম ই (জেভি) ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে গত ২৩ জুন এক কোটি ৯৭ লাখ টাকা (ভাউচার নম্বর-৫২৬), কাপাসিয়া টিটিসি’র ডরমেটরি ভবন নির্মাণে তালহা ইন্টারন্যাশনালকে গত ২১ জুন ৮৬ লাখ টাকা (ভাউচার নম্বর-৪৮৭), গাজীপুর র্যাব ট্রেনিং স্কুল নির্মাণে ঠিকাদার মো. দেলোয়ার হোসেনকে গত ২১ জুন ৫০ লাখ টাকা (ভাউচার নম্বর-৪৯৫), কালিয়াকৈর উপজেলা ভূমি অফিস নির্মাণে বাবর এসোসিয়েশনকে গত ৩০ জুন এক কোটি ৮৫ লাখ টাকা (ভাউচার নম্বর-৭২৪), গাজীপুর র্যাব ট্রেনিং স্কুলের সাপোর্ট সেন্টার নির্মাণে সাউথ বেঙ্গল কনস্ট্রাকশনকে গত ২৬ জুন ৫০ লাখ টাকা (ভাউচার নম্বর-৫৭৩), গাজীপুর র্যাব কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণে ঠিকাদার রাশেদুজ্জামান পিটারকে গত ২৭ জুন ১ কোটি ১৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা (ভাউচার নম্বর-৫৮৯), জেলা সার্কিট হাউজের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজের জন্য এম এম জেড ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে গত ২৯ জুন ৮৪ লাখ ২০ হাজার ২২০ টাকা (ভাউচার নম্বর-৭০৪) এবং গাজীপুর র্যাব কমপ্লেক্সের সিকিউরিটি লাইট স্থাপনের জন্য ফিলামেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্সকে গত ১৯ জুন ১ কোটি ১২ লাখ ৪৫ হাজার (ভাউচার নম্বর-৪৮৩) টাকা প্রদান করা হয়েছে।
এছাড়াও গাজীপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ অফিসের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য ফিলামেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্সকে গত ৩০ জুন ৫০ লাখ টাকা (ভাউচার নম্বর-৭২৩) প্রদান করা হয়েছে। একই পদ্ধতিতে গাজীপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ অফিসের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য এম আলী এন্টারপ্রাইজকে গত ২ জুন ৫০ লাখ টাকা (ভাউচার নম্বর-৪৩১), গাজীপুর র্যাব ট্রেনিং স্কুলের সীমানা প্রাচীর নির্মাণে মুক্তা কনস্ট্রাকশনকে গত ৭ জুন ৬০ লাখ টাকা (ভাউচার নম্বর-৪৩২), কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর স্কুল ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজের জন্য এম বি এল জে টি জেভি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে গত ২৯ জুন ২ কোটি ১ লাখ ৭২ হাজার ৯৪৭ টাকা (ভাউচার নম্বর-৬৯৬), কাপাসিয়া টিটিসি’র ডরমেটরি ভবন নির্মাণে তালহা ইন্টারন্যাশনালকে গত ৯ জুন ৫২ লাখ টাকা (ভাউচার নম্বর-৪৩৩), গাজীপুর পুলিশ লাইনের ব্যারাক নির্মাণে প্রবাল কনস্ট্রাকশনকে গত ২৯ জুন দুই কোটি টাকা (ভাউচার নম্বর-৬৬৮) এবং গত ২১ জুন গাজীপুর র্যাব ট্রেনিং স্কুলের সীমানা প্রাচীর নির্মাণে মুক্তা কনস্ট্রাকশনকে হস্ত রশিদের মাধ্যমে (ভাউচার নম্বর-৪৮৫) ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা অগ্রিম প্রদান করেছে গাজীপুর গণপূর্ত বিভাগ।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রকল্পগুলোর মধ্যে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বিভিন্ন নির্মাণ কাজে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম হয়েছে। এই নির্মাণ প্রকল্পের উপখাত একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজে গত ১০ মার্চ ৮২০টি পাইল ঢালাই ও ড্রাইভসহ অন্যান্য কাজের বিল বাবদ ৭ কোটি ২৭ লাখ ২৭ হাজার ২৭৩ টাকা (ভাউচার নম্বর-৩৫৯) পরিশোধ করা হয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, নভেম্বর মাস পর্যন্ত এই প্রকল্পে মাত্র অর্ধেক কাজ সম্পাদন হয়েছে।
একই কাজে মার্চ মাসে প্রদান করা বিলের কাজ শেষ করার আগেই পুনরায় গত ২৯ জুন হস্ত রশিদের মাধ্যমে (ভাউচার নম্বর-৬৯৭) ১০ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে; যার বিপরীতে অদ্যবধি কাজই শুরু হয়নি।
একই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বালক হোস্টেল নির্মাণের জন্য ৩২৭টি পাইল ঢালাই ও ড্রাইভসহ অন্যান্য কাজের বিল বাবদ গত ১৩ মে ৩ কোটি টাকা (ভাউচার নম্বর-৪০৯) প্রদান করা হয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, নভেম্বর মাস পর্যন্ত এই প্রকল্পে মাত্র অর্ধেক কাজ সম্পাদন হয়েছে। এই অর্থের বিপরীতে কাজ আদায় না করেই গত ২৫ জুন একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পুনরায় ৪ কোটি টাকা (ভাউচার নম্বর-৫৬০) বিল প্রদান করা হয়েছে; যার বিপরীতে অদ্যবধি কাজই শুরু হয়নি।
শুধু তাই নয়- একই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বালিকা হোস্টেল ভবন নির্মাণে ৪৩৭টি প্রি-কাস্ট পাইল ড্রাইভসহ অন্যান্য কাজের বিল বাবদ গত ৯ মার্চ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ৬ কোটি ৬ লাখ ৬ হাজার ৬০ টাকা (ভাউচার নম্বর-৩৫৮) পরিশোধ করা হলেও কাজ হয়েছে মাত্র ৪০ শতাংশ। কাজের অগ্রগতি না থাকলেও গত ২৫ জুন পুনরায় এক কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে যার বিপরীতে অদ্যবধি কোনও কাজই হয়নি।
এখানেই শেষ নয়- এই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ১২৫০ বর্গফুটের কোয়াটার নির্মাণে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে গত ৩০ জুন এক কোটি ৭১ লাখ ৪৪ হাজার ৮২৫ টাকা (ভাউচার নম্বর-৭২৯) প্রদান করলেও এখনও কাজই শুরু করতে পারেনি। অথচ অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এই প্রকল্পের সার্ভিস পাইল ঢালাইয়ের কাজ চলমান রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যমতে, শুধুমাত্র গত ২ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ২৮ দিনে ২৬টি হস্ত রশিদে নিয়মবহির্ভূতভাবে ৪৭ কোটি ৩৬ লাখ ১৫ হাজার ৩০৬ টাকা অগ্রিম পরিশোধ করা হয়েছে। অবশিষ্ট অর্থ বিভিন্ন সময়ে একই পদ্ধতিতে প্রদান করা হয়েছে। উল্লেখিত সবগুলো প্রকল্পের কাজেই একই পথ অনুসরণ করা হয়েছে। এসবের বিপরীতে ঠিকাদার বিল ভাউচার, কাজের রেকর্ড পরিমাপ বহিঃ গাজীপুর গণপূর্তের সংরক্ষণে নেই। বিষয়টি অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায়ও (অডিট) ধরা পড়েছে।
সূত্রটি আরও জানিয়েছে, গাজীপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনোয়ারুল আজিম ঠিকাদারদের কাছ থেকে নানা রকম সুবিধা নিয়ে কাজের দিকে না তাকিয়ে ঠিকাদারদের শুধু বিল দিয়েই গেছেন। তিনি ছাড়াও এই লুটপাটে গাজীপুর গণপূর্তের স্টাফ অফিসার এবং গণপূর্তের হিসাবরক্ষক মমতাজ আলা জাকিরসহ অনেকে জড়িত।
জানতে চাইলে গাজীপুর গণপূর্তের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনোয়ারুল আজিম বলেন, সবগুলো প্রকল্পের কাজই নিয়ম মেনে শেষ হয়েছে। কোনও অনিয়ম হয়নি। একটা কাজেরও অতিরিক্ত কোনও বিল দেওয়া হয়নি। অডিটের অনেক আগেই সবগুলো কাজ হয়ে গেছে। কোনও কাজই বাদ নাই।
মন্ত্রণালয় থেকে আসা চিঠি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কাজ সবই জুন মাসে শেষ হয়েছে। কোনও অনিয়ম হয়নি। দুই-একটা কাজ এমবিভুক্ত হয়নি। চলমান সব বিলই হস্ত রশিদে প্রদান করা হয়। কোনও বিল অগ্রিম পরিশোধ করা হয়নি। মন্ত্রণালয় যেহেতু কোয়ারি (অনুসন্ধান) শুরু করেছে। আমরা জবাব দিয়ে দিব। বদলির বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারি চাকরি করি। বদলি হতেই হয়। আমাকে সাধারণ বদলি করা হয়েছে।
একই প্রসঙ্গে গাজীপুর গণপূর্ত বিভাগের বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী স্বপন চাকমা বলেন, গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনোয়ারুল আজিমকে পাবনায় বদলি করা হয়েছে। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ২৭ অক্টোবর গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে ওই চিঠিটি এসেছে। চিঠির জবাব দিতে দেরি হচ্ছে। অনিয়মের জন্য তাকে বদলি করা হয়নি। বদলির অর্ডার অনেক আগেই হয়েছে।
প্রকল্পগুলোতে অনিয়ম হয়েছে কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, কাজ ছাড়া তো বিল প্রদানের কোনও সুযোগ নেই। হস্ত রশিদ আমাদের একটা প্রচলিত সিস্টেম। বিল সাবমিট হওয়ার পর পেমেন্ট দিতে হয়। অনেক সময় দেখা যায় বিল যতো হয়েছে, ততো পরিমাণ ফান্ড থাকে না। তখন আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে হস্ত রশিদের মাধ্যমে যতটুকু ফান্ড আছে তা প্রদান করি।
প্রকল্পের অগ্রগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৩৪টি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। ঠিকাদাররা কাজ করে, বিল নেয়। এভাবেই সব কাজ হয়। কাজ হয়নি কিন্তু বিল প্রদান করা হয়েছে এটি ঠিক না। বড় বিষয় হচ্ছে- ঠিকাদাররা অনেক সময় কাজ শেষ করেও বিল পায় না। আবার ফান্ডের অভাবে কাজের গতি কমে যায় বা কাজ বন্ধ হয়ে যায়। অডিটের কাজই তো অনিয়ম খোঁজা। নিয়মের ভেতরেও তো অনিয়ম হতে পারে। আমি এটির দায় এড়াতে পারি না। অডিটের দৃষ্টিতে যদি অনিয়ম হয়, তারও নিশ্চই জবাব আছে।
তিনি কাজ চলমান রয়েছে বললেও সরেজমিনে দেখা যায়, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ কাজে গত জুনে পরিশোধিত অর্থের বিপরীতে কোনও কাজ সম্পাদন হয়নি। আর হস্ত রশিদে বিল প্রদান প্রসঙ্গে তার বক্তব্যের ভিত্তি যাচাইয়ে দেখা যায়, চুক্তিপত্রের জিসিসি-৭৫ ক্লোজ অনুযায়ী, ঠিকাদারদের অগ্রিম বিল প্রদানের কোনও সুযোগ নেই।