তিন ফসলি জমি অধিগ্রহণ না করতে কৃষকদের মানববন্ধন



উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম , মিরসরাই (চট্টগ্রাম)
মানববন্ধন ও সাংবাদিক সম্মেলন। ছবি: বার্তা২৪.কম

মানববন্ধন ও সাংবাদিক সম্মেলন। ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে তিন ফসলি কৃষি জমি অধিগ্রহণ না করতে মানববন্ধন করেছে কৃষকরা।

মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) সকালে উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের জয়পুর পূর্ব জোয়ার মৌজার প্রায় ৩৭ একর জমির মালিক, বর্গাচাষি, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়রা অংশগ্রহণ করেন।

ভূমি অধিগ্রহণ প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ‘ফসলি জমি ধ্বংস করে বিদ্যুতায়ন, অশুভ চক্রান্ত রুখে দাঁড়াও জনগণ’; ‘বিদ্যুৎ নয় খাবার চাই, ফসলি জমির বিকল্প নাই’, ‘বাপ-দাদার তিন ফসলি জমি লুটে নিতে চায় কোন হারামী’- সহ বিভিন্ন বক্তব্য ব্যানার, ফেস্টুনে তুলে ধরে ফসলি জমিতে মানববন্ধন করে।

জানা গেছে, উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের জয়পুর পূর্ব জোয়ার মৌজায় ১নং সিটে তিন ফসলি কৃষি জমিতে বিদ্যুতের সাব স্টেশন স্থাপন করার জন্য অধিগ্রহণের নোটিশ জারি করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ বিভাগ। জমি অধিগ্রহণ না করার জন্য শুরু থেকে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে স্থানীয় কৃষক ও জমির মালিকরা। ভূমি অধিগ্রহণ প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে ভূমি অধিগ্রহণ না করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মিরসরাইয়ের সংসদ সদস্য, কৃষি মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগ নেতা স্বপন চৌধুরী, করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন, করেরহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান গিয়াস উদ্দিন জসিম, সাধারণ সম্পাদক শেখ সেলিম, ইউপি সদস্য শহিদুল্লাহ, ভূমি অধিগ্রহণ প্রতিরোধ কমিটির শোয়াইব মেম্বার, আক্তার হোসেন, আরবের রহমান, তাইফ উদ্দিন, সো. সরোয়ার, আবদুল্লাহ আল মামুন।

ভূমি অধিগ্রহণ প্রতিরোধ কমিটির দায়িত্বশীল মো. শোয়াইব মেম্বার বলেন, ‘জয়পুর পূর্ব জোয়ার মৌজার ১ নং সিটের ৩ ফসলি জমিতে বৈদ্যুতিক সাব স্টেশন স্থাপন করার জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করার জন্য নোটিশ জারি করা হয়েছে। অথচ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন কৃষি জমি নষ্ট করে কোন স্থাপনা করা যাবে না। কৃষি জমি রক্ষ করে উন্নয়ন কাজ করতে হবে। এখন বিদ্যুৎ বিভাগ করেরহাটে তিন ফসলি জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আমরা জীবন থাকতে ভূমি দিবো না।’

তিনি আরো বলেন, ‘করেরহাট ইউনিয়নের ছত্তরুয়া ও গেড়ামারা মৌজায় অনবাদী জমি, ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত জমি ও ফরেষ্ট রিজার্ভ ভূমি রয়েছে। সেখানে বিদ্যুতের সাব স্টেশন করলে কৃষি জমি রক্ষা পাবে পাশাপাশি আমরাও সরকারকে সহায়তা করবো।’

   

বাংলাদেশে ম্যালেরিয়ার সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে ‘বান্দরবান’



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, বান্দরবান
ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ ২৫ এপ্রিল বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস। দেশে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের ৯৫ শতাংশই পার্বত্য চট্টগ্রামে। বাংলাদেশ সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়া নির্মূলের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। তবে ম্যালেরিয়া রোগী বাড়ার প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি সরকারের লক্ষ্য পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তবে, পার্বত্য তিন জেলার মধ্যে বান্দরবানে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ ম্যালেরিয়া রোগী বান্দরবানে। বান্দরবানে ২০২৩ সালে এ রোগীর সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় কম হলেও এই সংখ্যা ২০২১ সালের তুলনায় বেশি।

যদি কোনো এলাকায় এক বছরে প্রতি হাজার মানুষের মধ্যে একজনের বেশি ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়, তবে তা উচ্চ ঝুঁকির এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়। এ হিসেবে পার্বত্য তিন জেলার মধ্যে বর্তমানে বান্দরবান সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। তার পরপরই অবস্থান রাঙ্গামাটির। খাগড়াছড়িতে আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলক কিছুটা কম হলেও ঝুঁকিতে রয়েছে ।

দেশের ১৩টি জেলা ম্যালেরিয়া প্রবণ। এর মধ্যে পার্বত্য দুই জেলা বান্দরবান ও রাঙামাটিতে ৯০ শতাংশ সংক্রমণ ঘটছে। যা ১০ বছর ধরে একই হারে চলছে।

সরকারের ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশে ১৬ হাজার ৫৬৭ জন ম্যালেরিয়া রোগী শনাক্ত হন। তার মধ্যে ৬০ দশমিক ৩৭ শতাংশ বান্দরবানের। ২৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ রাঙামাটি, ৭ দশমিক ৬১ শতাংশ কক্সবাজারে, ২ দশমিক ৫২ শতাংশ খাগড়াছড়িতে।

২০২২ সালে ১৮ হাজার ১৯৫ জনের ম্যালেরিয়া শনাক্ত হয়। তার মধ্যে বান্দরবানে ৭৫ দশমিক ৯ শতাংশ। রাঙামাটির ১৭ দশমিক ৭ শতাংশ আর কক্সবাজারে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ।

২০২১ সালে সারা দেশে ম্যালেরিয়া শনাক্ত হয় ৭ হাজার ২৯৪ জনের। তার মধ্যে বান্দরবানের ৭১ দশমিক ৭ শতাংশ। রাঙামাটির ২১ দশমিক ৩ শতাংশ। কক্সবাজারের ৪ দশমিক ৯ শতাংশ আর খাগড়াছড়িতে ১ দশমিক ৪ শতাংশ।

চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে এক হাজার ১৫৮ জন ম্যালেরিয়া রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রাঙামাটিতে সর্বোচ্চ ৫০৩ জন। বান্দরবানে ৪৬০ জন এবং কক্সবাজারে ১৩৮ জন। এ ছাড়া খাগড়াছড়িতে ৪০, চট্টগ্রামে ১৩, হবিগঞ্জে দুই এবং সিলেট ও নেত্রকোনায় একজন করে রোগী শনাক্ত হন। এ সময় কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে এ রোগে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের পার্বত্য জেলা এবং সীমান্ত এলাকার মোট ১৩টি জেলার ৭২টি উপজেলায় ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এর মধ্যে বান্দরবান, রাঙামাটি এবং খাগড়াছড়িতে ম্যালেরিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি। এ তিনটি জেলার মধ্যে আবার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বান্দরবান। বান্দরবানের লামা, আলীকদম ও থানছি দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।

ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ রয়েছে-এমন ১৩ জেলার মধ্যে ১২টি জেলার ৩৬ উপজেলার সঙ্গে ভারতের আন্তঃসীমান্ত রয়েছে। আর কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সঙ্গে প্রতিবেশী মিয়ানমারের আন্তঃসীমান্ত রয়েছে।

ইনক্রিমিনেশন অব ম্যালেরিয়া ভেক্টর মসকিউটোস ইন বাংলাদেশ: সিজনাল প্রিভিলেন্স অব অ্যানোফিলিস মসকিউটোস অ্যান্ড দেয়ার ডিস্ট্রিবিউশন ম্যাপস' শীর্ষক পিএইচডি গবেষণা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার।

তিনি তার গবেষণায় জানিয়েছেন, লক্ষ্যমাত্রার নির্ধারিত সময়ে ম্যালেরিয়া নির্মূল খুবই কঠিন কাজ। পার্বত্য অঞ্চলে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে কীটনাশক যুক্ত যে মশারি বিতরণ করা হয়, তাতে ডেলটামেট্রিন কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, বেশ কয়েক বছর ধরে এটি মশা প্রতিরোধ করতে পারছে না। কীটনাশক পরীক্ষা করলেও আমরা মশারি পরীক্ষা করিনি। কারণ, কীটনাশকই যেখানে কাজ করছে না, সেখানে মশারির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।

তিনি জানান, পার্বত্য অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হচ্ছেন-যারা বনে গাছ কাটেন, জুম বাগান রক্ষণাবেক্ষণ করেন এবং সীমান্তে চোরাচালানে জড়িত। তারা বাইরে প্রতিরোধ ব্যবস্থা ছাড়া কাজ ও ঘোরাঘুরি করেন।

তিনি আরো জানান, আমাদের দেশের সঙ্গে ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্ত রয়েছে। এই দুই দেশের সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষকে নিয়ে ম্যালেরিয়া নির্মূলে একযোগে কাজ করতে হবে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, পার্বত্য অঞ্চলের যেসব জায়গায় যাওয়া খুব কঠিন, যেসব এলাকার স্থানীয় মানুষদের প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। তাহলে পার্বত্য অঞ্চলের ম্যালেরিয়া ২০৩০ সালের মধ্যে নির্মূল করা সম্ভব।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও প্রধান গবেষক অধ্যাপক (ডা:) মো. আবুল ফয়েজ জানান, পরীক্ষামূলকভাবে লামা ও আলীকদম উপজেলায় ম্যালেরিয়ায় অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ১০০টি পাড়ার ১০ হাজার মানুষকে নির্বাচিত করে চার বছরে ধাপে ধাপে এ ম্যালেরিয়া টিকা ও ওষুধ প্রদান করা হবে। ম্যালেরিয়া নির্মূলের চলমান সেবার পাশাপাশি সবার জন্য ম্যালেরিয়ার টিকা এবং ওষুধ প্রয়োগ হতে পারে যুগোপযোগী পদক্ষেপ। সে লক্ষ্যে ম্যালেরিয়া নির্মূলের নতুন টিকার কার্যকারিতা নিয়ে একটি গবেষণা কার্যক্রমের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে লামা-আলীকদমে। এই গবেষণায় যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভাবিত ম্যালেরিয়ার টিকা ব্যবহার করা হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত এই টিকা ইতিমধ্যে ৭৭% উচ্চ কার্যক্ষমতা আছে বলে প্রমাণিত হয়েছে।

বাংলাদেশে মশাবাহিত রোগের মধ্যে অন্যতম হল ম্যালেরিয়া। স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণু ছড়ায়। বাংলাদেশে মোট ৩৬ প্রজাতির অ্যানোফিলিস মশার উপস্থিতি রয়েছে, এদের মধ্যে সাতটি প্রজাতি বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া রোগ ছড়ায়।

আফ্রিকায় ২০০১ সালের ২৫ এপ্রিল প্রথমবারের মতো ম্যালেরিয়া দিবস পালন করা হয়। ২০০৭ সালে ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলির ৬০তম অধিবেশনে বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবসের প্রস্তাবনা করা হয়। এরপর থেকে প্রতি বছর ২৫ এপ্রিল দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি উপলক্ষে সারাদেশে বিভিন্ন সচেতনতা মূলক কর্মসূচি পালন করা হয়য়।

;

রাজশাহীর বাড়ির কাছের নদী কেড়ে নিয়েছে ৯ প্রাণ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

তীব্র দাবদাহের মধ্যে নদীতে স্বস্তি খোঁজার মর্মান্তিক পরিণামে এপ্রিল মাসে রাজশাহীতে অন্তত ৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের অধিকাংশই শিশু ও কিশোর। দাবদাহের তীব্রতা থেকে স্বস্তি পেতে গিয়ে অনবধানবশত এই দুর্ঘটনাগুলি ঘটছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

তারা বলছেন, রাজশাহীর নদীপাড়ের এলাকায় শিশু ও কিশোরদের বিনোদনের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠেছে নদী। তবে এই নদী এখন তাদের জন্য বিপদসঙ্কুল হয়ে উঠেছে।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) একটি মর্মান্তিক ঘটনায় তিন কিশোর পানিতে ডুবে মারা যায়, যা এ মাসের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা। এতে স্থানীয় অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।

অনেকের মতে, নদীর তীরে যথেষ্ট নিরাপত্তার অভাব এবং সাঁতার শেখানোর উপযুক্ত ব্যবস্থা না থাকায় এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন ইতোমধ্যে নদী তীরে সতর্কতা সংকেত ও নিরাপত্তা বিধানের জন্য বাড়তি পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

অভিভাবকরা এখন আরো সচেতন হয়ে তাদের সন্তানদের নদীর কাছে একা যেতে দিচ্ছেন না। শিশুদের সাঁতার শেখানোর গুরুত্ব বুঝতে পারছেন তারা। তাদের মতে, একটি শিশুকে সাঁতার শেখানো তাকে বাঁচানোর একটি উপায়।

জানা গেছে, রাজশাহী অঞ্চলে চলতি মাসে পানিতে ডুবে প্রাণ গেছে ৯ জনের। এদের অধিকাংশই শিশু-কিশোর। সবশেষ, গত ২৩ এপ্রিল পানিতে ডুবে তিন কিশোরের মৃত্যু হয়। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে। এরা হলো- কাঁটাখালী বাখরাবাজ এলাকার রেন্টুর ছেলে যুবরাজ (১২), লিটনের ছেলে আরিফ (১৩) ও নুর ইসলামের ছেলে জামাল (১২)।

এর আগে ১৪ এপ্রিল রাজশাহীর বাঘায় বিয়ে বাড়িতে এসে পানিতে ডুবে মারা যায় জান্নাত খাতুন (৮) নামে এক শিশু। তবে এখনো ঝিলিক খাতুন (১২) নামে আরেক শিশু নিখোঁজ রয়েছে। তাকে উদ্ধার করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস।

১৯ এপ্রিল পদ্মানদীর মুর্শিদপুর এলাকার খেয়াহাটের ডুবে মারা যায়, উপজেলার খায়েরহাট গ্রামের সুজন আলীর ১০ বছরের ছেলে সিয়াম হোসেন সজিব। ২০ এপ্রিল বাঘা উপজেলায় পদ্মানদীতে নৌকায় করে গোসল করতে গিয়ে মারা যান আসাদ হোসেন (১৮) নামে এক তরুণ।

২১ এপ্রিল পবায় পদ্মানদীতে গোসল করতে নামেন বাপ্পি হোসেন (১৬) ও মনির হোসেন (২০) নামে দুই তরুণ। পরে ডুবে মারা যান তারাও।

রাজশাহী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা আবু সামা বলেন, রাজশাহীতে গত কয়েকদিন ধরে পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা বেড়েছে। আমরা ধারণা করছি, গরম থেকে পরিত্রাণ পেতে কিশোররা নদীতে গোসল করতে গিয়ে মারা যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, যারা মারা যাচ্ছেন, তাদের অনেকেই সাঁতার জানতেন না। আবার অনেকেই সাঁতার জানতেন। কিন্তু একজন ডুবে যাচ্ছে দেখে আরেকজন তাকে বাঁচাতে গিয়ে দুজনই ডুবে মারা যাচ্ছেন বলে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি।

শিশু-কিশোর যারা সাঁতার জানে না, তারা যাতে নদীতে গোসলে না যায়, সেদিকে নজর দিতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা।

তিনি জানান, এটি করা গেলে মৃত্যু অনেকটাই কমে আসবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২২’ প্রতিবেদন অনুসারে, পাঁচ বছরের কম বয়েসি শিশু মৃত্যুর ৭ শতাংশের বেশি ঘটে পানিতে ডুবে।

গণমাধ্যম উন্নয়ন ও যোগাযোগবিষয়ক বেসরকারি সংগঠন ‘সমষ্টি’র প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পানিতে ডুবে ৮শ ৮০টি মৃত্যুর ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে ৮৭ শতাংশ ঘটনায় ভুক্তভোগীর বয়স ছিল ৯ বছরের নিচে। এ হার ২০২২ সালের তুলনায় ৬ শতাংশ বেশি। মোট মৃত্যুর এক-তৃতীয়াংশের বেশি ঘটেছে, সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে।

রাজশাহীর স্থানীয় প্রশাসন ও সামাজিক সংগঠনগুলো এই বিষয়ে আরো সক্রিয় হতে চাইছে। তারা শিশুদের জন্য নিরাপদ সাঁতার শেখানোর ক্যাম্প চালু করার পরিকল্পনা করছে, যাতে তারা এই ধরনের পরিস্থিতিতে নিজেদের বাঁচাতে পারে।

বাংলাদেশ জাতীয় সাঁতার দলের সাবেক কোচ আলমগীর হোসেন বলেন, সাঁতার না জানার কারণে দেশে প্রতিবছরই বহু মানুষ মারা যায়। শিক্ষার পাশাপাশি শিশুদের সাঁতারও শেখাতে হবে। কোনো শিশু ডুবে মারা গেলে তার শিক্ষার কোনো দাম থাকবে না। জীবন বাঁচাতে তাই সাঁতার শেখাতে হবে। মানুষের মধ্যে আগ্রহ কম। এ জন্য অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। তাহলে এমন দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।

;

ব্রহ্মপুত্র নদে গোসল করতে পাঁচ বন্ধুর লাফ, প্রাণ গেল একজনের



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, ময়মনসিংহ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদে গোসল করতে পাঁচ বন্ধু একসাথে পানিতে লাফ দেয়। এ সময় পানিতে ডুবে মসিউর রহমান হুজ্জাত (১৪) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

নিহত হুজ্জাত সাদুয়া গ্রামের খলিলুর রহমান রুবেল মাস্টারের ছেলে। সে স্থানীয় রোস্তম আলী গোলন্দাজ উচ্চ বিদ্যালয় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা পৌর শহরের ব্রহ্মপুত্র নদের কলেজ ঘাট এলাকায় থেকে নিখোঁজ ঐ ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করেছে।

গফরগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহিনুজামান খান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।

পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, মসিউর রহমান হুজ্জাত পরিবারের লোকজনের অজান্তে দুপুরে বন্ধুদের সঙ্গে গোসল করতে যায়। গোসলের সময় ব্রহ্মপুত্রের নদের তীরের উপর থেকে একসাথে পাঁচ বন্ধু নিচে লাফ দেয়। লাফিয়ে পড়ার ভিডিও ধারণ করছিল সাথে থাকা অন্য বন্ধুরা। এক পর্যায়ে নদের পানিতে ডুবে নিখোঁজ হয় সে। বন্ধুদের ডাক চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসলে ততক্ষণে ডুবে যায় হুজ্জাত। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের বাহিনীর ডুবুরি দল এসে মরদেহ উদ্ধার করে।

গফরগাঁও ফায়ার সার্ভিস অফিসের স্টেশন অফিসার রাম প্রসাদ পাল জানান, ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল প্রায় দেড় ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে বিকেলে নিহত স্কুল ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

গফরগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহিনুজামান খান বলেন, পানিতে ডুবে স্কুল ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং পরিবারের পক্ষ থেকে বিনা ময়নাতদন্তে মরদেহ হস্তান্তরের আবেদন করলে মরদেহটি পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়।

;

তীব্র তাপদাহের ভোগান্তিতে নারী ও শিশুরা



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, নরসিংদী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

চলমান তীব্র তাপদাহে অসহনীয় ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষজন। এতে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন নারী, শিশু ও বয়স্করা। এই অবস্থায় সেবা নিতে হাসপাতালে দৌড়াচ্ছেন অসুস্থ্য হওয়া রোগীরা। অপরদিকে তাপদাহের ভোগান্তি এড়াতে নানা পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

দেশে চলমান তাপদাহ দিন যতই যাচ্ছে তাপদাহের মাত্রা ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে সাধারণ জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত ও কৃষিকাজে নেমে এসেছে স্থবিরতা। সব মিলিয়ে এক অসহনীয় পরিবেশ তৈরী হয়েছে। এই তাপদাহে নরসিংদীতে গলা ব্যথা, ঠান্ডা-জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে নানা শ্রেণী পেশার মানুষ। অসুস্থ্য হয়ে সরকারী হাসপাতালগুলোতে ভীড় জমাচ্ছেন তারা।

অসুস্থ্যদের মধ্যে সবথেকে বেশী ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন নারী, শিশু ও বয়স্করা। চিকিৎসকদের সেবা পেতে অনেকেই আবার ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে। এই অবস্থায় বিছানা না পেয়ে হাসপাতালের মেঝে ও বারান্দায় শুয়ে সেবা নিচ্ছেন রোগীরা। অপরদিকে চলমান তাপদাহে সীমিত সংখ্যাক জনবল দিয়ে হাসপাতালের অভ্যন্তরে ও বহি:বিভাগে রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।

নরসিংদী ১০০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের ত্বত্তাবধায়ক ডা: এ এন এম মিজানুর রহমান জানান, চলমান তাপদাহে ১০০আসন বিশিষ্ট হাসপাতালটিতে বর্তমানে রোগী রয়েছে ১৮০ জনের উপড়ে। আর শিশুদের জন্য মাত্র ১০টি আসনের বিপরিতে ৬০জন শিশু ভর্তি রয়েছে। আর এসব রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সাংবাদিকদের তিনি আরও বলেন, বর্তমান তাপদাহের পাশাপাশি ডেঙ্গুর আক্রমন বৃদ্ধি পেয়েছে। আর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ইতিমধ্যে একাধিক রোগী ভর্তি রয়েছে। তাই ডেঙ্গু থেকে সচেতনতার বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন এই চিকিৎসক।তাপদাহ চলাকালে জরুরী না হলে বাইরে না যাওয়া, বাইরের কাবার থেকে বিরত থাকা এবং বেশী করে তরল জাতীয় খাবার খাওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

এছাড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতার অংশ হিসেবে সকলকে সজাগ থাকার পরামর্শ দেন এবং ডেঙ্গুর লক্ষন দেখা দেয়ার সাথে সাথে সরকারী হাসপাতালে যাওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।

চলমান তাপদাহের ভোগান্তি ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে সকলকে ঔক্যবদ্ধ হয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

;