ফ্লাইওভার ও আন্ডারপাসের কাজ শেষ না হওয়ায় ভোগান্তি!
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চারলেনের কাজ শেষ হলেও মহাসড়কের কয়েকটি এলাকায় ফ্লাইওভার ও আন্ডারপাসের কাজ শেষ না হওয়ায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ফ্লাইওভার ও আন্ডারপাসের মূল কাজ চলমান থাকলেও এর অ্যাপ্রোচ অংশের কাজ শুরুই করেনি কোম্পানিগুলো। কাজের সময়সীমা বৃদ্ধি হলেও নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় হতাশ এই মহাসড়ক ব্যবহারকারীরা। সরেজমিনে মহাসড়কে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের টাঙ্গাইল শহরের প্রবেশপথ রাবনা বাইপাসে ফ্লাইওভারের কাজ চলছে। তবে মুল ফ্লাইওভারের কাজ এখনও বাকি রয়েছে অনেকাংশে। এছাড়া ফ্লাইওভারের যে দুইপাশের অ্যাপ্রোচ অংশ রয়েছে সেটির কাজ শুরুই করা হয়নি। অন্যদিকে মহাসড়কের তারুটিয়া অংশের ফ্লাইওভার, নাটিয়াপাড়ার আন্ডারপাস ও মির্জাপুরের গোড়াইতে ফ্লাইওভারের কাজ শেষ করা হয়নি। ফলে এতে প্রতিনিয়ত এসব জায়গায় ভোগান্তি পড়তে হচ্ছে চালক ও জনসাধারণকে। প্রতিদিনই মির্জাপুরের গোড়াইতে যানবাহনগুলোতে পড়তে হচ্ছে যানজটে। অন্যদিকে অধিকাংশ আন্ডারপাসের কাজ শেষ হয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মীর আক্তার লিমিটেড ও আব্দুল মোনেম লিমিটেড কোম্পানি দুটি নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ না করায় ভোগান্তি বাড়ছে।
এদিকে জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়কে চারলেন উন্নীতকরণ প্রকল্পের অধীনে নির্মিত মহাসড়কের ব্রিজ ও কালভার্টগুলো গত ২০১৮ সালের ১৪ আগস্ট ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়কে চারলেন উন্নীতকরণ প্রকল্পের আওতায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ব্রিজ ও কালভার্টগুলোর কাজ করছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর। এতে মহাসড়কের ৭০ কিলোমিটারের প্রতি কিলোমিটার সড়কের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫৮ কোটি টাকা। এরআগে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক চারলেনের উন্নীতকরণ প্রকল্পটি ২০১৩ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেক) সভায় অনুমোদিত হওয়ার পর এর কাজ শুরু করা হয় ২০১৬ সালে। মহাসড়কের এলেঙ্গা-টাঙ্গাইলের দরুন পর্যন্ত সড়ক, ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস, ব্রিজ, কালভার্টের কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডিয়েনকো লিমিটেড। একইভাবে টাঙ্গাইলের দরুন থেকে মির্জাপুরের জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মীর আখতার এবং মির্জাপুর থেকে গোড়াই-চন্দ্রা পর্যন্ত সড়ক উন্নয়নের কাজ করছে আব্দুল মোনেম লিমিটেড কোম্পানি। মহাসড়কের ১১টি আন্ডারপাস ও ৫টি ফ্লাইওভার করার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর গত বছরের জুন থেকে শুরু করে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত এগুলোর কাজ শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
মহাসড়কের টাঙ্গাইলের রাবনা বাইপাস ফ্লাইওভারে কর্মরত শ্রমিক রুবেল হোসেন বলেন, যেভাবে ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ চলছে তাতে এটির কাজ শেষ হতে আরো বছরখানেক লেগে যাবে। তবে করোনার কারণে কাজ বন্ধ থাকায় নির্মাণ কাজ দেরি হয়েছে বলে জানান তিনি।
রাবনা বাইপাস ফ্লাইওভারের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডিয়েনকো লিমিটেডের প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ফ্লাইওভারটি রি-টেন্ডার হয়েছে। এটির নির্মাণে আগামী বছরের জুন মাস পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। সময়সীমার আগেই ফ্লাইওভারটির নির্মাণ কাজসহ এটির অ্যাপ্রোচ অংশের কাজও শেষ হবে। তবে অন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ডিয়েনকো লিমিটেড মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ অনেকাংশ শেষ করেছে।
মির্জাপুরের গোড়াই এর ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ করছে আব্দুল মোনেম লিমিটেড। কোম্পানিটির প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম বার্তা২৪.কম’কে বলেন, গোড়াইয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণের পাশাপাশি এর দুইপাশের চারলেনের কাজ চলমান রয়েছে। যে সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে তার আগেই নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে।
বুয়েটের এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সহযোগী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ বার্তা২৪.কম’কে বলেন, মহাসড়কের কাজে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে একদিকে যেমন ব্যয় বাড়ে অন্যদিকে মানুষের জীবন মানের সমস্যার সৃষ্টি হয়। এতে মানুষের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ক্ষতি, পরিবহনের ক্ষতি হয়। এছাড়াও মহাসড়কের উন্নয়ন কাজের জন্য সেখানে ধুলাবালির সৃষ্টি হয়, এতে মানুষের শ্বাসকষ্টের মতো রোগ হতে পারে।
মহাসড়কের চারলেন প্রকল্পের ব্যবস্থাপক অমিত দেবনাথ বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে মহাসড়কের নাটিয়াপাড়ার আন্ডারপাসটির কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। নতুন করে ভূমি অধিগ্রহণ শুরু হয়েছে। এছাড়া মহাসড়কে ফ্লাইওভার ও আন্ডারপাস যুক্ত হওয়ায় দ্বিতীয়বার রিটেন্ডার হয়। এটির মেয়াদ বাড়িয়ে আগামী ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। কাজ যেভাবে চলছে তাতে সময়সীমার আগেই নির্মাণ কাজ শেষ হবে।