টানা ৫ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে হার মানলেন হিরা
শরীরের এক-তৃতীয়াংশ আগুনে দগ্ধ হয়ে গৃহবধূ হিরা বেগম (৩৩) খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে টানা পাঁচদিন অসহনীয় যন্ত্রণায় ছটফট করেছেন। হৃদয়বানদের দেয়া আর্থিক সহায়তায় উন্নত চিকিৎসার জন্যে গত রাতে ঢাকায় নেয়া হয়েছিল তাকে। ঢাকায় পৌঁছেই জীবন যুদ্ধে হেরে যান হিরা।
বুধবার (২ ডিসেম্বর) ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রবেশকালে তার জীবনপ্রদীপ নিভে যায়।
ঘটনাসূত্রে জানা যায়, কথিত স্বামী বিল্লাল শেখ পাশ্ববর্তী দেশের পতিতালয়ে বিক্রির প্রস্তাব দেয় হিরা বেগমকে। এতে রাজী না হওয়ায় পেট্রোল ঢেলে শরীরে আগুন দেয় পাষণ্ড বিল্লাল শেখ। টানা ৫ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে বুধবার সকালে হেরে যান হিরা। তিনি যশোরের অভয়নগর থানার মঠপাড়া এলাকার মোঃ খোকন সরদারের মেয়ে।
খুুলনার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন খুলনা ব্লাড ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা সালেহউদ্দিন সবুজের প্রচেষ্টায় ‘‘আমাদের খুলনা’’ ফেসবুক গ্রুপে লাইভের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে উন্নত চিকিৎসার জন্যে মঙ্গলবার রাতে ঢামেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছিল হিরাকে। বুধবার ভোরে ঢামেক হাসপাতালে নামানো হলে তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
অগিদগ্ধ হিরা বেগমের মা মাজিদা বেগম জানিয়েছেন, যশোরের অভয়নগরের শোভনারা এলাকার আঃ রশিদের ছেলে কবির শেখের সাথে পারিবারের সাধ্যমতো আয়োজনে বিয়ে হয়েছিল তাদের একমাত্র মেয়ে হিরা বেগমের। মুদি দোকানী কবির শেখের নতুন সংসার বেশ ভালোই চলছিল সুখে-শান্তিতে। এরমধ্যে বাদসাধে বাদামওয়ালা জাকির হোসেন। প্রথম স্বামী কবির শেখের সংসার ছেড়ে জাকির হোসেনের হাত ধরে নতুন করে সংসার সাজায় হিরা বেগম। এতে প্রচণ্ড কষ্ট পেয়ে পিতা-মাতা ও ভাই হিরা বেগমের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। মাস ছয়েক পর অভয়নগরে শিহড়ী এলাকার আক্কাস শেখের ছেলে বিল্লাল শেখের সাথে পরিচয় হয় হিরার। বিল্লাল মোটা অংকের অর্থের লোভ দিয়ে তাকে ভারতে নিতে চায়। কিন্তু কি কাজ করতে হবে সেটা জানতে চায় হিরা বেগম। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রায় মারপিট করতো বিল্লাল শেখ।
একপর্যায়ে ভারতের পতিতালয়ে হিরা বেগমকে বিক্রি করার পরিকল্পনা করে বিল্লাল শেখ। এ পরিকল্পনা গোপনে জেনে যায় হিরা। ফলে ভারতে যেতে রাজি হয়নি সে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হিরা বেগমের শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় বিল্লাল শেখ। গত ২৬ নভেম্বরের এঘটনার পর হিরা বেগমের মা মাজিদা বেগমকে মোবাইলে আগুনে পুড়ে যাওয়ার ঘটনাটি জানায় প্রতিবেশীরা। প্রথমে যাবে না বলে মুখ ঘুরিয়ে রাখলেও পরে একমাত্র মেয়েকে সেখান থেকে উদ্ধার করে প্রথমে যশোরের হাসপাতালে পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করা হয়।
খুমেক হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, হিরা বেগমের শরীরের এক-তৃতীয়াংশ দগ্ধ হয়েছে। শ্বাসনালীসহ শরীরের ৬৫ শতাংশ গুরুত্বপূর্ণ অংশ অকেজোর পথে। উন্নত চিকিৎসার জন্যে প্রথমেই তাকে ঢামেক হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল।
মৃত হিরা বেগমের ভাই ইয়াছিন সরদার বলেন, আজ (বুধবার) ভোর পৌঁনে ৫টার দিকে ঢামেক হাসপাতালে ঢোকানোর সময় হিরার মৃত্যু হয়েছে। পরে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে ডাক্তার মৃত বলে নিশ্চিত করে। আমার মা সাথেই আছেন, কিন্তু তিনি এখনো জানেন না যে হিরা আর নেই। তিনি জানেন, ঢামেক হাসপাতালে বেড নেই তাই খুমেক হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে। আসলে বাড়ী নিয়ে যাচ্ছি, দাফন করবো। আরকিই বা করার আছে?
তিনি আরও বলেন, আগুনে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় মঙ্গলবার (০১ ডিসেম্বর) অভয়নগর থানায় বিল্লাল শেখ, তার পিতা আক্কাস শেখ ও বিল্লালের মাকে আসামি করে মামলা করেছি।
যশোরের অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, আগুনে পোড়ানোর জন্য গতকাল মামলা রেকর্ড হয়েছে। মামলাটি এখন হত্যা মামলা হিসেবে গণ্য হবে। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।