করোনা চিকিৎসায় আশা দেখাচ্ছে আইভারমেকটিন
করোনা টিকাকরোনা ভাইরাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে আশা জাগিয়েছে আইভারমেকটিন। এটি একটি এন্টি-প্যারাসাইটিক ওষুধ। বলা হয়েছে, কেউ করোনা সংক্রমিত হওয়ার প্রথম ৫ দিনের মধ্যে এই ওষুধটি সেবন করলে তার সংক্রমণের মাত্রা কমে যায় উল্লেখযোগ্যভাবে। এমন তথ্য পাওয়া গেছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ আইসিডিডিআর,বি’র গবেষণায়। এযাবতকালের মধ্যে এই ওষুধটির প্রথম ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার প্রশংসা করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, এই ওষুধটি চিকিৎসকদের জন্য অনেক সহায়ক হতে পারে। তারা আরো বলেছেন, কোভিড-১৯ চিকিৎসায় এই ওষুধটির কার্যকারিতা সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে আরো বড় পরিসরে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করতে হবে। তবে কোনো চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই ওষুধটি সেবন না করতে সবাইকে পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
ঢাকায় আজ এক অনুষ্ঠানে জানানো হয় এই গবেষণায় সমর্থন দিয়েছে ব্রেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।
সোমবার রাজধানীর এক হোটেলে আইসিডিডিআর,বি আয়োজিত এক সেমিনারে হাসপাতালে ভর্তি নিশ্চিতভাবে মৃদু কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় আইভারমেকটিন অথবা আইভারমেকটিনের সাথে অ্যান্টিবায়োটিক ডক্সিাইক্লিন ব্যবহারের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা বিষয়ে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়।
এতে আরও বলা হয়, আইসিডিডিআর,বি এই র্যান্ডোমাইজড, ডাবল-ব্লাইন্ড, প্লাসিবো-কন্ট্রোলড ট্রায়াল যা একটি দৈবচয়নভিত্তিক গবেষণা যেখানে প্রয়োগকৃত ওষুধ বিষয়ে পরীক্ষক ও অংশগ্রহণকারীর কোনো সুনির্দিষ্ট ধারণা থাকে না এবং ওষুধের পরিবর্তে ওষুধ সদৃশ বস্তু ব্যবহার করা হয়। এ রকম একটি গবেষণার আওতায় ঢাকার তিনটি হাসপাতালে ভর্তি থাকা ৬৮ জন কোভিড-১৯ রোগীর মধ্যে ২২ জনকে শুধুমাত্র মুখে খাওয়ার আইভারমেকটিন (১২ মিলিগ্রাম, দিনে একবার, ৫ দিন), ২৩ জনকে এক ডোজের আইভারমেকটিনের (১২ মিলিগ্রাম) সাথে ডক্সিসাইক্লিন (২০০ মিলিগ্রাম ডক্সিসাইক্লিন প্রথম দিন এবং পরবর্তীকালে ১০০ মিলিগ্রাম দিনে দুইবার, ৪ দিন) এবং ২৩ জনকে প্লাসিবো (ওষুধ সদৃশ্য বস্তু) দিয়ে চিকিৎসার নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা তুলনা করে দেখেছে। রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অংশগ্রহণে গবেষণাটি সম্পন্ন হয়।
গবেষণায় দেখা যায়, ১৪ দিনের মাথায় ৫ দিন ধরে শুধুমাত্র আইভারমেকটিন পাওয়া রোগীদের ৭৭ শতাংশ রোগীর সার্স-কোভ-২-এর ক্লিয়ারেন্স হয়েছে, অর্থাৎ আরটি-পিসিআর টেস্টে তারা কোভিড-১৯-মুক্ত বলে প্রমাণিত হয়েছেন। অন্যদিকে, আইভারমেকটিন ও ডক্সিসাইক্লিন পাওয়া ৬১ শতাংশ এবং প্লাসিবো পাওয়া ৩৯ শতাংশ রোগীর ভাইরাল ক্লিয়ারেন্স দেখা যায়। তৃতীয় দিনে শুধু আইভারমেকটিন প্রাপ্ত পাওয়া দলে ১৮ শতাংশ রোগীর ভাইরাল ক্লিয়ারেন্স হয়েছে। অন্যদিকে, আইভারমেকটিন ও ডক্সিসাইক্লিন পাওয়া ৩ শতাংশ এবং প্লাসিবো দলে ৩ শতাংশ রোগীর ভাইরাল ক্লিয়ারেন্স হতে দেখা যায়, এবং সপ্তম দিনে এটি ছিল যথাক্রমে ৫০ শতাংশ, ৩০ শতাংশ ও ১৩ শতাংশ।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, আইভারমেকটিন ও ডক্সিসাইক্লিন এবং প্লাসিবোর চিকিৎসার তুলনায় ৫ দিনের আইভারমেকটিন্ন চিকিৎসায় রোগীর ক্লিনিক্যাল অবস্থার উন্নতিও ছিল সম্ভাবনাময়; যেখানে রক্তের বিভিন্ন বায়োমার্কারের উন্নতির মাধ্যমে নির্দেশিত সংক্রমণের তীব্রতার মাত্রা কমার লক্ষণ দেখা যায়। শুরু থেকে ৭ দিনের মাথায় শুধুমাত্র ৫ দিন আইভারমেকটিন প্রাপ্ত দলে অন্য দুটি দলের তুলনায় সি-রিঅ্যাক্টিভ প্রোটিন (সিআরপি) ও ল্যাকটেইট ডিহাইড্রোজিনেস (এলডিএইচ) এবং ফেরিটিন লক্ষণীয়ভাবে কমতে দেখা যায়।
মৃদু কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে আইভারমেকটিনের কার্যকারিতা যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক এবং এর ব্যবহার নিরাপদ বলে গবেষণা প্রতীয়মান হয়। এই গবেষণার ফলাফলের ওপর একটি আর্টিক্যাল ডিসেম্বরের ২ তারিখে ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ইনফেকশাস ডিজিজেসে (আইজেআইডি) প্রকাশ করা হয়েছে বলেও জানায় আইসিডিডিআর, বি।
সৌজন্যে: মানব জমিন