প্রমত্তা পদ্মার বুকে ‘স্বপ্ন জয়ে আখ্যান’



মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
পদ্মা সেতু/ছবি: স্টার মেইল

পদ্মা সেতু/ছবি: স্টার মেইল

  • Font increase
  • Font Decrease

পদ্মা সেতুতে ১২ ও ১৩ নম্বর পিয়ার বা খুঁটির ওপর বসানো হলো ৪১ তম স্প্যান। বহুল কাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের পূর্ণাঙ্গ অবয়বে মাথা তুলে দাঁড়ালো। আর এর সঙ্গে সঙ্গে প্রমত্তা পদ্মার বুকে বিজয়ের মাসে লেখা হয়ে গেলো আরেকটি ‘ঐতিহাসিক জয়ের আখ্যান’।

দুপুর ১২টা ২মিনিট, ১০ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার; দিনটাকে ঐতিহাসিক না বলে পারা যাচ্ছে না। পদ্মার ওপর এই জয়ের আখ্যান লেখা শুরু হয়েছিল ২০১২ সালের ১০ জুলাই। বিশ্ব ব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এদিন ‘কার কাছে হাত পেয়ে সহায়তা নয়, নিজস্ব অর্থায়নে’ পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরপর কত সমালোচনা, গুজব, বাধা বিপত্তি, সর্বগ্রাসী পদ্মাকে বাগে আনার সাফল্যসহ মহাকাব্য রচনা করে আজকের এই সাফল্যের দিনটি এলো।

বিশ্ব ব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এদিন ‘কার কাছে হাত পেয়ে সহায়তা নয়, নিজস্ব অর্থাযনে’ পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন

পদ্মা সেতুতে প্রথম স্প্যান বসানো শুরু হয় ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। তিন বছরে বসলো ৪১টি স্প্যান। সবশেষ ৪১ তম স্প্যানটি বসানোকে ঘিরে পদ্মা পাড়ে আজ ছিলো উচ্ছ্বাসের আমেজ। উচ্ছ্বাস তো হবে, তীরবর্তী এসব মানুষের কেউ কেউ বছরের পর বছর পদ্মার কড়ালগ্রাসে হারিয়েছেন সর্বস্ব। আজ তারাই দেখছেন উত্তাল পদ্মাকে হারিয়ে স্থাপন হয়েছে ‘এক জয়ের নিশান’।

তবে পদ্মার পাড়ের মানুষের এ উচ্ছ্বাস শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর। ওইদিন নির্মাণে কাজের উদ্বোধনের পর থেকেই সেতুর নির্মাণ কাজ নিয়ে আগ্রহ উত্তেজনা ছিল মানুষের মধ্যে। সেই থেকে সেতুকে ঘিরে স্বপ্ন বুনছে পদ্মার পাড়সহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। তো আজকের দিনটা তাদের কাছে শুধু ঐতিহাসিক না, নানা দিক থেকে গুরত্বপূর্ণও বটে!

পদ্মা সেতুতে প্রথম স্প্যান বসানো শুরু হয় ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর।

তবে এই সাফল্যের কর্তৃত্ব যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের উপর। প্রধানমন্ত্রীর এই দৃঢ় অঙ্গীকারের ফলে নানা সমালোচনা ও দুর্গম পথ অতিক্রম করে আজ বিশাল কর্মযজ্ঞের শেষ প্রান্তে বাংলাদেশ। জয় করেছেন দুর্নীতির অপবাদ ঘুচিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ভৌগলিক বিভেদ।

‘পদ্মা সেতু আমাগো গর্বের সেতু। সরকার বিরাট কাম ঘটাইছে। ভাবা যায়না সেতু বাস্তব হচ্ছে। আমরা ১৫ বছর ধরে মাওয়া ঘাটে ফল বিক্রি করি। সেতু হলে হয়ত এখানে থাকতে পারব না। কিন্তু পদ্মা সেতু যে দ্যাশের অহংকার। কত মানুষের উপকার হবে। আমি একটা করে খাওয়ার ধান্দা ঠিক করে নিবোনে। সেতু হওয়াতে বলে বোঝাতে পারবনা কতটা খুশি।’

গোটা দুনিয়াকে জানান দিলো-১৬ কোটি মানুষের দেশটি শুধু স্বপ্ন দেখেই না, মাথা উঁচু করে সেই পূরণ করতেও পারে

পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের সরজমিনে রিপোর্ট করতে গিয়ে প্রতিবেদকের কাছে এভাবে নিজের ভাব প্রকাশ করলেন মাওয়া ঘাটের ফল বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন। আজকে হয়ত আনোয়ার হোসেনের মতো অনেকের দূর থেকে বিশাল পদ্মার বুকে দুই পার জুড়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে গর্বে বুকে ছাতিটা বড় হচ্ছে। আচ্ছা এই স্বপ্ন জয় কি শুধুই গর্বের, নাকি দীর্ঘ যাত্রার এই গল্পটা বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের মাথা আরেকবার উঁচু করলো। গোটা দুনিয়াকে জানান দিলো-১৬ কোটি মানুষের দেশটি শুধু স্বপ্ন দেখেই না, মাথা উঁচু করে সেই পূরণ করতেও পারে।   

পদ্মা সেতুতে স্বাধীনতার সূর্বণ জয়ন্তীতে যান চলাচল

বর্ষায় প্রবল ঢেউয়ে উত্তাল পদ্মা, গ্রীষ্মে কাল বৈশাখী ঝড়ের চোখ রাঙানি আর শীতে ঘুন কুয়াশা- এর প্রভাবে ফেরি চলাচল বিঘ্ন-বন্ধ; পদ্মা পাড়ি দিতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের এসব নিত্য সঙ্গী। উফ! স্বপ্ন সেতু তো হয়েই গেল! বাকি আনুসাঙ্গিক কাজ, অপেক্ষা আর মাত্র এক বছর। সরকার ঘোষণা দিয়েছে ২০২১ সালের স্বাধীনতার সূর্বণ জয়ন্তীতে পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে যান চলাচল শুরু হবে।    

২০১৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটির ওপর প্রথম স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। আজকে ৪১ তম স্প্যান বসানোর মাধ্যমে মিলন ঘটেছে সেতুর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্ত আর শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের। এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমের ২৯ জেলার সঙ্গে ঢাকার সহজ যোগাযোগের পথ উন্মুক্ত হচ্ছে। আর পদ্মার পাড় ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ এখন ‘ভৌগোলিক বিভেদ’ ঘুচানোর অপেক্ষায় প্রহর গুনবে।

সরকার ঘোষণা দিয়েছে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে স্বাধীনতার সূর্বণ জয়ন্তীতে পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে যান চলাচল শুরু হবে

দ্বিতলবিশিষ্ট পদ্মা সেতুতে এসব স্প্যান বসছে ৪২টি পিয়ার বা খুঁটির ওপর। স্প্যানের ভেতর দিয়ে চলবে ট্রেন আর ওপর দিয়ে চলবে যানবাহন। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) সমীক্ষায় জানানো হয়, পদ্মা সেতু দিয়ে চলাচল করবে প্রায় ২৪ হাজার যানবাহন।

এরইমধ্যে পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে উন্নয়নের নানা উদ্যোগ চলছে। সেতু এলাকা ও আশপাশে এরই মধ্যে কলকারখানা স্থাপনের উদ্যোগ চোখে পড়ছে। দেশের অর্থনীতিতেও এই সেতুর প্রভাব হবে উল্লেখযোগ্য। দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মানুষের জীবনযাত্রার মানও বাড়াবে বলে ধারণা অর্থনীতিবিদদের।

মূল সেতুর বাস্তব কাজের অগ্রগিত ৯১ শতাংশ, নদীশাসন কাজের ৭৫.৫০ শতাংশ, সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এলাকার কাজের শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮২.৫০ শতাংশ। রেল ও গাড়ি চলাচলের রাস্তা নির্মাণের অংশ হিসেবে পৃথকভাবে স্লাব বসানোর কাজ জোরগতিতে এগিয়ে চলছে। তাছাড়া সংযোগ সড়কের কাজ শেষ হয়েছে অনেক আগেই।

মূল সেতুর বাস্তব কাজের অগ্রগিত ৯১ শতাংশ, নদীশাসন কাজের ৭৫.৫০ শতাংশ, সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এলাকার কাজের শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে

পদ্মা সেতু প্রকল্পে উভয় তীরে সংযোগ সড়ক ১৪ কিলোমিটার। নদীশাসনের এলাকা ১২ কিলোমিটার। পদ্মা সেতুতে বসবে দুই হাজার ৯১৭টি সড়ক স্লাব। এরই মধ্যে বসানো হয়েছে এক হাজার ২৮৫টি স্লাব। মাওয়া ও জাজিরার সংযোগ সেতুতে বসাতে হবে ৪৮৪টি সুপারগার্ডার। এর মধ্যে বসানো হয়েছে ৩১০টি। রে ল সড়কের জন্য আলাদা স্লাব বসানো হচ্ছে।

মূল সেতুর দৈর্ঘ্য হয় ৬.১৫ কিলোমিটার। দুই পারে আরো ৩.১৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়কসহ সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ৯.৩০ কিলোমিটার। চার লেনের সেতুর প্রস্থ ৭২ ফুট। সেতুর মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে যানবাহন সেতুতে ওঠার জন্য এবং সেতু থেকে নামার জন্য দুই দিকে ভাগ করা হয়েছে সংযোগ সড়ক। এটি মূলত ভায়াডাক্ট বা ডাঙায় সেতুর অংশ। দুই প্রান্ত মিলিয়ে সেতুর এই অংশের দৈর্ঘ্য ৩.১৫ কিলোমিটার।

পদ্মা সেতুর নকশা করেছে আমেরিকান মাল্টিন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম এইসিওএম নামের একটি প্রতিষ্ঠান

পদ্ম সেতু বহুমুখী প্রকল্প

পদ্মা সেতুর নকশা করেছে আমেরিকান মাল্টিন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম এইসিওএম নামের একটি প্রতিষ্ঠান। নির্মাণকাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কম্পানি (সিএমবিইসি)। নদীশাসনের কাজ করছে চীনের সিনো হাইড্রো করপোরেশন। সেতু ও নদীশাসনের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রয়েছে কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে। মাওয়া ও জাজিরায় পদ্মার উভয় তীরে সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজ যৌথভাবে করছে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান আবদুল মোনেম লিমিটেড ও মালয়েশিয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এইচসিএম। সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এলাকার পরামর্শক হিসেবে রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কার্স অর্গানাইজেশন।

পদ্মা সেতুর সংশোধন করে ধরা হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে এসে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয় ৩০ হাজার ১৯৩.৩৯ কোটি টাকা। গত ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পে মোট খরচ হয়েছে ২৪ হাজার ১১৫.০২ কোটি টাকা। ব্যয় আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু: বিজয়ের মাসে আরেক বিজয়

পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান বসানোর কর্মযজ্ঞ চলছে

পদ্মা সেতুর ৪১টি স্প্যানের আদ্যোপান্ত

প্রমত্তা পদ্মার বুকে ‘স্বপ্ন জয়ে আখ্যান’

হয়ে গেলো পদ্মা সেতু!

   

তীব্র তাপপ্রবাহ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আরও ৭ দিন বন্ধের দাবি



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র রমজান, ঈদুল ফিতরসহ বেশ কয়েকটি ছুটির সমন্বয়ে টানা ২৬ দিন ছুটি কাটিয়ে আগামী রোববার (২১ এপ্রিল) খুলছে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে এরই মধ্যে দেশের তাপমাত্রা অসহ্য অবস্থায় পৌঁছানোয় কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি আরও ৭ দিন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে অভিভাবক ঐক্য ফোরাম।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সংগঠনের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মো. জিয়াউল কবির দুলু সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়।

এতে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চলে হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। মানুষকে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হতে নিষেধ করছে প্রশাসন। এর মধ্যে স্কুল কলেজ খুললে অনেক শিশু অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। তাই দেশের সব স্কুল-কলেজ-মাদরাসা আগামী ৭ দিনের জন্য শ্রেণি শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখার দাবি জানাচ্ছি।

প্রসঙ্গত, এ বছর শিখন ঘাটতি পূরণে মাধ্যমিকে ১৫ দিন ছুটি কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। রমজানের শুরুতে প্রায় দুই সপ্তাহ ক্লাস হয়েছে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। অন্যদিকে, রমজানের প্রথম ১০ দিন ক্লাস চালু ছিল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। একইভাবে সব কলেজ ও মাদরাসায়ও ছুটি কমিয়ে রমজানের শুরুর দিকে প্রায় দুই সপ্তাহ ক্লাস হয়। ছুটি শেষে রোববার থেকে পুরোদমে চালু হচ্ছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

 

;

বায়ুদূষণের শীর্ষে দিল্লি, ঢাকার বাতাসে নেই স্বস্তির খবর



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্বের দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় দশম অবস্থানে রয়েছে ঢাকা। কয়েক দিনের তীব্র গরম আর শুষ্ক আবহাওয়ায় ঢাকার বাতাস আবারও অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠেছে।

শনিবার (২০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আন্তর্জাতিক বায়ুমান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী, ১২১ স্কোর নিয়ে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় দশম অবস্থানে রয়েছে মেগাসিটি ঢাকা। আজ ঢাকার বাতাস সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত। গতকাল শুক্রবারও ঢাকার বাতাস সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর ছিল।

এদিকে আন্তর্জাতিক বায়ুমান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী, বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় ১৭৮ স্কোর নিয়ে শীর্ষে রয়েছে ভারতের দিল্লি শহর। এ ছাড়া ১৭৩ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে থাইল্যান্ডের চিয়াং মাই, ১৬৩ স্কোর নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা, এরপর নেপালের কাঠমান্ডু ১৬২ স্কোর নিয়ে আছে চতুর্থ স্থানে। ১৫৮ স্কোর নিয়ে পঞ্চম স্থানে আছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে দুবাই শহর।

একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়; আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে তাকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু বলে মনে করা হয়।

 

;

শসার দাম কমে যাওয়ায় হতাশায় মানিকগঞ্জের কৃষকেরা



খন্দকার সুজন হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, মানিকগঞ্জ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার কৃষি জমিগুলো এখন সবুজ সমারোহে ভরপুর। ধানের পাশাপাশি সবজি চাষাবাদে এখন ব্যস্ত কৃষক। জমিতে বপন করা প্রতিটি শসা গাছের ডগায় ডগায় ঝুলছে ছোট বড় শসা। ২/১ দিন পর পর জমি থেকে শসা সংগ্রহ করছে সবজি চাষিরা।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ফলনও হয়েছে আশানুরূপ। জমিতে বপন করা শসা গাছের যত্ন নিতে ভর দুপুরেও শসা ক্ষেতে ব্যস্ত কৃষকেরা। জমিতে বপন করা গাছের ফলন স্বাভাবিক রাখতে নিয়মিতভাবে আগাছা পরিষ্কার করতে হয়। এর পাশাপাশি কীটনাশকসহ ভিটামিন প্রয়োগে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।


আশানুরূপ ফলনের পরও বাজারদর নিয়ে হতাশায় জেলার সবজি চাষিরা। কয়েকদিন আগেও প্রায় ১০০ টাকার কাছাকাছি ছিল প্রতি কেজি শসার দাম। তবে সপ্তাহ দু’য়েক সময় গড়ানোর আগেই শসার দাম নেমে এসেছে ৫০ টাকার নিচে। দ্রুত গতিতে শসার দাম কমে যাওয়ায় হতাশায় মানিকগঞ্জের সবজি চাষিরা।

রাজধানীর সঙ্গে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, অনুকূল আবহাওয়া আর বাম্পার ফলনের কারণে দিনকে দিন মানিকগঞ্জে বেড়ে চলেছে শসাসহ নানা প্রকারের সবজির চাষাবাদ। তবে সার, কীটনাশক, বীজসহ শ্রমিকের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সবজির দাম বাড়েনি বলে অভিযোগ সবজি চাষিদের।

মানিকগঞ্জের সাতটি উপজেলাতেই কম-বেশি আবাদ হয় সবজির। তবে জেলার সাটুরিয়া, সিংগাইর এবং মানিকগঞ্জ সদর উপজেলাতে সবজি, বিশেষ করে শসার আবাদ হয়েছে বেশি এলাকায়। প্রথম দিকে শসার দাম বেশি হলেও আগামীর দিনগুলোতে শসার দর-দাম নিয়ে চিন্তিত কৃষকেরা।


মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার সাহেবপাড়া এলাকার সবজি চাষি মো. নয়া মিয়া বলেন, এক বিঘা জমিতে শসা আবাদের জন্য জমি তৈরি, বীজ বপন, সার, কীটনাশক ও শ্রমিকসহ অন্যান্য ব্যয় মিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা।

কয়েকদিন আগেও প্রতি কেজি শসা পাইকারি হিসেবে ৮৫ টাকা কেজি বিক্রি হলেও এখন প্রতি কেজি শসা পাইকারি বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২৮ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে। বাজারদর এই গতিতে কমতে থাকলে শসা চাষে নিশ্চিত লোকসান গুনতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আনোয়ার হোসেন নামের আরেক শসা চাষি বলেন, যারা আগাম শসার আবাদ করেছে তারা দামে শসা বিক্রি করতে পেরেছিল। এখনকার বাজারদর যা আছে তাতে কোনোরকমে চালানো যাবে। কিন্তু দরপতন আরও হলে লোকসান গুনতে হবে বলে জানান তিনি।

মোস্তফা হোসেন নামের এক বৃদ্ধ সবজি চাষি বলেন, বাজারে গেলে সবজির দাম হাতের নাগালের বাইরে মনে হয়। কিন্তু এই সবজি চাষাবাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আর শ্রমিকের বাজারদর যে হারে বেড়েছে সেই তুলনায় সবজির দাম অনেক কম বলে মন্তব্য করেন তিনি।


মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী রবিউল ইসলাম বলেন, চলতি মৌসুমে মানিকগঞ্জ জেলায় মোট ১১৯১ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হয়েছে। সবজির আবাদ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। সবজি আবাদের পরিমাণ আরও বাড়বে।

আলাদাভাবে শসা আবাদের জমির পরিমাণের তথ্য এখনো সংগ্রহ করা হয়নি। তবে জেলায় শসার বাম্পার ফলন হয়েছে। শসাসহ বিভিন্ন সবজি চাষে নিয়মিত মাঠ পর্যায়ে সহায়তার জন্য কৃষি বিভাগের লোকজন কাজ করে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

;

‘প্রচণ্ড গরমেও আমরা আগুনের কাছে বন্দি’



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রচণ্ড গরমে যখন মানুষ হাফ ছেড়ে বাঁচতে চাইছে, ঠিক তখন তাদের আগুনের পাশে দাঁড়িয়ে গরমকে উপেক্ষা করে কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যাচ্ছে। তাদের বয়স প্রায় ১৭ থেকে ১৮ ছুঁই ছুঁই। কেউ কেউ পড়েছেন ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত, আবার কেউ কেউ টেন-ফেল। শেষমেশ তাদের জায়গা হয়েছে মিষ্টির কারখানার আগুনের চুলার পাশে। সমস্যা একটাই অভাব। যার কারণে আজ তারা আগুনের কাছে বন্দি অনেকটাই!

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) তালার পাটকেলঘাটা ভাগ্যকুল মিষ্টি কারখানায় সরেজমিনে গিয়ে প্রথমে ঢুকতেই দেখা যায় দাউ-দাউ করে জ্বলছে বড়-বড় চুলা। চুলার ওপরে বসানো কড়াই আর তার মধ্যে আগুনের জ্বালের মধ্য দিয়ে ফুটছে দুধ। চুলার পাশে দাঁড়িয়ে সেই দুধ নাড়া দিচ্ছে অভিজিত গুড্ডুর মতো ছেলেরা।

চুলার পাশে একটু যেতেই মনে হলো আগুনের হলকা গায়ের ওপরে এসে পড়ল। মনে হচ্ছে আগুনের তাপে গায়ের লোমগুলো যেন পুড়ে যাচ্ছে। একদিকে প্রচণ্ড তাপদাহ আর অন্যদিকে চুলার আগুন। যেখানে মানুষ এক তাপদাহ সহ্য করতে নাজেহাল আর সেখানে তারা একে একে দুই তাপদাহের সঙ্গে লড়াই করছে। প্রচণ্ড এই তাপে যখন মানুষ নাজেহাল তখন চুলার পাশে দাঁড়িয়ে তারা ছোট গেঞ্জি গায়ে দিয়ে কাজ করছে।


তাদের একজন চুলায় দুধ জ্বাল দিতে থাকা অভিজিত মন্ডল গুড্ডু বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রচণ্ড গরমে আমরা আগুনের কাছে বন্দি। শুধু অভাবের কারণে। আমরা এখানে টাকার জন্য আগুনের সাথে লড়াই করছি। এই প্রচণ্ড তাপদাহের মধ্যে আগুনের কাছে গেলে মনে হয় জীবন বের হয়ে গেল। এতো তাপ সহ্য করে আছি শুধুমাত্র টাকার জন্য। কারণ বাড়িতে বাবা প্যারালাইজড। অভাবের কারণে সেই ক্লাস ফাইভ থেকে বাইরে বের হয়ে পড়েছি। সেই থেকে আগুনের সাথে লড়াই। আগুনের পাশে থেকে-থেকে বেঁচে থেকেও শরীরটা পুড়ে গেছে। পুড়তে-পুড়তে এই শরীরে আগুন দিলেও আর পুড়বে না।

পাশের চুলায় দুধ ঢালতে থাকা অপু মন্ডল বার্তা২৪.কমকে বলেন, দিনেরাতে মিলে মাত্র ৬ ঘণ্টা ঘুম হয়। বাকি ১৮ ঘণ্টা চুলার আগুনের পাশে থেকে কাজ করতে হয়। সকাল ১১টায় উঠে চুলা ধরিয়ে দুধ জ্বাল দিয়ে কাজ করতে করতে দুপুর ২টায় খেয়েদেয়ে একটু রেস্ট, তারপর আবার কাজ শুরু করে রাতে খেয়ে একটানা কাজ করে শেষ ভোর ৫ টা। এভাবে ঝড়, বৃষ্টি, গরম, বন্যা সবকিছু কাটছে আগুনের সাথে।

মিষ্টি গোল করতে থাকা বাঁধন রায় বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা প্রায় ২০-৩০ জন ছেলে এখানে কাজ করি। প্রায় সবার বয়স ১৮, ১৯, ২০ বছর ছুঁই ছুঁই। টাকার জন্য আমরা সবাই এখানে কাজ করছি। এটাই সত্যি যে টাকা হলে মানুষ সব জায়গাতে আটকায়। আমরা যেমন টাকার জন্য আগুনের কাছে আটকে গেছি। এটাই কপাল। এ দেহ আগুনে পুড়ে ছাই।

;