‘বঙ্গবন্ধুর ১০ জানুয়ারির ভাষণে দেশ পরিচালনার সব দিক-নির্দেশনা ছিল’
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে স্বাধীন দেশে ফিরে রেসকোর্স ময়দানে দেয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণে দেশ পরিচালনার সবরকম দিক-নির্দেশনা ছিল বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (১০ জানুয়ারি) আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক ভার্চুয়ালি সভায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনা সভায় অংশ নেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঢাকায় এসেই জাতির পিতা রেসকোর্সের ময়দানে ছুটে যান। তারপর সেখানে যে ভাষণটি দেন তাতে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পরিচালনার সবরকম দিক নির্দেশনা ছিল। অথচ, হাতে কোন কাগজ ছিল না, নিজে থেকেই বলেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘একজন মানুষ একটি জাতির প্রতি কতটা নিবেদিত হলে, মানুষকে কতখানি ভালবাসলে এমন আত্মত্যাগ করতে পারে। তা জানতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ আমাদের নতুন প্রজন্মের ৭ মার্চের ভাষণ এবং ১০ জানুয়ারির ভাষণ বারবার শোনা উচিত। তাহলেই রাজনীতি করার একটা প্রেরণা এবং দিক নির্দেশনা সবাই পাবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতার পাকিস্তানী কারাগারে থেকে ৪০ পাউন্ড ওজর কমে যায়। তবু, মুক্তি পেয়ে তিনি সেই জীর্ণ শীর্ণ দেহ নিয়েই লন্ডন চলে যান এবং প্রধানমন্ত্রী হিথের সংগে বৈঠক করেন, সংবাদ সম্মেলন করেন এবং প্রবাসী বাংলাদেশীদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। সেখান থেকে তিনি দিল্লী হয়ে দেশে ফেরেন এবং সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তাঁর সাক্ষাত হয় এবং সেখানেও তিনি জনগণের সামনে বক্তৃতা দেন। এরপর ঢাকায় এসেই তিনি রেসকোর্সের ময়দানে ছুটে যান।’
তিনি বলেন, ‘সেই ভাষণে বন্ধু প্রতীম দেশ যারা সহযোগিতা করেছে তাঁদের প্রতি যেমন কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তেমনি দেশের মানুষের প্রতি পাকিস্তানী বাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতনের কথা ও তিনি তুলে ধরেছেন। আমাদের একটাই চিন্তা যে জাতির জন্য আমাদের মহান নেতা জীবন দিয়ে গেছেন সেই জাতির কল্যাণ করা। তাঁদের জীবন সুন্দর করা। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। দেশকে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ থেকে মুক্ত রেখে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো-জাতির পিতার এই প্রত্যাবর্তন দিবসে এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা।
তিনি আরও বলেন, ‘এ জাতি বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে। এ জাতিকে যারা ব্যর্থ করতে চেয়েছিল আজকে তারাই ব্যর্থ। আজকে বাংলাদেশ সারাবিশ্বে স্বাধীন দেশ হিসেবে যে মর্যাদা পেয়েছে তা ধরে রেখে আমরা বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাব। এদেশের ভূমিপুত্র হিসেবে একমাত্র জাতির পিতাই প্রথম দেশের শাসনভার হাতে নিয়েছিলেন। তার আগে যারাই ক্ষমতায় ছিলেন তাদের কারো জন্ম এদেশে ছিল না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসা শাসন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করে একে গণমুখী করার জন্যই দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দেন। সেটা যদি করে যেতে পারতেন তাহলে মাত্র ৫ বছরেই বাংলাদেশ ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে উঠতে পারতো। তাতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ, আজকে দেশ পরিচালনা করতে গিয়ে দেখি সমস্ত কাজের ভিত্তিটাই তিনি তৈরি করে দিয়ে গেছেন। মাত্র সাড়ে ৩ বছরের শাসনামলে জাতির পিতা এত আইন, এত নীতিমালা কিভাবে করে যান সেটা একটা বিস্ময়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ কোনদিন আত্মনির্ভর হয়ে মাথা তুলে নিজের পায়ে দাঁড়াক সেটা স্বাধীনতা বিরোধীরা কোনদিন চায়নি। আর এজন্য তারা শুধু জাতির পিতাকে হত্যাই করেনি, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সকল আদর্শকে বিচ্যূত করেছিল। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তারা দেশের সঠিক ইতিহাস জানতে দেয়নি, বিজয়ী জাতি হিসেবে আমাদের যে গর্ব করার মতো অনেক কিছু রয়েছে। সে কথাটা অনেকেই জানতেই পারেনি। ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছিল। শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরেই সকলে ইতিহাসটা আস্তে আস্তে জানতে পারে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের যে নতুন প্রজন্ম তাদের আগ্রহ জন্মেছে দেশের ইতিহাস জানার বিষয়ে সেটাই সবথেকে আশার বিষয়। এই করোনাভাইরাস আমাদের অগ্রযাত্রাকে কিছুটা হলেও ব্যাহত করেছে, এতে কোন সন্দেহ নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মুজিববর্ষ উদযাপন করছি এবং আর কিছুদিন পর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমরা উদযাপন করবো। জাতির পিতা ২৬ মার্চ স্বাধীনতার যে ঘোষণা দিয়েছিলেন সেই ৫০ বছর পূর্তিই আমরা উদযাপন করবো।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাসের জন্য যেভাবে কাজ করার কথা সেভাবে করতে পারছি না। কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যে জাতির জন্য জাতির পিতা এত ত্যাগ স্বীকার করে গেছেন সেই দেশের সকল মানুষের একটা ঠিকানা, অর্থাৎ গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষকে আমরা ঘর করে দেব। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ যুব মহিলা লীগসহ আমাদের যত সংগঠন রয়েছে প্রত্যেককে আমি অনুরোধ করবো আপনারা বাড়ির পাশের গৃহহীন, ভূমিহীন নিঃস্ব মানুষটির কথা জানাবেন।’
তিনি বলেন, ‘খুব শিগগিরই ৪৬ হাজার মানুষকে আমরা ঘর দেব এবং ৭৬ হাজার মানুষের ঘর তৈরি হচ্ছে। কত লোক গৃহহীন রয়েছে তাদের তালিকা করে আমরা ঘর করে দিতে চাই। একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। শতভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে। প্রতিটি ঘর আমরা আলোকিত করবো। চিকিৎসা সেবাকেও আমরা মানুষের দোড়গোয়ায় দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাসের জন্য ইতোমধ্যে ভ্যাকসিন ক্রয় করার সমস্ত ব্যবস্থা আমরা করেছি। ইনশাল্লাহ এসে যাবে। তারপরেও বলবো সবাইকে স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে চলতে হবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে নিজেকে এবং অন্যকেও রক্ষা করতে হবে।’
দলের প্রচার সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তৃতা করেন- দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, রমেশ চন্দ্র সেন ও আব্দুল মতিন খসরু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল এবং এস এম কামাল হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর, ডা. রোকেয়া সুলতানা বক্তৃতা করেন, ঢাকা মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও আবু আহমেদ মান্নাফি এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কোচি ও হুমায়ুন কবির প্রমুখ।
সূত্র: বাসস