দক্ষিণাঞ্চলে নদীর গভীরতা কমায় বিঘ্ন হচ্ছে নৌ চলাচল
বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের সাথে দক্ষিণাঞ্চলের পরিবহনের প্রধান মাধ্যম নৌপথ। মোংলা বন্দরের জনপ্রিয়তা ও পায়রা বন্দরের উন্নয়নে দক্ষিণাঞ্চলের নদীগুলোর গুরুত্ব বেড়েছে কয়েকগুণ। তবে নদীগুলোর তলদেশে পলি জমে ভরাট হওয়ায় কমেছে নাব্যতা ও পানির গভীরতা। ফলে বিভিন্ন রুটে নৌ চলাচল বিঘ্ন হচ্ছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল বিভাগের ৩১টি নৌরুট রয়েছে। এর মধ্যে ২২ টি রুটে পানির গভীরতা কমে গেছে। অনেক জায়গায় নৌরুট শুকিয়ে গেছে।
যেসব রুটে পানির গভীরতার অভাব রয়েছে সেগুলো হলো- বাকেরগঞ্জ-মির্জাগঞ্জ ৩৫ কিলোমিটার রুটে রামপুর ব্রিজ এলাকায়, বরিশাল-ঝালকাঠি-বরগুনা-পাথরঘাটা ১১৭ কিলোমিটার রুটের নিয়ামতি ও মোকামিসয়া ঘাটের সামনে, হিজলা-সাতহাজার বিঘা-বরিশাল ৬১ কিলোমিটার রুটের আজিমপুর নদীতে, ভান্ডারিয়া পশারিবুনিয়া-ইকরি-তুষখালি ৩৬ কিলোমিটার রুটের ভান্ডারিয়াসহ বিভিন্ন রুটে।
আর নদীর যেসব এলাকা শুকিয়ে গেছে তা হলো- বাকেরগঞ্জ থেকে মির্জাগঞ্জ ৩৫ কিলোমিটার রুটের সীমান্তনালা নদী, ভান্ডারিয়া থেকে পশারিবুনিয়া ও ইকরি হয়ে তুষখালি পর্যন্ত ৩৬ কিলোমিটার রুটের পোনাদন নদী পাশারিবুনিয়া থেকে ইকরি পর্যন্ত, গাবখান থেকে ধানসিড়ি–রাজাপুর হয়ে নিয়ামতি বাজার পর্যন্ত ২৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার রুটের রাজাপুরে ধানসিঁড়ি নদী।
আরও জানা গেছে, এসব নৌপথে প্রায় ৪৭০ কিলোমিটার দৈর্ঘে্য প্রায় ৪২ মিলিয়ন ঘনমিটার পরিমাণ ক্যাপিটাল ড্রেজিং এবং পরবর্তীতে নাব্যতা বজায় রাখতে ৭ বছর সংরক্ষণে প্রায় ১৭০ মিলিয়ন ঘনমিটার পরিমাণ ড্রেজিং করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ'র ড্রেজিং বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রকিবুল ইসলাম তালুকদার জানান, বরিশাল অঞ্চলের অধিকাংশ নদী উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় জোয়ার ভাটা একটি প্রাত্যহিক ঘটনা। মেঘনা নদীর মোহনা হতে পলি মাটি জোয়ারের মাধ্যমে এ অঞ্চলে সঞ্চালিত হয়ে নদীগুলোকে গতিশীল করে রেখেছে।
তিনি আরও জানান, সরকারের নির্দেশনায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বানৌপক) ‘বরিশাল বিভাগের নদীসমূহের নাব্যতা বৃদ্ধি, জলাবদ্ধতা হ্রাস, জলাভূমি বাস্তু পুনরুদ্ধার, সেচ ও ল্যান্ডিং সুবিধাদি বৃদ্ধি করে নদী ব্যবস্থাপনার সম্ভাব্যতা যাচাই’ শীর্ষক এক প্রকল্প গ্রহণ করেছে। প্রকল্পের আওতায় নদীগুলোর নাব্যতা সংকট নিরসন, প্রধান চ্যানেলের সঙ্গে ঘাটসমূহের সংযোগ স্থাপন, সেচ ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নতি, জলজ সম্পদ বৃদ্ধি এবং নদীর পাড় ভাঙন রোধে নৌপথগুলোর বিভিন্ন অংশে খননের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দক্ষিণাঞ্চলে নৌযান চলাচল বৃদ্ধি, অন্যান্য নৌ-রুটের সাথে সংযোগ স্থাপন, জলাবদ্ধতা রোধ, নদী পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি।