চিনিকল বন্ধ, চলছে অবৈধ মাড়াইকলে গুড় তৈরির উৎসব



আমিনুল ইসলাম জুয়েল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর
রংপুর চিনিকল বন্ধ, চলছে অবৈধ মাড়াইকলে গুড় তৈরির উৎসব

রংপুর চিনিকল বন্ধ, চলছে অবৈধ মাড়াইকলে গুড় তৈরির উৎসব

  • Font increase
  • Font Decrease

লোকসানের বোঝা কমাতে সরকারি সিদ্ধান্তে রংপুরের শ্যামপুর চিনিকলসহ দেশের ছয়টি চিনিকল ইতিমধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।  ফলে মাঠে পড়ে থাকা আখ নিয়ে চাষিরা পড়েছেন নানা রকম দ্বিধাদ্বন্দ্বে। এ পরিস্থিতিতে একটি চক্র  উৎপাদিত আখ নিয়ে চাষিদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে।

তারা চাষিদের ভুল বুঝিয়ে চিনিকলের আওতাভুক্ত এলাকায় অবৈধভাবে পাওয়ার ক্রাশার মেশিন (মাড়াইকল) বসিয়ে গুড় মাড়াইয়ের উৎসবে মেতেছেন। অথচ সরকারি নির্দেশনা আছে চিনিকলের আওতাভূক্ত এলাকায় গুড় মাড়াই করা যাবে না। এর পরেও  রংপুর সদর, বদরগঞ্জ, মিঠাপুকুর ও পার্শ্ববর্তী দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ এলাকায়  অন্তত দেড়শতাধিক আখ মাড়াইকল গড়ে উঠেছে। সরকারি বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করে দিনরাত সমান তালে চলছে আখ মাড়াই।

চাষিরা জয়পুরহাট চিনিকলের জন্য আখ না দিয়ে অবৈধ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছে

শুক্রবার (২২ জানুয়ারি) রংপুরের বদরগঞ্জ ও মিঠাপুকুর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা ও যমুনেশ্বরী নদীর চর ঘুরে দেখা গেছে, চাষিরা জয়পুরহাট চিনিকলের জন্য আখ না দিয়ে অবৈধ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছে। চাষিদের কাছ থেকে আখ কিনে সেখানেই চলছে মাড়াইয়ের কাজ। শ্যামপুর চিনিকলের আওতাভূক্ত এলাকায়  অন্তত শতাধিক মাড়াই মেশিন স্থাপন করে চলছে গুড় তৈরির কাজ। আবার অনেকেই নতুন করে পাওয়ার ক্রাশার মেশিন স্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

বদরগঞ্জ উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের নাটারাম স্কুলপাড়ায় মাড়াইকল বসানো হয়েছে। সেখানের কৃষকের কাছ থেকে আখ কিনে গুড় মাড়াই করছেন আলতাব হোসেন (৫০)।

Caption

তিনি বলেন, 'সুগারমিল বন্ধ তাই কুশার(আখ) কাজে লাগাওছি। বাজরে আখ গুড়ের চাহিদা বেশি। প্রতি কেজি গুড় পাইকারী ৬৫-৭৫ টাকায় বিক্রি হওচে।'

এদিকে মিঠাপুকুর উপজেলার চিত্র আরো অন্যরকম। উপজেলার বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নের হাসিয়া গ্রামের বিভিন্ন পয়েন্টে চলছে গুড় মাড়াই।

যমুনেশ্বরী নদীর তীরে মতিয়ার রহমান আখ থেকে গুড় মাড়াই করছেন। তিনি বলেন, 'মিল বন্ধ হইচে সেই জন্যে মেশিন কিনি আনছি। নিজের জমির কুশার দিয়ে গুড় তৈরি করছি।'

তিনি আরো জানান,  শুধু তিনি নন, তার আশপাশে অন্তত ৫০টি পুরাতন ও নতুন ক্রাশার মেশিন স্থাপন করে গুড় মাড়াই করা হচ্ছে । ৮০০ কেজি আখে ৫৬ কেজি গুড় হয়। দিনে কমপক্ষে ৬ মণ গুড় তৈরি করা সম্ভব।

লতি মৌসুমে রংপুর অঞ্চলে প্রায় ৫ হাজার ২০০ একর জমিতে আখ চাষ করা হয়েছে

শ্যামপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, শ্যামপুর চিনিকল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর আওতাভূক্ত এলাকায় উৎপাদিত আখ জয়পুরহাট চিনিকলে পাঠানো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেই হিসাবে ২ জানুয়ারি মিলগেটে আখ নেওয়া শুরু হয়। চলতি মৌসুমে রংপুর অঞ্চলে প্রায় ৫ হাজার ২০০ একর জমিতে আখ চাষ করা হয়েছে। শ্যামপুর চিনিকলের আওতায় প্রায় ৭ হাজার চাষি রয়েছে। আখ চাষে তাদের উদ্বদ্ধ করতে চলতি মৌসুমের জন্য ৩ কোটি ৩২ লাখ ৪৩ হাজার টাকা ঋণ প্রদান করা হয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদী এ ফসল চাষ করতে সময় লাগে ১৪ থেকে ১৬ মাস। চাষিদের আখ চাষে আগ্রহ বাড়াতে বছরের সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে একর প্রতি ২৬ কুইন্টাল বীজ আখ সরবরাহ করা হয়। এছাড়াও ১১০ কেজি টিএসপি, ৯৭ কেজি এমওপি সার দেওয়া হয়। মূলত জমি ছাড়া সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় চাষিদের।

চিনিকলের আওতায় ৬৫ ইউনিটে আখ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন। শ্যামপুর জোনের আওতায় অবৈধ পাওয়ার ক্রাশার রয়েছে ৭৪টি। কিন্তু বাস্তব চিত্র একেবারে ভিন্ন। এবারে মিল বন্ধ থাকায় অন্তত দেড় শতাধিক পাওয়ারক্রাশার মেশিন স্থাপন করে চলছে মাড়াই।

হঠাৎ চিনিকল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চাষিরা বিপাকে পড়েছে

শ্যামপুর সুগারমিল অ্যামপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বুলু আমীন বলেন, ‘ হঠাৎ চিনিকল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চাষিরা বিপাকে পড়েছে। বন্ধ চিনিকল চালুর দাবিতে তারা আন্দোলন করছেন। চাষিরা প্রয়োজনে আখ পুড়ে ফেলবে তবু জয়পুরহাট চিনিকলে দিবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। তাছাড়া অনেক চাষি দীর্ঘ সুত্রিতার কারণে জয়পুরহাটে আখ দিতে অনিহা প্রকাশ করছেন। একারণে অনেকেই স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা মাড়াইকলে আখ বিক্রি করে দিচ্ছে।’

শ্যামপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দীলিপ কুমার সরকার বলেন, ‘শ্যামপুর জোনের উৎপাদিত সমুদয় আখ সংগ্রহ করে জয়পুরহাট চিনিকলে পাঠানো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চিনিকল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক চাষি মনে করছেন আর আখ নেয়া হবে না। এ জন্য অনেকে আখ মাড়াই করে গুড় তৈরি করছে।  দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।'

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের নির্দেশে উৎপাদন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া চিনিকলগুলো হচ্ছে কুষ্টিয়া, পাবনা, পঞ্চগড়, রংপুরের বদরগঞ্জের শ্যামপুর, রংপুর (মহিমাগঞ্জ) ও সেতাবগঞ্জ (দিনাজপুর) চিনিকল। এসব চিনিকলে ২ হাজার ৮৮৪ জন শ্রমিক কর্মচারী কর্মরত।

   

চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র অভিযান, ১২ মামলা ও ৫১ হাজার টাকা জরিমানা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়ক ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এর দু’টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়েছে। এসময় লাইসেন্স ও ফিটনেস না থাকা এবং সড়ক পরিবহন আইন না মানার কারণে ৫ চালক ও ১২ গাড়িকে মামলা এবং ৫১ হাজার টাকা নগদ জরিমানা করা হয়।

শনিবার (২০ এপ্রিল) বিআরটিএ, চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) মো. মাসুদ আলমের নির্দেশনায় এই দু’টি অভিযান পরিচালনা করা হয়।

এর মধ্যে চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কে অভিযান পরিচালনা করেন বিআরটিএ, চট্টগ্রাম বিভাগের ভ্রাম্যমান আদালত নং-১২ এর বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মিশকাতুল তামান্না এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে অভিযান পরিচালনা করেন কর্ণফুলী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) পিযুষ কুমার চৌধুরী।

বিআরটিএ, চট্টগ্রাম জানায়, বিআরটিএ চেয়ারম্যানের নির্দেশে সারাদেশের অন্যান্য জেলার মতো চট্টগ্রাম জেলার দু’টি গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে বিভাগীয় পরিচালকের সার্বিক দিক-নির্দেশনায় দু’টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়েছে।

এসময় চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কে পরিচালিত অভিযানে ৮টি মামলা ও ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এর মধ্যে লাইসেন্স না থাকায় ৩টি মামলা ও ১০ হাজার টাকা এবং ফিটনেস না থাকা ও বিভিন্ন সড়ক পরিবহন আইন না মানার কারণে ৫টি মামলা ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়াও ১টি গাড়িকে ডাম্পিং করা হয়।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে পরিচালিত অভিযানে ৯টি মামলা ও ২১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এরমধ্যে লাইসেন্স না থাকায় ২টি মামলা ও ৬ হাজার টাকা এবং ফিটনেস না থাকা ও বিভিন্ন সড়ক পরিবহন আইন না মানার কারণে ৭টি মামলা ও ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়াও রেজিস্ট্রেশন বিহীন ৩টি ট্রাক গাড়িকে ডাম্পিং করা হয়।

;

সন্ত্রাসী অপরাধে গ্রেফতারদেরও নিজেদের কর্মী দাবি করছে বিএনপি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই-রাহাজানিসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অপরাধে গ্রেফতার হয়। বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ও রিজভী সাহেবরা গ্রেফতারের যে হিসাব দিচ্ছেন, তাতে মনে হচ্ছে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যুক্ত যারা প্রতিদিন গ্রেফতার হচ্ছে, পুলিশের খাতায় যারা অপরাধী, তাদেরকে বিএনপির কর্মী বলে দাবি করছে। বিএনপি নেতাদের কথায় সেটাই মনে হচ্ছে।

শনিবার (২০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠে চিটাগাং উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আয়োজিত ১৪তম আন্তর্জাতিক উইমেন এসএমই এক্সপো’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা দেন।

তিনি বলেন, বিএনপি’র কোন নেতা কিংবা কর্মীর বিরুদ্ধে কোন রাজনৈতিক মামলা দেয়া হয় না। তাদের বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো হয়েছে, সেগুলো গাড়ি পোড়ানো, পুলিশ এবং জনগণের ওপর হামলাসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মামলা। এই সমস্ত মামলায় তারা গ্রেফতার হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা বিচারাধীন আছে।

সরকার চোরাবালিতে দাঁড়িয়ে আছে বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ড. হাছান বলেন, আমরা চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে আছি, এটা গত ১৫ বছর ধরে শুনতে পাচ্ছি। চোরাবালিটা এত শক্ত যে, তাদেরকে আরো বহু বছর অপেক্ষা করতে হবে।

বিএনপি নিজের দলটাকে টিকিয়ে রাখার জন্য গতানুগতিক কিছু কর্মসূচি পালন করে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গাড়ি যখন বসে যায় তখন সেটির ব্যাটারি মাঝেমধ্যে স্টার্টে রাখতে হয়। বিএনপিও পুরনো গাড়ির মত বসে গেছে। বসে যাওয়াতে তারা গাড়ি স্টার্টে রাখার জন্য মাঝেমধ্যে দলটাকে স্টার্ট দেয় এবং সেজন্য কিছু গতানুগতিক কর্মসূচি পালন করে।

এর আগে ১৪তম আন্তর্জাতিক উইম্যান এসএমই এক্সপো’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রামর সন্তান ড. হাছান নিয়মিত এ আয়োজনের জন্য চিটাগাং উইমেন চেম্বারের প্রশংসা করেন। চেম্বারের সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলীর সভাপতিত্বে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী, এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম, শামীমা হারুন লুবনা এমপি প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। অতিথিদের সাথে নিয়ে মন্ত্রী এক্সপো'র বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।

;

নরসিংদীর "ছন্দা" সিনেমা হল এখন মাদরাসা



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নরসিংদী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নরসিংদীর পূর্বাচল অধ্যুষিত হাসনাবাদ আমিরগঞ্জ স্টেশনে আশির দশকের নামকরা সিনেমা হল ছন্দা হলটি এখন মাদ্রাসা। একটি সিনেমা হল যেখানে পূর্ণদৈর্ঘ্য ছায়াছবি প্রচারিত হতো সেখানে আজ দ্বীনি শিক্ষার জন্য মাদ্রাসা তৈরি হওয়ায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, কালের পরিক্রমায় নরসিংদীর বৃহত্তর রায়পুরা উপজেলার হাসনাবাদ আমিরগঞ্জ বাজারে অবস্থিত সন্ধ্যা সিনেমা হলটি। যা অত্র অঞ্চলের বিনোদনের খোরাক ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে হলের ব্যবসায়িক অবস্থা মন্দা ভাব হাওয়ায় হলটি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। এর ফলে সিনেমা হলটি পাশ্ববর্তী একটি এতিমখানার মাদ্রাসা মালিকের কাছে বিক্রি হয়। এখন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এ সিনেমা হলটিকে মাদ্রাসায় পরিণত করতে যাচ্ছে।

শনিবার (২০ এপ্রিল) রায়পুরা উপজেলার হাসনাবাদ আমিরগঞ্জ বাজারে হলটিতে গিয়ে দেখা যায়, হলটির সামনে ঝুলছে "রাজকুমার" ছবির পোস্টার। ভিতরে শো চলছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, এই হলটি অঞ্চলের বিনোদনের কেন্দ্রের একমাত্র সিনেমা হল ছিল। নানা কারনে ৫/৭ বছর ধরে আগের মত আর জৌলস নেই। এতিমখানা ঘেঁষে সিনেমা হলটি। এখানে বড় দ্বীনি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার লক্ষ্যে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এলাকাবাসীর সহযোগীতা চান।


মাদরাসার মোহতামিম মাওলানা মো: মোকাররম হোসাইন জানান, জানতে পারি মালিক পক্ষ হলটি বিক্রি করে দিবে। স্থানীয়রা চিন্তা করে হলটি মাদরাসার জন্য ক্রয় করার পরিকল্পনা নেন। মালিক পক্ষের সাথে কথা বলে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা ধরে ২০ লাখ টাকায় বায়না দলিল করেছেন। এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৩ লাখ টাকা জমা পরেছে। সকলের সহযোগীতা নিয়ে মাদরাসাটির নামে ওই স্থাবর সম্পত্তি ৩৩ শতক জমি ওয়াকফ দলিল করা হবে। আশা করি স্থানীয় বিত্তবানদের সহযোগীতায় দ্বীনি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন দর্শনার্থী জানান, আগে সিনেমা হলে পরিবার পরিজন নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে কত যে সিনেমা দেখতাম। এখন নানা কারণে হলে গিয়ে সিনেমা দেখতে ইচ্ছা করে না। ভাল ছবি হলে মাঝে মধ্যে আসি। শুনলাম ছন্দা হলটি মাদরাসার কাছে বিক্রি করা হয়েছে। হয়তো সামনে বন্ধ হয়ে যাবে। তাই শেষবারের মতো 'রাজকুমার' ছবিটি দেখতে এলাম।’

হলটি ভাড়ায় চালাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দা মো সুলতান মিয়া। তিনি জানান, আসল মালিক সামসুল ইসলাম মানিকের কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা ভাড়ায় চুক্তি। ৪'শ টাকা হাজিরায় চারজন কর্মচারী নিয়ে পরিচালনা করে আসছি। করোনার পর থেকে দীর্ঘদিন লোকসান গুনে গুনে এতদিন হল চালাচ্ছি। ফিল্মের জগত আগে ছিল টাটকা টাকা। সম্প্রতি প্রিয়তমা ছবিটিতে বেশ ব্যবসা হয়েছিলো। এখন নানা কারনে এ ব্যবসা মন্দা। সিনেমা মুক্তির দুই মাসের মধ্যে নেট গুলোতে তারা টাকায় বিক্রি করে দেয়। হাতে মোবাইল ফোনে দেখে ফেলে কেউ হলে এসে সিনেমা দেখতে আসেনা। বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হল মালিকরা। ফলে মালিক পক্ষ যদি হল বিক্রি করে দিতে চায় তাহলে করার কিছুই নাই। মাদরাসার কাছে হল বিক্রি হওয়ার কথা শুনেছি। মাদরাসার নিকট বিক্রি হলে আরও ভালো হয়। আমি মুসলিম এই ব্যবসা করতে আর মন চায় না, আল্লাহ চাইলে এই ব্যবসা ত্যাগ করে অন্য কিছু করবো।

ছন্দা হলের কর্মচারী আবুল কালাম জানান, এই হলটিতে সবসময় দর্শকদের লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ অপেক্ষা করে টিকিট সংগ্রহ করে উপচে পড়া ভিড় থাকত।

চলচ্চিত্র জগতের জনপ্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রীর ছবিগুলো এখান থেকে দর্শক প্রিয়তায় বাদ যায়নি। বর্তমানে সিনেমা ব্যবসায় মন্দা হওয়ায় আমাদের আর্থিক অবস্থা খুবই শোচনীয়। ব্যবসা মন্দা হওয়ায় মালিকপক্ষ আমাদের ঠিকমত বেতনও দিতে পারেনা। ঈদ উপলক্ষে শো চলছে। হল বন্ধ থাকলে আমাদের বেকার জীবন চলে। কর্মচারীরা মানবেতর জীবন যাপন করছি।

নরসিংদীতে বন্ধ হওয়া অপর একটি হলের মালিক সাদ্দাম হোসেন জানান, এক সময় নরসিংদীতে ১৯টি সিনেমা হল ছিল। আগে ভাল মানের একটি সিনেমা প্রায় তিন থেকে চার সপ্তাহ এক টানা চলতো। ভরপুর দর্শক হতো। ব্যবসায় নেমেছে ধস। দু'একটি ব্যতিত সবগুলো হল বন্ধ। শুনলাম জনপ্রিয় ছন্দা সিনেমা হলটিও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

;

'নতুন প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে'



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হক

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হক

  • Font increase
  • Font Decrease

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন। এই অর্জনকে অর্থবহ করতে স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এবং মুক্তিযুদ্ধর সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে জানতে হবে।

শনিবার (২০ এপ্রিল) ঢাকার কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোম ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে প্রজন্ম ’৭০ বাংলাদেশের প্রজন্ম সম্মেলন ও তৃতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন।

স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরে মন্ত্রী মোজাম্মেল হক আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ১৯৪৮-’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা, ৬৯’র এগারো দফা ও গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠে। ’৭০’র সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমগ্রপাকিস্তানে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানিরা বাঙালি জাতিকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে দেয়নি।

মন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা অনুধাবন করেন, স্বাধীনতা অর্জন ছাড়া বাঙালি জাতির ওপর অত্যাচার, নির্যাতন ও বঞ্চনার অবসান হবে না। তাই তিনি ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানের জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ডাকে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন, চলতে থাকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি।

তিনি বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ কালরাতে নিরীহ ও নিরস্ত্র বাঙালির ওপর গণহত্যা শুরু করে। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ, ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানি হানাদার এবং তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদর-আলশামস বাহিনীকে পরাজিত করে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।

মন্ত্রী বলেন, সকল প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন একটি শোষণ-বঞ্চনামুক্ত অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ‘সোনার বাংলা’ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যার পর থেমে যায় বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা। শুরু হয় হত্যা, ক্যু আর ষড়যন্ত্রের রাজনীতি। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশি বিদেশি সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে দেশকে আজ তিনি উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করেছে।

প্রজন্ম ৭০ বাংলাদেশ-এর সভাপতি আশরাফুল করিম ভূঁইয়া সেলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নাসরিন খান, বাংলাদেশ সচিবালয় রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহব্বাহক ফসিহ উদ্দিন মাহতাব, সদস্য সচিব এস এম মাহাবুবুর রহমান, আলোক হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক লোকমান হোসেন বক্তৃতা করেন।

;