বঙ্গবন্ধু টানেলের অগ্রগতি ৬২ ভাগ, চলছে দ্বিতীয় টিউবের খনন
চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দেশের প্রথম নির্মাণাধীন সরকারের অন্যতম মেগা প্রকল্প বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। করোনার ধাক্কা সামলিয়ে এরই মধ্যে প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ৬২ ভাগ। টানেলের দুটি টিউবের মধ্যে একটি টিউবের কাজ এরই মধ্যে নেভাল একাডেমি থেকে নদীর ওপারে আনোয়ারা অংশে চলে গেছে। শুরু হয়েছে দ্বিতীয় টিউবের খনন কাজ।
নির্মিতব্য বঙ্গবন্ধু টানেলের মোট দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার। দুইটি টিউব সম্বলিত মুল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। এরমধ্যে টানেল টিউবের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার এবং ভেতরের ব্যাস ১০ দশমিক ৮০ মিটার। টানেলের ভিতরের ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স ৪ দশমিক ৯০ মিটার।টানেলের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে মোট ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার অ্যাপ্রচ রোড এবং ৭২৭ মিটার ওভারব্রিজ রয়েছে বলে প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে।
প্রকল্পের অগ্রগতির দিকে নজর দিলে দেখা যায়, প্রকল্পের অধিগ্রহণ ও রিকুইজিশনযোগ্য মোট ৩৮২.০৮২১ একর ভূমির মধ্যে এখন পর্যন্ত ৩৬২.৩২২১ একর ভূমি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং অবশিষ্ট ১৯.৭৬ একর ভূমি অধিগ্রহণ/ হস্তান্তর কার্যক্রম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়/ভূমি মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন।পুনর্বাসন কার্যক্রমের আওতায় পতেঙ্গা ও আনোয়ারা প্রান্তের ৪২৪ জন ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিক/ব্যক্তিকে অতিরিক্ত মঞ্জুরির অর্থ বাবদ সর্বমোট ১৯৬.০৮ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
পতেঙ্গা প্রান্তে ফ্লাড গেটের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং জি-১ ও জি-২ রোডের কাজ চলমান রয়েছে। পূর্ব প্রান্তে ওয়ার্কিং শাফট এবং কাটা ও কভারের কাজ চলমান। ইতিমধ্যে ডায়াফ্রাম ওয়াল, রোটারি জেট গ্রাউটিং, সিমেন্ট মিক্স পাইলের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
এছাড়া এপ্রোচ রোডের কাজ চলমান রয়েছে। এদিকে, চীনের জিয়াংসু প্রদেশের জেংজিয়ান শহরে টানেল সেগমেন্ট কাস্টিং প্ল্যান্টে সেগমেন্ট নির্মাণের কাজ চলমান আছে এবং নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত ১৯,৬১৬টি সেগমেন্টের মধ্যে ১৮,৮৮৭টি সেগমেন্ট নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে (৯৬.২৮%)। তার মধ্যে, এখন পর্যন্ত ১৪,৮৬৪টি সেগমেন্ট চট্টগ্রাম সাইটে পৌঁছেছে এবং ৯৭৪৪টি সেগমেন্ট নির্মাণাধীন টানেলে স্থাপন করা হয়েছে । আনোয়ারা প্রান্তে ৭২৭ মিটার ভায়াডাক্ট নির্মাণ কাজের সাবস্ট্রাকচারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং সুপারস্ট্রাকচার এর ২০৩টি প্রি-ফ্রিব্রিকেটেড বক্স গার্ডারের মধ্যে ১১০টির (৫৪.১৯%)কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ইতিমধ্যে ৭২ টি প্রি-ফ্রিব্রিকেটেড বক্স গার্ডারের স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে।
কাজের অগ্রগতির বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণ প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, এই প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৬২ শতাংশ। এরই মধ্যে ২৪০০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি টিউব স্থাপনসহ বোরিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন টিউবের ভিতরের আনুষঙ্গিক কাজ চলছে। গত বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় টিউবের খনন কাজ। করোনা পরবর্তী সময়ের পর এখন কাজ পুরোদমে চলছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এবং এই ভাবে কাজ চলতে থাকলে, আমরা আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই দেশের প্রথম টানেলের নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারবো।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম টানেল বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর দ্বিতীয় টানেল টিউবের বোরিং কাজ শুরু হয়েছে। ৩ দশমিক তিন দুই কিলোমিটার দেশের প্রথম এই টানেলের ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ হবার কথা রয়েছে ২০২২ সালে।
অর্থনৈতিক প্রভাব-
কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে এবং এশিয়ান হাইওয়ের সাথে সংযোগ স্থাপিত হবে। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে। কর্ণফুলী নদীর পূর্বপ্রান্তের প্রস্তাবিত শিল্প এলাকার উন্নয়ন ত্বারান্বিত হবে এবং পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত চট্টগ্রাম শহর, চট্টগ্রাম বন্দর ও বিমানবন্দরের সাথে উন্নত ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হবে। ফলে ভ্রমণ সময় ও খরচ হ্রাস পাবে এবং পূর্বপ্রান্তের শিল্পকারখানার কাঁচামাল ও প্রস্তুতকৃত মালামাল চট্টগ্রাম বন্দর, বিমানবন্দর ও দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে পরিবহন প্রক্রিয়া সহজ হবে। কর্ণফুলী নদীর পূর্ব প্রান্তের সাথে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনের ফলে পূর্বপ্রান্তে পর্যটন শিল্প বিকশিত হবে।
তাছাড়া, সার্বিকভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থার সহজিকরণ, আধুনিকায়ন, শিল্পকারখানার বিকাশ সাধন এবং পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের ফলে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্প নির্মিত হলে বেকারত্ব দূরীকরণসহ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।