সংজ্ঞা হারিয়ে কারাগারে মৃত্যু ঘটল লেখক মুশতাকের
সংজ্ঞা হারিয়ে কারাগারে মারা গেছেন লেখক মুশতাক আহমেদ (৫৩)। ফেসবুকে সরকারবিরোধী পোস্ট দিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেফতারের পর তিনি গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে বন্দী ছিলেন।
বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাত পৌনে ১২টায় বার্তা২৪.কমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ওই কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মো. গিয়াস উদ্দিন।
তিনি জানান, সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে তিনি সংজ্ঞা (অজ্ঞান) হারিয়ে ফেলেন। পরে তাকে দ্রুত কারা হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে সন্ধ্যা ৮টা ২০ মিনিটের দিকে তাকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
ওই হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক শরীফ হোসেন রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে বার্তা২৪.কমকে জানান, হাসপাতালে রাত ১০টার দিকে ‘ব্রট ডেড’ (Brought Dead) বডি আনা হয়েছে। অর্থাৎ হাসপাতালে আনার আগেই তিনি মারা গেছেন।
মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ব্রট ডেড কেসে কখনো মৃত্যুর কারণ জানা যায় না। ময়নাতদন্ত করতে মরদেহ মর্গে রাখা আছে। ময়নাতদন্তের পর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
জেল সুপার আরও জানান, মৃত মুশতাক আহমেদ নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজার উপজেলার ছোট বালাপুর এলাকার মো. আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। তিনি মারা যাওয়ার আগে কারাগারে কোনো ধরনের চিকিৎসা নেননি। এমনকি কখনো তিনি শারীরিক অসুস্থতার কথাও বলেননি। ২০২০ সালের ৬ মে থেকে তিনি কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী ছিলেন। গত বছরের ২০ আগস্ট তাকে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।
এ ধরনের মৃত্যুর ক্ষেত্রে (ব্রট ডেড) কারাগারের সুপার যথাযথ ব্যবস্থার জন্য স্থানীয় থানাকে তাৎক্ষণিকভাবে চিঠি দেন। পরে হাসপাতাল থেকে পাওয়া মৃত্যু সনদের ওপর ভিত্তি করে থানা পুলিশ অপমৃত্যু (ইউডি) মামলা দায়ের করে। ইউডি মামলার পরেই মৃত ব্যক্তির মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ফরেনসিক বিভাগে নেওয়া হয়। এর আগে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করা হয়। এইসব প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
ফেসবুকে সরকারবিরোধী পোস্ট দেওয়ায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে লেখক মুশতাক আহমেদকে গত ৫ মে রাজধানীর লালমাটিয়া থেকে গ্রেফতার করেছিল র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)।
গত বছরের ৫ মে র্যাব-৩ এর ওয়ারেন্ট অফিসার আবু বকর সিদ্দিক রমনা থানায় লেখক মুশতাক আহমেদসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, নেত্র নিউজের সম্পাদক সুইডিশ-বাংলাদেশি সাংবাদিক তাসনিম খলিল, সাংবাদিক শাহেদ আলম এবং ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিনসহ ১১ জনের নাম রয়েছে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা ‘আই অ্যাম বাংলাদেশি’ নামে ফেসবুক পেজে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুণ্ন করতে বা বিভ্রান্তি ছড়ানোর উদ্দেশে অপপ্রচার বা গুজবসহ বিভিন্ন ধরনের পোস্ট দিয়েছেন। যা জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায়।