নোয়াখালীতে মাদ্রাসাছাত্রীর বিবস্ত্র ভিডিও ধারণ, ধর্ষণ
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আলাইয়াপুর ইউনিয়নের হীরাপুর গ্রামে এক মাদ্রাসাছাত্রীর বিবস্ত্র ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে ভাইরালের ভয় দেখিয়ে দফায় দফায় ধর্ষণ ও অপহরণের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত ফয়সাল (২২) নোয়াখালী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবাববন্দী দিয়েছেন।
অপরদিকে আরেক গ্রেফতারকৃত আসামি সাইফুল ইসলাম ইমনের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে তিনদিন ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বেগমগঞ্জ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রুহল আমিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, অপহৃত মাদ্রাসাছাত্রীকে সাভারের একটি বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।
জানা যায়, হীরাপুর গ্রামের কাজী সিরাজের ছেলে ফয়সাল (২২), একই গ্রামের লেদনের ছেলে জোবায়ের (২৩), সোনাইমুড়ীর কামাল হোসেনের ছেলে সামছুল হক রাসেল (২৬), হীরাপুর গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে সাইফুল ইসলাম ইমন (২৩), আলাইয়াপুর ইউনিয়নের হিরাপুর গ্রামের মৃত গনু মিয়ার মেয়ে এবং স্থানীয় ধীতপুর দাখিল মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করে আসছিলো। বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বারকে অবহিত করে ভুক্তভোগীর পরিবার। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ২০১৮ সালের ৩ মার্চ তারা ভুক্তভোগীর বাড়িতে এসে কৌশলে তার মাকে কোমল পানীয়র সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে অস্ত্রের মুখে বিবস্ত্র করে ওই মাদ্রাসাছাত্রীকে ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণ করে। পরে মোজাম্মেল হোসেন নামে এক দোকানিকে ডেকে এনে জোর করে ভুক্তভোগীর সঙ্গে দাঁড় করিয়ে উভয়কে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে তারা।
পরে ওই ভিডিও ভাইরাল করার ভয় দেখিয়ে টাকা, স্বর্ণালংকার নিয়ে যায় এবং একাধিকবার ভুক্তভোগীকে ধর্ষণ করে। বাধ্য হয়ে মেয়েকে বিয়ে দিয়েও রেহাই পায়নি পরিবারটি। বিয়ের পরে ভুক্তভোগী বেড়াতে আসলে তাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। এসময় তারা ঘর থেকে ৫০ হাজার টাকা, ১ ভরি স্বর্ণালংকারও নিয়ে যায়। এছাড়া ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে নিয়মিত চাঁদা নিতে থাকে।
বিয়ের পরে ভুক্তভোগী বেড়াতে আসলে তাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। উঠিয়ে নেওয়ার তিন মাস পরে রাসেলকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে মিরপুরের একটি বাসা থেকে তাকে উদ্ধার করে ভুক্তভোগীর মা। এ ঘটনার ১৫ দিন পর রাসেল পুনরায় বাড়ি থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। ১০ দিন পর আবারও ১০ হাজার টাকা দিয়ে নিয়ে আসে।
সর্বশেষ গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর রাসেল আবার ভুক্তভোগীকে নিয়ে যায়। গত সপ্তাহে রাসেল ১ লাখ টাকা দিতে প্রস্তাব দেয় ভুক্তভোগীর মাকে। টাকা না দিলে ভুক্তভোগীর মাকেও মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
বেগমগঞ্জ মডেল থানায় বৃহস্পতিবার রাতে ভিকটিমের মা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে ২টি মামলা দায়ের করেন। বৃহস্পতিবার রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে সাইফুল ইসলাম ইমন ও ফয়সাল নামে দুই এজাহারভুক্ত আসামিকে গ্রেফতার করে।