শ্রমিক সংগঠনের ৬৫ লাখ টাকা লোপাট: অডিট কমিটি
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ট্রাক-ট্যাংকলরি-কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি সাইদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেকসহ কার্যনির্বাহী পরিষদের বিরুদ্ধে ৬৫ লাখ টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সংগঠনটির এক অডিট প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ট্রাক-ট্যাংকলরি-কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের অডিট কমিটির আহ্বায়ক বাবুল হোসেন স্বাক্ষরিত অডিট প্রতিবেদন পর্যালোচনায় করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, তৎকালীন সভাপতি সাইদুর রহমান ও সাধারণ সম্পদক আব্দুল খালেক পেট্রল পাম্প ক্রয়ে অতিরিক্ত মূল্য দেখিয়েছেন ৪০ লাখ টাকা। পেট্রল পাম্প ক্রয়ে খরচের ভাউচার তদন্ত করে ১৬ লাখ টাকার অনিয়ম পেয়েছে অডিট কমিটি। সভাপতি ৫১ হাজার ৫০০ টাকা ও সাধারণ সম্পাদক ৪ লাখ ২১ হাজার ২৮৬ টাকা ভাউচারে অতিরিক্ত দেখিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। অডিট প্রতিবেদনে সংগঠনটির কার্যনির্বাহী পরিষদের অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে ৩ লাখ ৭৯ হাজার ৫১০ টাকার অনিয়ম উল্লেখ করা হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ট্রাক-ট্যাংকলরি-কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের ২০১৬-২০১৮ মেয়াদের সভাপতি সাইদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেকসহ কার্যনির্বাহী পরিষদ আত্মসাৎ করেছেন ৬৪ লাখ ৫২ হাজার ২৯৬ টাকা। ২০১৮ সালে শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনের আগে অডিট আপত্তির পর তাদের মেয়াদকালে আর্থিক অনিয়মের দায় স্বীকার করে অঙ্গিকারনামা দেন সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ। তাদের মেয়াদে সংগঠনের হিসাব বুঝিয়ে দিতে ব্যর্থতা স্বীকার করে তারা বলেন, সেই ভুল-ভ্রান্তির দায়িত্ব তিন জনের উপর থাকবে।
তৎকালীন সময়ের সাইদুর-খালেক পরিষদের বিরুদ্ধে শ্রমিক সংগঠনের অর্থ লোপাটের খবর প্রকাশ্যে আসার পর ক্ষোভ প্রকাশ করেন শ্রমিকরা। গত নির্বাচনে পরাজয় বরণ করেন অব্দুল খালেক। তবে পুনরায় সভাপতি নির্বাচিত হন সাইদুর রহমান। অর্থ কেলেংকারির ঘটনায় সম্প্রতি নতুন বাসটার্মিনালে অনুষ্ঠিত শ্রমিক সংগঠনটির সভায় হাতাহাতির ঘটনাও হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শ্রমিকদের অর্থ লুটপাট করে অনেকেই সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। শ্রমিক সংগঠনের কয়েক লাখ টাকা আত্মসাৎ করে বিলাসি জীবনযাপন করছেন কোষাধ্যক্ষ মশিউর রহমান। অভিযুক্ত সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অর্থ লুটপাটের সঙ্গে কোষাধ্যক্ষ মশিউর সরাসরি জড়িত।
কোষাধ্যক্ষ মশিউর রহমান বলেন, ‘আয়-ব্যয়ের মালিক আমি নয়। কোষাধ্যক্ষ হিসেবে শ্রমিক ইউনিয়নের অর্থ গ্রহণ করি, ভাউচার পেলে অর্থ ছাড় করি। সংগঠনের আয়-ব্যয় বা ক্রয় সংক্রান্ত কোনও অনিয়ম হয়ে থাকলে সে দায় আমার নয়।’
অভিযুক্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেকের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে মিটিংয়ে ব্যস্ত আছি জানিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অভিযুক্ত সাইদুর রহমান বলেন, ‘বিগত মেয়াদে একটি ফিলিং স্টেশন ক্রয়কে কেন্দ্র করে হিসাবে কিছু গড়মিল হয়েছিল। পরে পেট্রল পাম্পটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ট্রাক-ট্যাংকলরি-কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের নামে হস্তান্তর করে সেটা সমাধান করা হয়েছে।’
তবে সংগঠনের অর্থ লুটপাট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি।