মশায় নাজেহাল নগরবাসী, দিশেহারা মেয়রদ্বয়
বাসা-বাড়ি অফিস-আদালত রাস্তাঘাট দোকানপাট কোথায় নেই মশা? মশা এখন সর্বত্র। কি দিন, কি রাত, সব সময় সমান তালে মশারা গান গেয়ে যাচ্ছে। চায়ের দোকানে বসে চা পান করা বা মসজিদে বসে নামাজ আদায় করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। ঢাকা মহানগরীর দুই মেয়র মশা নিয়ন্ত্রণে নানা কথা বললেও বাস্তবে তেমন একটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন নগরবাসী।
এবার মশার বিরক্তিকর গান এতটাই যন্ত্রণাদায়ক হয়ে উঠেছে নগরবাসী দুই মেয়র এর দায়িত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। কেউ কেউ বলেছেন বেশি কথা না বলে মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করুন আর না হয় দায়িত্ব ছেড়ে দিন।
আবার কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন রাজধানী ঢাকা এখন মশার নগরীতে পরিণত হয়েছে। অনেকে বলেছেন কালেভদ্রে সিটি করপোরেশনের কর্মীদের মশার ওষুধ স্প্রে করতে দেখা যায়, নিয়মিত কাউকে চোখে পড়ে না।
বনশ্রীর বাসিন্দা মিজানুর রহমান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আমি প্রায় ১০ বছর ধরে ঢাকায় আছি, এবারের মত এত মশা কোন বছরে দেখি নাই। বাসায় দিনের বেলাও মশারি টাঙিয়ে থাকতে হয়। মেয়ররা তো শুধু বড় বড় প্রজেক্ট নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, মশা নিয়ন্ত্রণে তাদের নজর কম। আমার এলাকায় গত একমাসে একদিনও মশার ওষুধ স্প্রে করতে দেখি নাই। উনারা শুধু বড় বড় কথা বলেন কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না।
গোড়ান এলাকার বাসিন্দা শামীম আহমেদ মেয়রদের উদ্দেশ্যে বলেন, কথা কম বলে মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করুন, নয়তো দায়িত্ব ছেড়ে দিন। এভাবে শুধু মিডিয়াতে বড় বড় কথা বললে মশা মরবে না। আপনাদের লোক ঠিকমতো ওষুধ স্প্রে করে কিনা সেটার নজরদারি বাড়াতে না পারলে কখনো মশা নিয়ন্ত্রণে আসবে না। তাই মেয়র মহোদয়দের বলবো আপনারা একটু বেশি নজর দিন।
রাজধানীর মশার উপদ্রব নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বার্তা২৪.কম-কে বলেন, "দুই মেয়র এর চেষ্টার কমতি নেই। তবে এবার কিউলেক্স মশার ঘনত্ব অনেক বেশি। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে ঢাকা সিটিতে যেসকল বদ্ধ জলাশয় রয়েছে সেগুলোতে পানি প্রবাহ বাড়াতে না পারলে বা সঠিক জায়গায় সঠিক মাত্রায় ওষুধ প্রয়োগ করতে না পারলে মশা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।"
তিনি বলেন, ভারী বৃষ্টি হলে বা পানি প্রবাহ বাড়লে মশার উপদ্রব কিছুটা কমবে। তবে এই মুহূর্তে সিটি কর্পোরেশন গুলোকে বেশি বেশি করে ওষুধ বা কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে বিশেষ করে যেসব জায়গায় জলাশয় বা যেসব জায়গায় পানি জমাটবদ্ধ আছে সেখানে মশার ওষুধ স্প্রে করতে হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, "মশা এই মুহূর্তে আমাদের জন্য বড় ‘থ্রেটেনিং’। এজন্য ৮ মার্চ থেকে বিশেষ অভিযান চালানো হবে।"
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, "আমরা যে উদ্যোগগুলো নিয়েছি, যে কার্যক্রম গ্রহণ করেছি তাতে এরই মাঝে মশার উপদ্রব আগের চাইতে কমতে শুরু করেছে।"
মশা নিয়ন্ত্রণে দুই সিটি করপোরেশনের উদ্যোগ:
মশা নিধনে উত্তর সিটি কর্পোরেশন ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেট বরাদ্দ রেখেছে ৭৭ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেট ছিল ৪৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা। তার আগে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ২৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা। অন্যদিকে মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যক্রমের জন্য ২০২০-২০২১ অর্থবছরের ৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বাজেট ছিল ৪৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এর আগে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে একই কার্যক্রমের জন্য ডিএসসিসির বাজেট ছিল ১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
এছাড়াও মশা নিয়ন্ত্রণের দুই সিটি কর্পোরেশনই পুরাতন ওষুধ বদলে নতুন ওষুধ কিনেছে। এছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন মশা নিয়ন্ত্রণে ড্রন চালু করেছে। তাতেও কোন কাজে আসছে না। উপরন্তু দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় মশার উপদ্রব বেড়েই চলেছে এদিকে মশা নিয়ন্ত্রণে দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র হিমশিম খাচ্ছে বলে জানা গেছে। ফলে একদিকে নাজেহাল নগরবাসী অন্যদিকে দিশেহারা দুই মেয়র।