বরিশালে বাড়ছে নারী বাইকারদের সংখ্যা, নিরাপত্তার অভাব
মেধা-মনন, রাজনৈতিক, সমাজসেবা আর চাকরিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের অবদান পুরুষের তুলনায় কম নয়। এবার যান্ত্রিক বাহনেও রয়েছে নারীদের অনিস্বীকার্য অবদান। আকাশ পথে বিমান চালানো থেকে শুরু করে সড়ক পথে ব্যক্তিগত গাড়ী, মোটরবাইকসহ বিভিন্ন যানবাহন চালানোর পারদর্শীতা দিন দিন বাড়ছে।
বিশেষ করে ঢাকাসহ সারাদেশের ন্যায় বরিশালেও দিনে দিনে বাড়ছে নারী বাইকারদের সংখ্যা। পাশাপাশি তরুণী ও মধ্যবয়স্ক নারীদের আগ্রহ বাড়ছে বাইক চালানো প্রশিক্ষণ নেওয়ার উপরে। তবে বিভিন্ন কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এই নারী বাইকাররা।
বিভিন্ন নারী বাইকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৯০ এর দশকে বরিশাল শহরের রাস্তাগুলোতে প্রথম হাতে গোনা কয়েকজন নারীকে মোটরসাইকেল চালাতেন। ২০১০-১১ সালের দিকে বেশকয়েকটি বেসরকারি কোম্পানির কয়েকজন নারী প্রতিনিধিরা মোটরসাইকেল চালানো শুরু করেন। এভাবে ২০১৬-১৭ সালের দিকে নারী বাইকারদের সংখ্যা আগের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
আরো জানা গেছে, শুরুর দিকে ৮০ সিসির মোটরসাইকেল চালানোর অভ্যাস থাকলেও এখন প্রশিক্ষণ নিয়ে বরিশাল নগরীসহ জেলা-উপজেলা শহরে দেড়শ সিসির মোটরসাইকেলও চালান সাহসী ও উদ্যমী নারীরা। বর্তমানে বরিশাল নগরীতে তিনটি নারী বাইক চালানোর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে । এতে ৫ শতাধিক নারী বাইকার প্রশিক্ষণ নিয়ে বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জায়গায় চলাফেরা করছেন। বর্তমানে বরিশাল নগরীতে শতাধিক নারী বাইকার রয়েছেন।
সানজানা নামে এক কলেজছাত্রী বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘নগরীর ভাটিখানা জোড় মসজিদ থেকে বরিশাল সরকারী মহিলা কলেজ চলাকালে ক্লাশ ও বিএম কলেজ এলাকায় পাইভেট পড়তে দুই/তিনবার যেতে একাধিক অটোরিকশা বা প্যাডেলচালিত রিকশায় চলাফেরা করতে হয়। এতে প্রতিদিন গড়ে দেড়শ টাকার বেশি খরচ হতো। এক পর্যায়ে বাড়িতে একটি ব্যাটারি চালিত মটোরবাইক কিনে দেওয়ার অনুরোধ করি। কিন্তু বাবা সমাজব্যবস্থার বিবেচনা করে প্রথমে রাজী না হলেও পরে বাইক কিনে দিতে রাজি হন। এরপর প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন বাইরে বাইকে চলাফেরা করি।’
স্বপ্ন ওমেন্স ড্রাইভিং স্কুল বিডি’র পরিচালক ও ট্রেনার লিজা আক্তার হেনা বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘আমি নিজে প্রথম ২০১১ সালের দিকে মোটরসাইকেল চালানো শিখি। তারপর স্কুল-কলেজ পড়ুয়া, কর্মজীবী তরুণী ও মধ্যবয়স্ক নারীদের মোটরসাইকেল চালানোর আগ্রহ দেখে প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান দেওয়ার আগ্রহ হয়। ২০১৭ সালের দিকে স্বপ্ন ড্রাইভিং নামে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘পুরুষদের জন্য মোটরসাইকেল চালানো যত সহজ, নারীদের ক্ষেত্রে তত সহজ নয়। কেননা নারীদের জন্য পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের বাধা রয়েছে। আবার নারীরা বাইক নিয়ে রাস্তায় বের হলেই বখাটেরা হা করে তাকিয়ে থাকে এবং বিভিন্ন আপত্তিকর মন্তব্য করে। পাশাপাশি রাস্তায় চলাফেরায় সময় অটোরিকশা, আলফা, সিএনজি ও মহাসড়কে বাস-ট্রাক চালকরা জায়গা দিতে চায় না। চাপিয়ে চাপিয়ে চলে যায়। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।’
এই নারী প্রশিক্ষক বলেন, ‘নানা অসুবিধায় নিরাপত্তাহীতায় ভোগেন নারী বাইকাররা। পাশাপাশি বিআরটিএ কার্যালয়ে নারীদের জন্য আলাদা ডেক্স না থাকায় লাইসেন্স পেতেও অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়।’
এ সময় দুর্ঘটনা, লাইসেন্স আর নিরাপত্তা ব্যাবস্থায় কর্মরত ট্রাফিক পুলিশ, বিআরটিএ কর্মকর্তা ও প্রশাসনের সহযোগীতা কামনা করেন এই নারী বাইকার।