‘দু’দেশের এগিয়ে যাওয়া এই অঞ্চলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ’
ভারত-বাংলাদেশ একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
তিনি বলেন, দুই দেশের এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের শক্তিশালী গণতন্ত্র রয়েছে। ৭১ সালের মতো এখনও সমান বিপদও রয়েছে। এই জাতীয় অমানবিক ঘটনাবলীর পরিকল্পনাকারী ও বাস্তবে রূপদানকারী শক্তিগুলো এখনও সক্রিয় রয়েছে। আমাদের অবশ্যই তাদের থেকে সাবধানে থাকতে হবে এবং ওদের মোকাবিলা করার জন্য সংগঠিতও হতে হবে। আমাদের উভয় দেশেই গণতন্ত্রের শক্তি রয়েছে, এগিয়ে যাওয়ার সুস্পষ্ট দূরদর্শিতা রয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ অগ্রযাত্রা এই পুরো অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য সমান জরুরি।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে দশ দিনের আয়োজনের ১০ম দিনের অনুষ্ঠানে শুক্রবার (২৬ মার্চ) বিকেলে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এসব কথা বলেন।
আজকের অনুষ্ঠানের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর ও অগ্রগতির সুবর্ণরেখা’।
প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত রয়েছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সভাপতি হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানাও অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
নরেন্দ্র মোদি এ সময় বাংলাদেশের ভাষা শহীদ ও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া ভারতীয় সেনাদের শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে যেমন পাকিস্তানি সেনাদের অত্যাচার চলছিল। অন্যদিকে ভারতীয়রা শান্তিতে বসে ছিল না। পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত জঘন্য অপরাধ ও নৃশংসতার চিত্রগুলি আমাদের বিচলিত করত এবং রাতের পর রাত বিনিদ্র করে রাখত।
‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা আমরা তাদের ভুলব না’- গোবিন্দ হালদারের গানটি গেয়ে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে যাদের অবদান ছিলো যারা তাদের রক্ত দিয়ে বাংলাদেশকে মুক্ত করেছিলেন, আমরা তাদের ভুলব না। মুক্তিযুদ্ধে ভারতের তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীজীর প্রয়াস ও মাহাত্ম্যপূর্ণ ভূমিকা সর্বজনবিদিত।
বিহারী বাজপেয়ির অবদান তুলে ধরে তিনি বলেন, ওই সময়েই ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ অটল বিহারী বাজপেয়ির বলেছিলেন, “আমরা কেবল মুক্তি সংগ্রামে আত্মোৎসর্গকারীদের সাথে লড়াই করছি, সেই সাথে আমরা ইতিহাসকে একটি নতুন দিশা দেয়ার প্রচেষ্টাও করছি। আজ বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামীদের সাথে ভারতীয় সেনারাও নিজেদের রক্ত বিসর্জন দিচ্ছে। এই রক্ত একটি নতুন বন্ধন সৃষ্টি করবে যা কোন অবস্থাতেই ভাঙবে না, কোন কূটনীতিরও শিকার হবে না।” আমাদের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী জী বঙ্গবন্ধুকে একজন অক্লান্ত রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে অভিহিত করেছিলেন।
নরেন্দ্র মোদি বলেন, একটি স্বৈরাচারি সরকার তার নিজস্ব নাগরিকদের গণহত্যা করছিল। তাঁদের ভাষা, তাঁদের কণ্ঠস্বর ও পরিচয়কে চূর্ণ করছিল। অপারেশন সার্চলাইটের নিষ্ঠুরতা, নিপীড়ন ও অত্যাচারের বিষয়টি নিয়ে বিশ্বের যতটা সোচ্চার হওয়া উচিত ছিল তা হয়নি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গোটা ভারতবর্ষের মুক্তি সংগ্রামের আশার আলো ছিলেন বলে জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সাহস ও তাঁর নেতৃত্ব এটা নিশ্চিত করেছিল যে, কোনও শক্তিই বাংলাদেশকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না। বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেছিলেন- “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। তাঁর নেতৃত্বে সাধারণ মানুষ, কৃষক, যুবক, শিক্ষক ও শ্রমিক সকলেই এক হয়ে মুক্তিবাহিনী গঠন করে। তাই আজকের এই দিনটি মুজিববর্ষ , বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন, তাঁর আদর্শ ও সাহসকে স্মরণ করার জন্যও আদর্শ একটি দিন। আজকের এই সময় “চির বিদ্রোহী” ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আবার স্মরণ করার সময়।
এ সময় নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্বের সুবর্ণজয়ন্তীতে ‘বৃত্তি’ চালুর ঘোষণা দিয়েছেন।