‘দুধ কলা দিয়ে গোখড়া সাপ পুষতে নাই’- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ইনু
সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, দুধ কলা দিয়ে গোখড়া সাপ পুষতে নাই। গোখরা সাপ কিন্তু দিনের শেষে যে পুষবে তাকেই ছোবল মারবে। আমি এই সতর্কবানী উচ্চারণ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আহ্বান জানাবো, আপনি রাগ-ঢাক না করে মামুনুল হক ও বাবুনগরীদের নাম উচ্চারণ করেন বলিষ্ঠভাবে। তাদের গ্রেফতার করেন, কারাগারে নিক্ষেপ করেন এবং জঙ্গিদের যেভাবে দমন করেছেন সফলভাবে তাদের দমন করেন।
রোববার (০৪ এপ্রিল) স্পিকার ড. শিরীন শারিমন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে এই দাবি করেন তিনি।
এ সময় আরও বলেন, মামুনুল হক বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেইটে প্রকাশ্যে হুংকার দিয়ে বক্তব্যে দিয়েছেন, বাবুনগরী চট্টগ্রামে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে বক্তব্যে দিয়েছেন। এরজন্য দূরবীন দিয়ে মামুনুল হক বাবুনগরীকে খোঁজা লাগবে না। ডিজিটাল সমাজে প্রত্যেক ঘরে ঘরে তাদের ভাষণ আছে। সুতরাং মামুনুল হক এবং বাবুনগরীকে কেন প্রধান উসকানিদাতা হিসাবে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবার জন্য গ্রেফতার করা হচ্ছে না?
তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনি রাগ-ঢাক না করে মামুনুল হক ও বাবুনগরীদের নাম উচ্চারণ করেন বলিষ্ঠভাবে। তাদের গ্রেফতার করেন, কারাগারে নিক্ষেপ করেন এবং জঙ্গিদের যেভাবে দমন করেছেন সফলভাবে সেভাবে আপনার সক্ষমতা আছে যোগ্যতা আছে আপনি দমন করেন। আপনি দমন করে রাষ্ট্রকে নিরাপদ করেন।
হাসানুল হক ইনু বলেন, এই অপশক্তিকে ছাড় দেওয়া উচিত না। মনে রাখবেন বিএনপি সমর্থন করছে। বিএনপি কি? ফেরেশাস্তার নেতা ছিলেন ইবলিশ, আল্লাহর নির্দেশ না পালন করে ইবলিশ, ইবলিশে পরিণত হয়। উনি ফেরেস্তাগিরি ছেড়ে দোযখের ঠিকাদারি নেয়, ঠিক তেমনি বীরউত্তম জিয়াউর রহমান আর কতিপয় মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধার কাজ বাদ দিয়ে রাজাকারের ঠিকাদারি নেন। সেই রাজাকারীর ঠিকাদারির দল বিএনপি। সেই বিএনপি আজকে সরাসারি হেফাজতকে সমর্থন দচ্ছেন। অর্থাৎ হেফাজত ইসলাম পাকিস্তানের রাজাকার এবং পাকিস্তান পন্থার মুখোশে খেলছেন বিএনপির ভাড়াটে খেলোয়ার হিসেবে।
হাসানুল হক ইনু বলেন, হেফাজতের রাষ্ট্র সংবিধান গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে অস্বীকার করার এই দুষ্কর্ম কার্যত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার সামিল। তারা ঢাকাতে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার হুমকি, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেওয়ার হুমকি কুষ্টিয়াতে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য আক্রমণ করে ভাঙার ঘটনা এ সবই আমাদের নজরে নেওয়া উচিত এই জন্য যে বঙ্গবন্ধু হচ্ছেন রাষ্ট্রের প্রতীক, বঙ্গবন্ধুকে আক্রমণ করা মানে হচ্ছে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা। রাষ্ট্রকে অস্বীকার করা। এটা শুধুমাত্র ছোট খাটো আইনশৃঙ্খলা ব্যত্যয়ের ঘটনা নয়।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর দেখেছি যে সাম্প্রতিককালে হেফাজতে ইসলাম স্ব নামে নিজ নামে সুনামগঞ্জের সাল্লায় সংখ্যলঘু সম্প্রদায়ের বাড়িতে আক্রমণ পরিচালনা করেছে। এটা সংবিধান অনুযায়ী সাম্প্রদায়িক সম্পৃতি রক্ষার যে অঙ্গীকার সেই সম্পৃতি বিনষ্ট করার একটা মহাচক্রান্ত এবং দুষ্কর্ম। এটা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত।
বিএনপি-জামায়াত-হেফাজত একই চক্র উল্লেখ করে বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজত যে তাণ্ডব চালিয়েছিল সশস্ত্র তাণ্ডব চালিয়েছিল ঢাকা শহরে সেদিন বিএনপি সরাসরি যে সমর্থন দিয়েছিল তা থেকে পরিষ্কার হেফাজতে ইসলাম বিএনপি জামায়াত জঙ্গি একই চক্র একই গোষ্ঠী। এরা ‘৭১ এর রাজাকারের উত্তরসুরি। এবারও স্বাধীনতা দিবসে যে তাণ্ডব চালাল বিএনপি তারাও প্রকাশ্যে রাগ-ডাক ফেলে দিয়ে সরাসরি সমর্থন দিল এবং এখনো বিএনপি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ বিএনপি হেফাজত যতই আলাদা করার চেষ্টা করুক না বিএনপি হেফাজত জামায়াত জঙ্গি আসলেই ৫ মে শাপলা চত্বরের মতো এক সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। এর রাষ্ট্রের জন্য হুমকি স্বরূপ, বিপদ স্বরূপ।
তিনি পুলিশের নিরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, দুঃখের সঙ্গে বলছি হেফাজতের তাণ্ডবের মধ্যে পুলিশ প্রশাসনের অসহায়ত্ব প্রকাশ পেয়েছে, এই দুর্বলতা কেন? কিসের সমস্যা। পুলিশের গাড়িতে আগুন, আসামি ছিনতাই। পুলিশ কি তার নৈতিক বল হারিয়ে ফেলেছে? পুলিশের কি জনবল কম হয়ে গিয়েছে? আমি তো দেখেছি পুলিশকে চমৎকারভাবে শাপলা চত্বর মোকাবিলা করেছে সুতরাং পুলিশ কেন অসায় এটা আমাদের সংসদ নেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব জন্ম শতবর্ষের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বাংলাদেশ সরকার যে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, তা বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছিলেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। তার পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে হেফাজতে ইসলাম। পরে সারাদেশে তাদের কর্মীদের ওপর নির্যাতন ও গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে গত ২৮ মার্চ হরতালে ডাকা দেয় তারা। আর এই সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনায় পৃথক ৬টি মামলা করে পুলিশ।