সরকারি প্রতীক ও সিলের অপব্যবহার
বিশ্বায়ন এবং মুক্তবাজার অর্থনীতির যুগে মানুষের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে পণ্য ও সেবার প্রসার যেমন ঘটছে তেমনি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে নকল ও জালিয়াতির ঘটনাও। প্রসাধনী থেকে শুরু করে খাদ্য দ্রব্য, ইলেকট্রনিক পণ্য, নির্মাণ সামগ্রী, ওষুধ এমনকি খেলনা পর্যন্ত নকল পণ্যে ছেয়ে গেছে। ভোক্তাদেরও যেনো কোনো উপায় নেই আসল কিংবা ভেজাল পণ্য যাচাই করার। অসাধু চক্রগুলো ন্যূনতম নীতি-নৈতিকতার ধার না ধেরেই এসব জালিয়াতি করছে।
ভোক্তাদের অজ্ঞতা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে এসব নকল পণ্য দেদারসে বাজারে চলছে যা আমাদের আর্থ সামাজিক কাঠামোকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে।
ঠিক এরকমই আরেকটি অন্যায় হয়ে আসছে যেটি হলো- সরকারি সিল বা মোহরের অপব্যবহার। কিছু মহল তাদের রাজনৈতিক, সামাজিক এবং আর্থিক স্বার্থের জন্য সরকারি সিলের অপব্যবহার করছে। তারা নিজেদেরকে সরকারি সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রচলিত আইনের তোয়াক্কা না করেই তাদের বিপণন যোগাযোগ যেমন বিজ্ঞাপন, প্রচারণা, প্রেস বিজ্ঞপ্তি ইত্যাদি এমনকি সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও আনুষ্ঠানিক যোগাযোগের ক্ষেত্রেও সরকারি সিল ব্যবহার করছে।
দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সরকারের সঙ্গে বিভিন্নভাবে যুক্ত রয়েছে, কিন্তু তারা সরকারি প্রতীক বা সিল ব্যবহার করার কর্তৃত্ব রাখে না। তবে দুর্ভাগ্যক্রমে অনেকে ইতিমধ্যেই সাংবিধানিক নীতিমালার প্রতি ন্যূনতম সম্মান না রেখে সকল নীতি-নৈতিকতা লঙ্ঘন করে চলেছে যা জনসাধারণের সঙ্গে প্রতারণার সামিল। সরকারি সিল বা প্রতীক হলো একটি দেশের সার্বভৌমত্বের পরিচয় চিহ্ন।
সংবিধানেই সিল ব্যবহারের বিষয়ে “দি বাংলাদেশ নেমস অ্যান্ড এমব্লেমস (প্রিভেনশন অফ আনঅথোরাইজড ইউজ) অর্ডার, ১৯৭২” এর ৩য় অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা কোনো পেশাগত উদ্দেশে সরকারি সিল বা প্রতীক ব্যবহার করা দণ্ডনীয় অপরাধ।
শুধু আমাদের দেশেই নয়, বিশ্বের প্রায় সব দেশেই একই রকম আইন রয়েছে। যেমন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতারণামূলক উদ্দেশে সরকারি সিল তৈরি, নকল করা, জালিয়াতি করা, পরিবর্তন করা, কাটাছেঁড়া করা এমনকি অবৈধভাবে সরকারি সিল অথবা প্রতীক ব্যবহারে জড়িত থাকার কারণেও কঠোর শাস্তি হতে পারে। ভারতে “দি এমব্লেমস অ্যান্ড নেমস (প্রিভেনশন অফ ইমপ্রপার ইউজ) অ্যাক্ট, ১৯৫০” এর অধীনে বাণিজ্যিক লাভের জন্য সরকারি সিলসহ জাতীয় প্রতীকগুলোর অবৈধ ও অনুপযুক্ত ব্যবহার প্রতিরোধে নানাবিধ শাস্তি বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই উদ্যোগগুলো নেওয়া হচ্ছে যাতে সরকারি সিল কিংবা প্রতীকের অপব্যবহার রোধ করে জাতীয় নিরাপত্তা ও সুশাসন নিশ্চিত করার পাশাপাশি সর্বোপরি নাগরিকদের সুরক্ষা, বৈধতা এবং মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা যায়।
দেশ যখন দ্রুত অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে তখন আরও বেশি সচেতন হওয়া প্রয়োজন যেনো রাজনৈতিক, সামাজিক বা অর্থনৈতিক স্বার্থে কোনো পক্ষই রাষ্ট্রীয় প্রতীকের অপব্যবহার করে সাধারণকে প্রতারিত করতে না পারে। যারা আইন লঙ্ঘন করছে বা এই জাতীয় কর্মকাণ্ডে যুক্ত রয়েছে তাদেরকে অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা উচিত। এই পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করলে দায়িত্বশীলতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে, আমাদের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি আরও ত্বরান্বিত হবে এবং টেকসই উন্নয়নের মজবুত ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।