ডিজিটাল সুরক্ষা দিতে সুদক্ষ হতে হবে: মোস্তাফা জব্বার
ডিজিটাল বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত স্মার্ট ডিভাইস আর ইন্টারনেট ভোক্তার সংখ্যা বাড়ছে। সাথে বাড়ছে ডিজিটাল অপরাধের সংখ্যাও। আইন-শৃ্ঙ্খলা বাহিনী অনুযায়ী ডিজিটাল নিরাপত্তা সেবাদাতা সদস্যের সংখ্যা অপ্রতুল। নিরাপদ ইন্টারনেট থেকে শুরু করে ডিজিটাল নিরাপত্তায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর আরও দক্ষতা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) আয়োজিত ‘সেফ ইন্টারনেট’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়াতে পারলেও প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে জাতিকে পুরোপুরি সচেতন করে তুলতে পারিনি। এটা রাতারাতি হয়ে যাওয়ার মতো বিষয়ও নয়। শিক্ষার্থীদের আগে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করতে দেওয়া হতো না। করোনা সময়ে ডিজিটাল ডিভাইস ছাড়া শিক্ষার্থীরা শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হতে পারছে না। সমস্যা হচ্ছে আমাদের সন্তানেরা ডিজিটাল ডিভাইসের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলতে পারলেও অভিভাবকেরা এখনও প্রযুক্তিবান্ধব হয়ে উঠতে পারেননি। তাই অভিভাবকদের সচেতনতা বাড়ানো গেলে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব বলে মনে করেন মোস্তাফা জব্বার।
নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, আইসিটি বিভাগের পাশাপাশি প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়কেও উদ্যোগ নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেটের ইতিবাচক ব্যবহার সম্পর্কে উৎসাহিত করতে হবে।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর শিকদার বলেন, ‘ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) উচিৎ ইন্টারনেট সংযোগে যেসব বাসায় শিশু বা শিক্ষার্থী আছে সেসব বাসায় বিনা মূল্যে অভিভাবককে সহায়তা করা। ফলে শিশুদের ইন্টারনেটে অনেকাংশে নিরাপদ রাখা সম্ভব হবে। গ্রামাঞ্চলের দিকে অভিভাবকদের মধ্যে ডিজিটাল ডিভাইস এবং ইন্টারনেট সম্পর্কে জ্ঞান নেই বললেই চলে। অনেকাংশে শিক্ষকদের মধ্যেও ডিজিটাল জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা লক্ষণীয়। গ্রামীণফোন এমন সচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে। অন্যান্য টেলিকম প্রতিষ্ঠানদেরও এ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধে সাইবার আদালতের সংখ্যাও বাড়াতে হবে।’
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. আফজাল হোসেন বলেন, ‘ইউনিয়ন অবধি ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। যত সেবা বাড়বে তত সেবার সাথে যুক্ত লোকের সংখ্যা বাড়বে। তাই ইন্টারনেট সচেতনতা এখন গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর দেশৗয় বিকল্প তৈরির ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে। ভবিষ্যতে ফেসবুক ফিল্টারিং বিষয়েও আমরা কাজ করব।’
নিরাপদ ইন্টারনেটের অন্যতম শর্ত হলো ইন্টারনেটের সচেতন ব্যবহার। শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেটে নিজের ভাষায় পর্যাপ্ত কনটেন্ট পাচ্ছে না। যার কারণে ইতিবাচক বিষয়ের চেয়ে নেতিবাচক বিষয়ের প্রতি ঝুঁকে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। শিশুদের জন্য উপযুক্ত কনটেন্ট তৈরির পাশাপাশি যুব সমাজকে সময়ানুবর্তিতার ব্যাপারেও সচেতন করতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সেফ ইন্টারনেট কার্যক্রম সফল করা সম্ভব বলে বিশ্বাস করেন বিসিএস সভাপতি মো. শাহিদ-উল-মুনীর।
বিসিএস মহাসচিব মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। ইনোভেশন কনসাল্টিং প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রুবায়েত সরওয়ারের সঞ্চালনায় বিটিআরসি পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ, ওয়েবিনারে ফাইবার অ্যাট হোমের প্রধান কারিগরি কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদ সুমন, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সহযোগী অধ্যাপক ড. হেলাল উদ্দিন আহমেদ, ৭১ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু ছাড়াও জিপি, রবি, বাংলালিংক এবং টেলিটকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আলোচনায় অংশ নেন।