১২ এপ্রিল ভোক্তাপর্যায়ে এলপিজির দাম ঘোষণা
আগামী ১২ এপ্রিল (সোমবার) ভোক্তাপর্যায়ে এলপিজির (লিকুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস) দাম ঘোষণা করবে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। ওইদিন বেলা সাড়ে ১১টায় ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে এলপিজির দাম ঘোষণা করা হবে। একইসঙ্গে এলপিজি’র মূল্যহার নির্ধারণ/পুনঃনির্ধারণ সম্পর্কে কমিশনের নিজস্ব ওয়েবসাইটে (www.berc.org.bd) আপলোড করা হবে।
বিইআরসি’র চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বার্তা২৪.কম-কে বলেছেন, দর কতো হচ্ছে এখনই বলতে চাচ্ছি না। তবে এটুকু বলতে পারি, সবাই খুশিই হবে। সবপক্ষকে অ্যাড্রেস করা হয়েছে।
এশীয় অঞ্চলের দেশগুলো সৌদি আরামকোর দরকে ভিত্তি ধরা হয়েছে। বিইআরসির দরের ফর্মুলা কি হচ্ছে। জবাবে বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, আইপিপি (ইমপোর্ট পার্টি প্রাইস) সারা পৃথিবীতে এই ফর্মুলা ফলো করে। বাংলাদেশেও একই ফর্মুলা ফলো করা হবে।
ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকাসহ এশীয় অঞ্চলের দেশসমুহ সৌদি আরামকো নির্ধারিত প্রতিমাসের দর স্ব স্ব দেশের এলপিজির দর নির্ধারণের সূচক বিবেচনা করা হয়। আমদানি পর্যায়ের মূল্যকে ভিত্তি মূল্য ধরে পরিবহন ও অন্যান্য কমিশন যুক্ত করে বাজার মূল্য চূড়ান্ত করা হয়। বাংলাদেশেও এমন পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে। একটি হচ্ছে এনার্জির দাম আমদানিকৃত এলপিজির মূল্য। আরেকটি থাকবে পরিবহন খরচ, কোম্পানির ও পরিবেশকের মুনাফা এবং অন্যান্য।আরামকোর দরের সঙ্গে শুধু এনার্জি দর উঠানামা করবে, অন্যান্য খরচ অপরিবর্তিত থাকবে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরাও অনেকে এই মতের সঙ্গে একমত। তারা মনে করছেন প্রত্যেক মাসে গণশুনানি তারপর দর নির্ধারণ করার বিষয়টি সময় সাপেক্ষ ও জটিল। সে কারণে স্বয়ংক্রিয়ভাবে হলেই ভালো। এতে কারো বেশি লাভ কিংবা কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সুযোগ কম থাকবে।
তবে স্বংক্রিয় দরের বিপক্ষে মত দিয়েছেন ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম। তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেছেন, স্বংক্রিয় করার বিষয়ে আইন পারমিট করে না। আমরা তাদের বেতন দিচ্ছি তারা এটি করবে। সক্ষমতা না থাকলে প্রয়োজনে তারা সক্ষম হবে। দর পরিবর্তন হলে সেই পণ্য দেশে আসতে ৩০ থেকে ৪৫ দিন সময় প্রয়োজন হয়। তখন আবার গণশুনানি করবে।
বহুমুখী বাজার, অর্ধশতাধিক কোম্পানি, হাজার হাজার পরিবেশক, লক্ষাধিক খুচরা বিক্রেতা, সর্বোপরি আমদানি নির্ভর এই জ্বালানির অস্থিতিশীল বাজার বিষয়টিকে বেশ জটিল করে তুলেছে। দেশে ব্যবহৃত এলপিজির সাড়ে ৯৮ ভাগ আমদানি নির্ভর। সরকার এখন পর্যন্ত ৫৬টি কোম্পানি অনুমোদন দিয়েছে। এরমধ্যে ২৮টি মার্কেটে রয়েছে ২০টি প্রস্তুতি নিচ্ছে। সরকারি কোম্পানির মার্কেট শেয়ার মাত্র দেড় শতাংশ।
এতদিন এলপিজির দর কোম্পানিগুলোর ইচ্ছাধীন ছিল। দর নির্ধারণের বিষয়ে অনেকদিন ধরেই কথা হলেও জ্বালানি বিভাগ, বিইআরসি নাকি বিপিসি করবে সে নিয়ে ছিল রশি টানাটানি। সর্বশেষ ক্যাবের এক রিটের প্রেক্ষিতে হাইকোট এলপিজির দর নির্ধারণ করার জন্য বিইআরসিকে শোকজ করে। সে মোতাবেক দর চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়ায় অংশ হিসেবে ১৪ জানুয়ারি গণশুনানি গ্রহণ করে বিইআরসি। শুনানিতে প্রমিতা এলপিজি ১২ কেজি ওজনের সিলিন্ডার প্রতি ৮৫৩ টাকা, সরকারি কোম্পানি বিএলপিজি ৭০০ টাকা, এলপিজি অপরেটস এসোসিয়েশন ১২৫৯ টাকা করার প্রস্তাব জমা দেয়।
অন্যদিকে দরের মতো প্রপেন ও বিউটেন একেক কোম্পানি একেক মিশ্রণে বাজারজাত করছে। বাংলাদেশের একশ বছরের তাপমাত্রা রেকর্ড অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৪৫ ডিগ্রি, সর্বোনিম্ন ২.৬ তাপমাত্রার রেকর্ড রয়েছে। তাপমাত্রা অনুযায়ী প্রপেন ৩০ হতে ৪০ শতাংশ এবং বিউটেন ৭০ থেকে ৬০ শতাংশ চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে বলে কমিশন সূত্র জানিয়েছে।
২০০৮-০৯ অর্থ বছরে দেশে এলপিজি ব্যবহৃত হয়েছে ৪৪ হাজার ৯৭৪ মেট্রিক টন। কয়েক বছরে চাহিদা বেড়ে ১২ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। জাইকার এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে ৩০ লাখ টন ও ২০৪১ সালে চাহিদা হবে ৬০ লাখ টন।