বগুড়ায় হঠাৎ বেড়েছে ছিনতাইকারী চক্রের তৎপরতা!
বগুড়ায় হঠাৎ করে বেড়ে গেছে ছিনতাইকারী চক্রের তৎপরতা। প্রতি রাতেই শহরের কোন না কোন স্থানে ছিনতাইকারী চক্রের কবলে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন ঘরে ফেরা মানুষ। সন্ধ্যা রাত থেকে ভোর রাত পর্যন্ত ছিনতাই হচ্ছে বিচ্ছিন্নভাবে। গত ১০ দিনে বগুড়া শহরের বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে কমপক্ষে ১৫টি। এই সময়ে ছিনতাইকারী নামের দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন বিশু নামের এক যুবক। এছাড়াও ছুরিকাঘাতে একজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ আহত হয়েছেন আরও ৪ জন।
তারপরেও অধরা রয়ে গেছে ছিনতাইকারীরা। এতগুলো ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি কাউকে।
শনিবার ( ১০ এপ্রিল) রাতে দুইটি স্থানে চারজন ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন। ছিনতাইকারীর কবলে পড়া পান-সিগারেটের দোকানি সঞ্জয় কুমার জানান, শনিবার রাতে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরছিলেন। রাত ২টার দিকে শহরের কৈপাড়া এলাকায় বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছালে পাঁচজন মুখোশ পড়া দুর্বৃত্ত ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে ১৩ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। একই রাতে শহরের আকাশতারা এলাকায় ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন ঢাকা ফেরত আব্দুস সালাম। তিনি জানান, বিদেশ ফেরত ভাগিনা মানিককে সাথে নিয়ে সিএনজি চালিত অটোরিকশা যোগে তারা গাবতলীর দুর্গাহাটা গ্রামে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে আকাশতারা এলাকায় সাতজন দুর্বৃত্ত বাঁশ দিয়ে বেরিকেট দিয়ে অটোরিকশাটি থামায়। এরপর সালামকে ছুরিকাঘাত করে ৩ হাজার ৪শ' টাকা, তার ভাগিনা মানিককে ছুরিকাঘাত করে ৫৬ হাজার টাকা এবং অপর এক যাত্রীর কাছ থেকে ৪শ' টাকা ছিনিয়ে নেয়।
ভুক্তভোগীরা জানান, চন্দনবাইশা সড়কে শহরের চেলোপাড়া থেকে কৈপাড়া ব্রাক অফিস পর্যন্ত দুই এক কিলোমিটার রাস্তায় গত এক সপ্তাহে আরও ৫টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে বড়িয়া এলাকার রঞ্জু, কৈপাড়ার চা দোকানি স্বদেশের নাম জানাগেছে। এছাড়াও এই সড়কে রাতের বেলা ট্রাক থামিয়ে ব্যাটারি ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটেছে।
সবচেয়ে মর্মান্তিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে গত ৪ এপ্রিল রাত ৯টার দিকে। বিশু মিয়া নামের এক বেকার যুবক গ্রামের বাড়ি থেকে ফিরে পায়ে হেটে সরকারি আজিজুল হক কলেজ চত্বর দিয়ে মেসে ফিরছিলে। ছিনতাইকারীরা তাকে কলেজ চত্বরে ছুরিকাঘাতে খুন করেন। সেই ঘটনায় মামলা হলেও এখনও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এর দুই দিন আগে ২ এপ্রিল রাত সাড়ে ৮টার দিকে কলেজ চত্বরে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে আহত হন বগুড়া জেলা পুলিশে কর্মরত উপ-পরিদর্শক (এস আই) রবিউল ইসলা। সেই ঘটনাতেও মামলা হয়েছে। কিন্তু গ্রেফতার করা যায়নি জড়িতদেরকে।
গত ৪ এপ্রিল বিকেলে বগুড়া সদর পুলিশ ফাঁড়ির পিছনে এক নারীর চোখে দাহ্য পদার্থ স্প্রে করে ছিনতাই করা হয় ২০ হাজার টাকা। এর কয়েকদিন আগে শহরের সুত্রাপুর আজাদ পাম্পের গলিতে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন একজন চিকিৎসক ও একজন ব্যবসায়ী।
দীর্ঘদিন বগুড়া শহরে ছিনতাই ছিল না বললেই চলে। কিন্তু রাতে পুলিশের টহল ঝিমিয়ে পড়ায় ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা তৎপর হয়ে উঠেছে। প্রতি রাতেই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটায় আতংকিত হয়ে পড়েছেন রাতে ঘরে ফেরা কর্মজীবী লোকজন।
বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সেলিম রেজা বার্তা২৪.কম-কে বলেন, শনিবার রাতে ছিনতাইয়ের ঘটনা জেনেছি। ছিনতাই ঠেকাতে রাতে টহল জোরদার করা হবে।