‘বর্তমানে বিশ্বশান্তি নিশ্চিত করা চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে’
বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিশ্বশান্তি নিশ্চিত করা অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের মতো একটা অদৃশ্য শত্রুর আবির্ভাব, প্রযুক্তির দ্রুত প্রসার এবং সময়ের অগ্রযাত্রার সাথে সাথে নতুন নতুন হুমকির উপাদানও সৃষ্টি হয়েছে। জাতির পিতার শান্তির দর্শন প্রতিষ্ঠায় এই বহুজাতিক অনুশীলনটি একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।
সোমবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আয়োজিত অনুশীলন ‘শান্তির অগ্রসেনা’ শীর্ষক অবলোকন অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি টাঙ্গাইল ঘাটাইল বঙ্গবন্ধু সেনানিবাস প্রান্তে যুক্ত ছিলেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনুশীলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। গত ৪ থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত এই অনুশীলন অনুষ্ঠিত হয়।
আজকের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং ভারতের সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নরভানে।
বাংলাদেশ ও ভারতের সেনা সদস্যদের পাশাপাশি ভুটান ও শ্রীলঙ্কার সেনা সদস্যরাও এই অনুশীলনে যোগ দিয়েছেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, তুরস্ক, সৌদি আরব, কুয়েত ও সিঙ্গাপুর থেকে সেনাবাহিনীর পর্যবেক্ষকরা অংশ নিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুজিব শতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অনুশীলন ‘শান্তির অগ্রসেনা’ আয়োজন করেছে। যে সকল বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র অনুশীলনটিতে অংশগ্রহণ করেছেন। আর সেসব দেশের প্রধানমন্ত্রী, সরকার প্রধানগণ বা রাষ্ট্রপ্রধানগণ আমাদের সরকারের আমন্ত্রণে মুজিববর্ষে এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে সরাসরি উপস্থিত হয়ে আরও গর্বিত ও মহিমান্বিত করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
তাই অনুশীলন শান্তির অগ্রসেনায় অংশগ্রহণকারী অতিথি, সামরিক সদস্যদের মাধ্যমে আপনাদের দেশের সরকারপ্রধান এবং বন্ধুপ্রতিম জনগণকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
নিশ্চয়ই আপনাদের মাধ্যমে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সামনের দিনগুলোতে আরও সমৃদ্ধ হবে, বন্ধুত্বপূর্ণ হবে, সহযোগিতাপূর্ণ হবে বলে আশাবাদ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিশ্বশান্তি নিশ্চিত করা অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনার মতো একটা অদৃশ্য শত্রুর আবির্ভাব, প্রযুক্তির দ্রুত প্রসার এবং সময়ের অগ্রযাত্রার সাথে সাথে নতুন নতুন হুমকির উপাদানও সৃষ্টি হয়েছে।
বর্তমানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনগুলোতে শান্তিরক্ষীদের বহুমাত্রিক ও জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। সম্প্রতি শান্তিরক্ষীদের প্রাণহানি উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে। এযাবৎ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীগণের মধ্যে ১৫৮ জন প্রাণ উৎসর্গ করেছেন এবং ২৩৬ জন আহত হয়েছেন বলেও অবহিত করেন তিনি।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা অপারেশনে আগামী দিনের নতুন সংকটগুলো মোকাবিলায় শান্তিরক্ষীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জামাদি প্রস্তুত করা এখন সময়ের দাবি। আশা করি এবিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি আরও বলেন, আমি জানতে পেরেছি অনুশীলন শান্তি অগ্রসেনায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের সাম্প্রতিক সময়ের উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে কিছু ঘটনা অংশগ্রহণকারীদের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে। যাতে করে এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে আমাদের ভবিষ্যৎ শান্তিরক্ষীরা সুপ্রশিক্ষিত হয়ে উঠতে পারে। এই অনুশীলনে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা অপারেশনে নারীদের অবদান তুলে ধরা হয়েছে, জেনে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষ্যে অত্যন্ত নিখুঁত এবং সফলভাবে এই অনুশীলনটি আয়োজন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার শান্তির দর্শন প্রতিষ্ঠায় এই বহুজাতিক অনুশীলনটি একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে বিশ্বাস করি।