‘পেট তো আর লকডাউন মানে না’
করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত সাতদিনের লকডাউন শেষ হয়েছে গত রোববার। তারপর সোমবার ও আজ মঙ্গলবার অর্থাৎ, ১২ এপ্রিল এবং ১৩ এপ্রিল দেশে প্রথম দফা লকডাউনের ধারাবাহিকতায় চলছে। আগামীকাল বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে দেশব্যাপী কঠোর লকডাউন। এই লকডাউনে অনেকে ছেড়েছেন ঢাকা। তবে যারা ঢাকা ছাড়তে পারেননি তাদের চিন্তার যেন শেষ নেই। প্রথম দফা লকডাউনে কয়েকদিন গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও রাজধানী জুড়ে রাজত্ব করেছে রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও প্রাইভেটকার।
তবে এবারের কঠোর লকডাউনে রাস্তায় চলবে না কোন রিকশা ও সিএনজি। সরকারের এমন ঘোষণায় উদ্বিগ্ন রিকশা ও সিএনজি চালকেরা।
মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর পান্থপথে যাত্রীর আশায় দাঁড়িয়ে থাকা তাহের মিয়া নামে এক রিকশাচালক বলেন, আমরা বাবা গরিব মানুষ। দিন আনি দিন খাই। আমাদের লকডাউনে চিন্তার শেষ নাই। সরকার আইন করছে, না মাইনে উপায় কি বলেন?
তিনি আরও বলেন, আমাদের গরিবের কথা সরকার চিন্তা কইরে যদি দিনে ৪/৫ ঘণ্টা অন্তত চালাইবার দিত। তাইলে নিজের খাওয়ার টাকা আর জমার টাকাটা উঠতো। নাইলে তো না খাইয়ে লকডাউন পালন কইরতে হইবো। পেট তো আর লকডাউন মানে না।
খায়রুল নামে এক রিকশাচালক বার্তা২৪.কম-কে বলেন, রংপুর থেকে ১৫ দিন আগে ধার করে টাকা নিয়ে ঢাকা এসেছি। এখন ঢাকা এসে দেখি সবাই বাড়ি চলে যাচ্ছে। কালকে থেকে নাকি কঠোর লকডাউন। এখন কি করবো বুঝতেছি না।
খায়রুল আরও বলেন, আগের লকডাউনে যাত্রী কম থাকলেও রিকশা তো চালাইতে পারছি। এখন আমার সংসার কেমনে চলবে আপনারাই বলেন। বাড়িতে বউ পোলাপান সবাই চিন্তা করতেছে। জোর কইরা বাইর হইলে তো পুলিশ পিডাইবো।
কাওরান বাজারের সোলাইমান রিকশা গ্যারেজের ম্যানেজার আলামিন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আমাদের গ্যারেজে ৮০টি রিকশা আছে। লকডাউন শুইনা অনেকে গ্রামে চইলা গেছে। যাওয়ার সময় ভাড়া বেশি হওয়ায় অনেকে কাল যায় নাই । তারা হয়তো আজ যাবে। গ্যারেজ বন্ধ থাকলে আমাদের বউ বাচ্চা নিয়া কেমনে চলবো। সেই চিন্তায় আছি।
কাওরান বাজারে সিএনজি নিয়ে যাত্রীর আশায় বসে থাকা রফিক নামে এক সিএনজি চালক বার্তা২৪.কম-কে বলেন, গত কয়েকদিন ঠিক মত আয় করলেও এখন শঙ্কায় আছি লকডাউনের। আমরা তো স্বাস্থ্যবিধি মেনেই যাত্রী নিয়ে চলাচল করি। আমাদের সিএনজি তো বন্ধ করার দরকার পরে না। আমাদের স্বাস্থ্যবিধি ঠিকভাবেই আছে। লকডাউন দিয়া আমাদের আয় বাণিজ্য বন্ধ কইরা দিলে পরিবার নিয়া কেমনে থাকবো বলেন।
রফিক ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, ঢাকায় পরিবার নিয়া থাকি। মাস গেলে বাসা ভাড়া দিতে হয়। আমরা তো আর চাকরি করি না যে বেতন পামু। দিনে গাড়ি চালাইয়া রাতে বাসায় বাজার নিয়া যাই। এখন সব কিছু বন্ধ থাকলে বাসা ভাড়া দিমু কি দিয়া। বাড়িওয়ালারা তো আর বাসা ভাড়া মাফ করবে না।
উল্লেখ্য, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বেড়ে যাওয়ায় আগামী ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল সব প্রকার পরিবহন (সড়ক, নৌ, রেল, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট) বন্ধ রাখার জন্য গতকাল সোমবার (১২ এপ্রিল) এক আদেশ জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। তবে পণ্য পরিবহন, উৎপাদন ব্যবস্থা ও জরুরি সেবাদানের ক্ষেত্রে এ আদেশ প্রযোজ্য হচ্ছে না।