এলপি গ্যাসের মূল্য নির্ধারণ টার্নিং পয়েন্ট
এলপি গ্যাসের খুচরা মূল্য নির্ধারণের বিষয়টি টার্নিং পয়েন্ট। তবে প্রতি মাসে সমন্বয় করার জন্য কমিটি করে গণশুনানির মূল মেরিটকে কবর দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম।
দর ঘোষণা পরবর্তী বার্তা২৪.কম-কে এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, এতোদিন এলপিজি আমদানিকারকরা তাদের ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণ করেছে। বিইআরসি তাদের সেই সুযোগ করে দিয়েছে। তখন যুক্তি দেখানো হতো মুক্তবাজার অর্থনীতির। কিন্তু বাজারে সরকার কিংবা ভোক্তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। একক কর্তৃত্ব ছিল ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে।
বিষয়টি যে সঠিক না, আমরা এতদিন ধরেই এর বিরুদ্ধে কথা বলে আসছিলাম। শেষ পর্যন্ত কোর্টে যেতে হয়েছে। তারই টার্নিং পয়েন্ট এই দর ঘোষণা, আমাদের মুভমেন্টের অ্যাচিভমেন্ট এটি। তবে মন্ত্রণালয় মেনে নিলেও পলিসি নীতিতে তারা বাস্তবে সরে আসেনি। তারা তাদের কর্তৃত্ব রাখার চেষ্টা করছে।
দর ঘোষণার আদেশে বিইআরসি কমিটি গঠন করে দিয়েছে। যারা মাসে মাসে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মূল্য সমন্বয় করবে। এই কমিটি নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে শামসুল আলম বলেন, কমিটি গঠন করে বিইআরসি আইনের মূল মেরিট এবং গণশুনানির মূল মেরিটকে কবর দিয়েছে। গণশুনানি মানে সবার মতামত শুনে রায় দেওয়া। যদিও যেভাবে হওয়ার কথা সেভাবে হয় না। আলোচনা হয় এক রকম আর দর ঘোষণা করা হয় অন্যরকম।
তবুও অন্তত ভোক্তাদের একটি কথা বলার জায়গা ছিল। এখন সেই জায়গাটিও কমিটি করে বন্ধ করা হলো। এতদিন এলপিজি আমদানিকারকদের সংগঠন বসে দর নির্ধারণ করতো, এখন কমিটি সেই কাজটি করবে। মানুষ দেখতেও পাবে না, বুঝতেও পারবে না।
প্রতি মাসে দর উঠা-নামার সঙ্গে গণশুনানির বিষয়টি কতটা বাস্তব সম্মত? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো শুনানি নিতে এক বেলার বেশি লাগে? এক্সেল সিটে প্যারামিটার থাকবে, মাসের শুরুতে এক সপ্তাহের মধ্যে দর ঘোষণা করবে। কাজটি শুরু করলে সক্ষমতা বেড়ে যাবে। তারা না পারলে সেটি তাদের যোগ্যতার অভাব।
শামসুল আলম বলেন, জানুয়ারি মাসে শুনানি নিয়ে এতদিন অপেক্ষা করে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। তখন বলা হয়েছিল ৮৬৬ টাকা, তখন দর ঘোষণা করলে মানুষ আরও কম দামে পেতে পারতো। ওই শুনানির পর থেকেই দাম বাড়িয়ে অনেক মুনাফা করেছে ব্যবসায়ীরা। পেট্রোল ডিজেলের দাম রাত ১১টায় ঘোষণা দিয়ে ১২টায় কার্যকর করতে পারে। এখানে এতোদিন লাগে কেনো।
তিনি বলেন, এলপিজি একটি অতীব জরুরি পণ্য। এখানে ভর্তুকির প্রসঙ্গ ছিল। দর ঘোষণার আদেশে বলেছে সরকারের পলিসি হচ্ছে ভর্তুকি থেকে বের হয়ে আসা। তারাতো অন্তত এটুকু বলতে পারতো সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে ভর্তুকি কিংবা ক্রসসাবসিডি দেওয়া হবে। তখন আমরা বুঝতে পারতাম সরকার করে কি না। অতীতে এভাবেই গ্যাস উন্নয়ন তহবিল গঠন করা হয়েছে। কোর্টের আদেশের কারণে দায়সারা গোছের আদেশ দিয়ে নিজেদের আড়াল করেছে বিইআরসি।
কমিশন সূত্র দাবি করেছে কমিটি করে ভোক্তাদের স্বার্থ ক্ষুন্ণ করা হয়নি। সৌদি রাষ্ট্রীয় কোম্পানি আরামকো ঘোষিত দরকে প্রতি মাসের ভিত্তি মূল্য ধরা হয়েছে। মার্চের দর কেজি প্রতি ৫১.৩৫ টাকা ধরে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। অপরেশনার ব্যয় যুক্ত করে প্রতি কেজি ৭৬.১২ টাকা ও মুসকসহ খুচরা মূল্য ধরা হয়েছে ৮১.৩০ টাকা। সৌদির দর উঠা-নামা করলে ৫২.৩৫ টাকার স্থলে উঠা-নামা করবে। অন্যান্য দর অপরিবর্তিত থাকবে পরবর্তী গণশুনানি না হওয়া পর্যন্ত। প্রতি মাসে গণশুনানি করা সময় সাপেক্ষ বিষয়।
প্রতিমাসে সৌদি সিপির ভিত্তিতে পুনঃনির্ধারণ করার জন্য বিইআরসির একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রধান করা হয়েছে বিইআরসির পরিচালককে (অর্থ ও হিসাব)। এখানে সদস্য হিসেবে থাকছেন ক্যাব ও কোম্পানির প্রতিনিধি। কমিটি আরামকো ঘোষিত দর সংগ্রহ পূর্বক ২৫ তারিখের মধ্যে সুপারিশ প্রদান করবে পরবর্তী মাসের দরের। অন্যদিকে কোম্পানিগুলো প্রতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে সৌদি সিপির দর লিখিতভাবে কমিশনে দেবেন।
কমিটি গঠন নিয়ে ক্যাবের আপত্তি প্রসঙ্গে বিইআরসির চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ক্যাবের অভিযোগ সঠিক নয়। ভোক্তাদের স্বার্থ সুরক্ষা করা হয়েছে। গণশুনানির মুল মেরিট কবর দেওয়ার অভিযোগও সত্য নয়।
১২ এপ্রিল ভোক্তাপর্যায়ে ১২ কেজি বেসরকারি এলপিজির (লিকুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস) মূল্য ৯৭৫ টাকা এবং সরকারি এলপিজির মূল্য ৫৯১ টাকা ঘোষণা করা হয়। একইসঙ্গে অটোগ্যাসের লিটার প্রতি ৪৭.৯২ টাকা দর ঘোষণা করেছে বিইআরসি। যা ১২ এপ্রিল থেকেই কার্যকর হওয়ার কথা।