এলপি গ্যাসের মূল্য সমন্বয় কমিটি গঠন বেআইনি
প্রতি মাসে এলপি গ্যাসের দর সমন্বয়ের জন্য গঠিত কমিটিকে বেআইনি ও বিইআরসি আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মন্তব্য করেছে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।
বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) বিইআরসিতে পাঠানো এক চিঠিতে এমন মতামত তুলে ধরেন। ১২ এপ্রিল এলপি গ্যাসের দর নির্ধারণের আদেশে কমিটি গঠন করে দেয় বিইআরসি। কমিটি মাসে মাসে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মূল্য সমন্বয় করবে। অন্যান্য দর অপরিবর্তিত থাকবে পরবর্তী গণশুনানি না হওয়া পর্যন্ত। দর ঘোষণায় সৌদি সিপিকে এলপিজির ভিত্তি মুল্য ধরা হয়েছে।
কমিটিতে প্রধান করা হয়েছে বিইআরসির পরিচালককে (অর্থ ও হিসাব)। সদস্য হিসেবে থাকছেন ক্যাব ও কোম্পানির প্রতিনিধি।কমিটি আরামকো ঘোষিত দর সংগ্রহ পুর্বক ২৫ তারিখের মধ্যে সুপারিশ প্রদান করবে পরবর্তী মাসের দরের। অন্যদিকে কোম্পানিগুলো প্রতি মাসের পনের তারিখের মধ্যে সৌদি সিপির দর লিখিতভাবে কমিশনে দেবেন।
বিইআরসি শুনানির মাধ্যমে পরবর্তী মাসের এলপিজির দর ঘোষণা করবে। এ জন্য ক্যাবের প্রতিনিধি মনোনয়ন দেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়। আর সেই চিঠির জবাবে মনোনয়ন না দিয়ে কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ক্যাব। ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকট হুমায়ুন কবীর ভূইয়া স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, হাইকোটের আদেশ মতে বিইআরসি গণশুনানির ভিত্তিতে এলপিজির মূল্যহার নির্ধারণ করেছে। সেই আদেশে গণশুনানির পরিবর্তে শুনানির ভিত্তিতে মুল্যহার নির্ধারণের আদেশ দিয়েছে। ফলে এ আদেশ মহামান্য হাইকোর্টের আদেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন। আবার কমিটিতে ক্যাবের একজন আর লাইসেন্সিদের ২ জন প্রতিনিধি। অর্থাৎ কমিটি স্বার্থসংশ্লিষ্ট পক্ষগণ প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত। ফলে কমিটি স্বার্থসংঘাত মুক্ত নয়। ফলে কথিত কমিটি অগ্রহণযোগ্য।
ক্যাবের চিঠিতে আদেশের ৮.৬ অনুচ্ছেদ বাতিল ও বিতর্কিত কমিটিতে সদস্য মনোনয়ন দিতে অপরাগতা জানিয়েছে ক্যাব।
বিইআরসির আদেশের পর আক্ষেপ প্রকাশ করে ক্যাবের উপদেষ্টা শামসুল আলম বলেছিলেন, কমিটি গঠন করে বিইআরসি আইনের মূল মেরিট এবং গণশুনানির মূল মেরিটকে কবর দিয়েছে। গণশুনানি মানে সবার মতামত শুনে রায় দেওয়া। যদিও যেভাবে হওয়ার কথা সেভাবে হয় না। আলোচনা হয় এক রকম আর দর ঘোষণা করা হয় অন্যরকম।
তবুও অন্তত ভোক্তাদের একটি কথা বলার জায়গা ছিল। এখন সেই জায়গাটিও কমিটি করে বন্ধ করা হলো। এতোদিন এলপিজি আমদানিকারকদের সংগঠন বসে দর নির্ধারণ করতো, এখন কমিটি সেই কাজটি করবে। মানুষ দেখতেও পাবে না, বুঝতেও পারবে না।
প্রতি মাসে দর উঠা-নামার সঙ্গে গণশুনানির বিষয়টি কতটা বাস্তব সম্মত? এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, কোনো শুণানি নিতে এক বেলার বেশি লাগে? এক্সেল সিটে প্যারামিটার থাকবে, মাসের শুরুতে এক সপ্তাহের মধ্যে দর ঘোষণা করবে। কাজটি শুরু করলে সক্ষমতা বেড়ে যাবে। তারা না পারলে সেটি তাদের যোগ্যতার অভাব।
কমিশন সুত্র দাবী করেছে কমিটি করে ভোক্তাদের স্বার্থ ক্ষুন্ন করা হয় নি। সৌদি রাষ্ট্রীয় কোম্পানি আরামকো ঘোষিত দরকে প্রতি মাসের ভিত্তি মূল্য ধরা হয়েছে। মার্চের দর অনুযায়ী কেজি প্রতি ৫১.৩৫ টাকা ধরে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। অপরেশনার ব্যায় যুক্ত করে প্রতি কেজি ৭৬.১২ টাকা ও মুসকসহ খুচরা মূল্য ধরা হয়েছে ৮১.৩০ টাকা। সৌদির দর উঠা-নামা করলে ৫২.৩৫ টাকার স্থলে উঠা-নামা করবে। অন্যান্য দর অপরিবর্তিত থাকবে পরবর্তী গণশুনানি না হওয়া পর্যন্ত। প্রতি মাসে গণশুনানি করা সময় সাপেক্ষ বিষয়।
প্রতিমাসে সৌদি সিপির ভিত্তিতে পুনঃনির্ধারণ করার জন্য বিইআরসির একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।