ইউটিউব দেখে স্কুলছাত্রের তরমুজ বাগান, দর্শনার্থীর ভিড়
মানিকগঞ্জ সরকারি টেকনিক্যাল স্কুলের দশম শ্রেণীতে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী মিলন হোসেন। পড়াশুনা করছেন কম্পিউটার ইনফরমেশন অ্যান্ড টেকনোলজি বিষয়ে। ইউটিউব ও ইন্টারনেট জগত সম্পর্কে জানতে আগ্রহের কমতি নেই তার।
সুযোগ পেলেই অজানা বিষয়কে জানার চেষ্টায় মশগুল থাকে মিলন। ইউটিউবে হলুদ জাতের তরমুজের বাম্পার ফলন ও মুনাফা দেখে আগ্রহ বাড়ে তার। নিজেদের ১৭ শতাংশ জমিতে চলতি মৌসুমে শুরু করেন তরমুজের আবাদ। অনুকূল আবহাওয়া আর উত্তম পরিচর্যায় তরমুজের ফলনও হয়েছে বেশ।
সপ্তাহ দুয়েক পর থেকে তরমুজের বাজারজাতকরণ শুরু হয়ে যাবে। হলুদ জাতের এই তরমুজ এক নজরে দেখতে জমিতে প্রায়ই ভিড় জমায় আশেপাশের বিভিন্ন এলাকার উৎসুক জনতা। অনেকেই আবার তরমুজের আবাদ করার বিষয়ে যোগাযোগ করছে মিলনের সঙ্গে। খুব শীঘ্রই চরবারইল এলাকায় হলুদ জাতের তরমুজের আবাদ বাড়বে বলে ধারণা এলাকাবাসীর।
শনিবার সকালে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের চরবারইল এলাকায় তরমুজের জমিতে আলাপ হয় শিক্ষার্থী মিলন হোসেনের সঙ্গে। তরমুজের আবাদ বিষয়ে জানতে চাইলে মিলন বলেন, ইউটিউবের মাধ্যমে তিনি হলুদ জাতের তরমুজ সম্পর্কে জানতে পারেন।
ঢাকার সিদ্দিক বাজারের এক ব্যবসায়ীর নিকট অনলাইনে মাত্র ২০ গ্রাম বীজের অর্ডার করে মিলন। এর জন্য তাকে গুনতে হয় তিন হাজার টাকা। অর্ডার করার ৩/৪ দিন পরেই মানিকগঞ্জ শহরের সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে তরমুজের বীজ সংগ্রহ করেন তিনি।
এরপর নিজেদের ১৭ শতাংশ জমিতে পরিক্ষামুলকভাবে তরমুজের আবাদ শুরু করেন। জমি তৈরি, সার, কীটনাশক, বীজ ও মাচাইলসহ তরমুজ চাষাবাদে তার খরচ হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার টাকা। আবাহওয়া অনুকূলে থাকলে ওই জমি থেকে কমপক্ষে ১৫’শ তরমুজ বিক্রি করা যাবে বলে জানান তিনি।
মিলনের বড় ভাই বি.এ শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মনির হোসেন বলেন, করোনা’র কারণে গৃহবন্দি সময় পার হচ্ছে। এরইমধ্যে জমিতে হলুদ জাতের তরমুজের আবাদ করে তার ছোট ভাই। বিষয়টি নিয়ে চাষাবাদের শুরুতে নানা রকমের মন্তব্য করলেও ফলন আসার পর থেকে এখন বেশ আগ্রহ বাড়ছে।
পরীক্ষামুলকভাবে চাষাবাদ করা ওই জমি থেকে মুনাফা পাওয়া গেলে আগামী মৌসুমে ব্যাপকভাবে তরমুজের আবাদ করার পরিকল্পনা রয়েছে। মানিকগঞ্জে সবুজ এবং কালো রঙের অহরহ তরমুজ থাকলেও হলুদ রঙের কোন তরমুজ নেই। তাই নিজেদের আবাদ করা হলুদ জাতের এই তরমুজ বিক্রি করে বেশ লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে মন্তব্য করেন মনির হোসেন।
তরমুজ বাগানে একাদিক কিশোর ও গৃহিনীদের সঙ্গে আলাপ হলে তারা বলেন, চরবারইল এলাকায় কেউ কখনো তরমুজের চাষাবাদ করেনি। এর মধ্যে হলুদ জাতের তরমুজ আবাদের সংবাদ স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পেরে এক নজরে দেখতে জমিতে ভিড় জমিয়েছেন তারা। অনেকেই আবার আগামী মৌসুমে একই জাতের তরমুজ আবাদের আগ্রহও প্রকাশ করেন।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আফতাব উদ্দিন মাহমুদ বলেন, উপজেলার চরবারইল এলাকায় হলুদ জাতের তরমুজ আবাদের বিষয়টি সর্ম্পকে তিনি লোকমুখে জানতে পেরেছেন। তরমুজ আবাদের বিষয়ে কোন পরামর্শ চাওয়া হলে অবশ্যই তিনি বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন বলে মন্তব্য করেন।