কুুষ্টিয়ায় ফুটপাতে রোজাদারদের জন্য ইফতারের প্যাকেট



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ,বার্তা২৪.কম, কুষ্টিয়া
কুুষ্টিয়ায় ফুটপাতে রোজাদারদের জন্য ইফতারের প্যাকেট

কুুষ্টিয়ায় ফুটপাতে রোজাদারদের জন্য ইফতারের প্যাকেট

  • Font increase
  • Font Decrease

কখনোবা কুষ্টিয়া শহরের এনএস রোড, বঙ্গবন্ধু সুপার মার্কেটেরে সামনে আবার কখনো বা কুষ্টিয়া পৌরসভার সামনের সড়কে সারি সারি করে ইফতার সামগ্রীর প্যাকেটের সাথে পানির বোতল থরে থরে সাজানো। রোজার শুরু থেকে প্রতিদিন ইফতারের আগে এ দৃশ্য দেখা যায় কুষ্টিয়া শহরের এসব সড়কগুলোতে।

এসব সড়কে চলাচলরত ইজিবাইক চালক কিংবা রিকশা চালক অথবা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া রোজাদাররা যে যার মতো করে একটি প্যাকেট নিয়ে চলে যান। মূলত কুষ্টিয়া শহরের অসহায়, দরিদ্র কিংবা স্বল্পআয়ের দিনমজুরদের জন্য এমন ব্যতিক্রমী ইফতারের আয়োজন করছে কুষ্টিয়ার নারী বাতায়ন নামক একটি সংস্থা।

কুষ্টিয়ার বিশ্বস্ত খাদ্যা ও মিষ্টান্ন উৎপাদন প্রতিষ্ঠান মৌবনের উদ্যোগে এই নারী বাতায়ন পরিচালিত হয়ে আসছে। নারী বাতায়ন নামের এই সংগঠনের বেশ কয়েকজন সদস্য এমন মহতি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশব্যপী ‘সর্বাত্মক’ লকডাউন চলাকালীন স্বল্পআয়ের দিনমজুর শ্রমিকদের জন্য এই ইফতার সামগ্রী বিতরণ করছেন তারা।

ইফতারের এক ঘণ্টা আগে তাদের রাস্তায় দেখা যায়। এসময় তারা পথচারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘ আপনি কি রোজা আছেন? থাকলে ওখান থেকে ইফতার নিয়ে যান।’ করোনাকালে এভাবে ইফতার পেয়ে রোজাদাররাও অনেক খুশি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিদিন বিকেল ৫টার দিকে ইফতারের জন্য তৈরীকৃত প্যাকেট একেকদিন শহরের একেক সড়কে রাখা হয়।
প্রতি প্যাকেটে মুড়ি, ছোলা,  পেঁয়াজু, বুন্দিয়া, বেগুনি, আলুর চপ, জিলাপি, খেজুর রাখা হয়। সঙ্গে থাকে এক বোতল বিশুদ্ধ খাবার পানি। সড়কের পাশে ফুটপাথে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয় প্যাকেটগুলোকে।

শহরতলীর মঙ্গলবাড়ীয়া থেকে রিকশা নিয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকায় চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আব্দুস সালাম। তিনি জানান, ‘লকডাউনের কারণে আগের মতো যাত্রী নেই। সংসারে ৫জন খানেওয়ালা। দিনশেষে আড়াইশ টাকা আয় হয়েছে। দিনভর যা আয় করিছি তা দিয়ে সংসারের জন্য চালডাল তেল লবন কিনতি হবি। ইফতারি কিনবো ক্যাম্বা কইরি। রাস্তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। তারা আমাকে ডেকে এই ইফতারের প্যাকেট দিলো। আমিও নিয়ে নিলাম। যারা দিচ্ছে তাদের জন্য অনেক দোয়া করি বলে জানালেন তিনি।

ষাটোর্ধ রিকশা চালক কুদ্দুস আলী বলেন, প্রয়োজনের তাগিদেই রিকশা নিয়ে রাস্তায় বাইর হইছি। বেলা ডুইবি যাচ্ছে। ইফতারের সুময় হয়ে গেলে। কি করবো ভাবছিলাম। হঠাৎ করে এরা ডেকে ইফতারের বাক্স হাতে ধরিয়ে দিলো। রাস্তার পাশেই রিকশাই বসে ইফতার করলাম।

সংগঠনের সদস্য আশিকুজ্জামান রনি বলেন, এই রমজানে এবং বিশেষ করে লকডাউনের কারণে শহরের কিছু রিকশা চালক, অটো চালক, পথচারী ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের জন্য ইফতারের আগ মুহূর্তে আমরা নারী বাতায়ন সংগঠনের মাধ্যমে শতাধীক ইফতার সামগ্রীর প্যাকেট সড়কের এসব ফটুপাতে রাখছি। যাদের প্রয়োজন হচ্ছে তারা নিয়ে যাচ্ছে। পুরো রমজান মাস এভাবে অসহায় মানুষদের মুখে ইফতার সামগ্রী তুলে দিতে আমরা বদ্ধপরিকর বলেও জানান তিনি।

মৌবনের নির্বাহী পরিচালক ও নারী বাতায়নের সভাপতি সাফিনা আনজুম জনী বলেন, নারীদের উন্নয়ন ও নারীদের স্বাবলম্বী করতে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রমের পাশাপাশি সামাজিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত রয়েছে নারী বাতায়ন সংস্থাটি। যেটির উদ্যোগে রয়েছে মৌবন।

তিনি বলেন, আমরা প্রতিবছর আমাদের প্রতিষ্ঠানের আশেপাশের মসজিদ ও অসহায় দুস্থদের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করে থাকি। কিন্ত এবার লকডাউনের কারণে আমরা মুলত এইভাবে প্যাকেট করা ইফতার সামগ্রী ও পানীয় ইফতারের আগ মুহূর্তে রাখার উদ্যোগ নিয়েছি। এতে করে শহরের রিকশাচালক অটোচালক ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কিছুটা হলেও উপকারে আসবে। এটি পুরো রমজান জুড়েই চলমান থাকবে বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, নারী বাতায়ন সংগঠনটি একটি মৌবন উদ্যোগ। মুলত নারীদের উন্নয়ন ও কল্যাণে পাশাপাশি সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কল্যাণে কাজ করে। এটি একটি মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের অনুমোদনকৃত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

   

ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরার পথে ট্রাক চাপায় স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, সাভার (ঢাকা)
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ঈদের আনন্দ পরিবারের সাথে ভাগ করে নাটোর থেকে মোটরসাইকেল যোগে ঢাকার আশুলিয়ায় ফিরছিলেন পোশাক শ্রমিক দেলোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী। বাসার কাছাকাছি পৌঁছে গেলেও পথিমধ্যে একটি ট্রাক কেড়ে নিল তাদের প্রাণ। নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করেছে আশুলিয়া থানা পুলিশ।

মঙ্গলবার (১৭ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে আশুলিয়ার বিশমাইল-জিরাব সড়কের বড় রাঙ্গামাটিয়া এলাকায় ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যাল ওষুধ কারখানার সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- দেলোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী হাসি বেগম। তাদের গ্রামের বাড়ি নাটোরের সিংড়ায়। দেলোয়ার হোসেন আশুলিয়ার রাতুল নিটওয়্যার লিমিটেড নামক পোশাক কারখানায় লাইনচিফ পদে চাকরি করতেন এবং তার স্ত্রী গৃহিনী। তাদের দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বর্তমানে তারা আশুলিয়ার পুকুরপাড় বাগানবাড়ি এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিল।

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, জিরাবো-বিশমাইল সড়ক দিয়ে মোটরসাইকেল আরোহী দম্পত্তি জিরাব এলাকার দিকে যাচ্ছিলেন। মোটরসাইকেলটি বড় রাঙ্গামাটিয়া এলাকায় পৌছলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কে পড়ে যায়। এসময় একই দিক থেকে আসা একটি ট্রাক তাদের চাপা দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় পিএমকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করে।

নিহত দেলোয়ারের বড় ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আজকেই তারা গ্রামের বাড়ি থেকে এসেছে। আমি তাদের লাশ নিয়ে যেতে চাই। আমরা কোন মামলা মোকদ্দমা চাইনা। আমরা লাশ পোস্টমর্টেম করাতে চাইনা।

আশুলিয়া থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আরাফাত উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা ঘটনাস্থলও পরিদর্শন করেছি। নিহতদের স্বজনরা এসেছেন। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

;

গাজীপুরে বয়লার বিস্ফোরণে চীনা নাগরিক নিহত, আহত ৫



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, গাজীপুর
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

গাজীপুরে একটি ব্যাটারি তৈরি কারখানার বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনায় কর্মরত প্রকৌশলী পুং জুকি (৫৩) নামে এক চীনা নাগরিক নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও ৫ জন।

খবর পেয়ে কাশিমপুরের সারাবো ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করেন।

মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর এলাকায় টং রুইদা ইন্ডাস্ট্রিজ নামে ব্যাটারি কারখানার বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই ব্যাটারি কারখানা চালু করতে গেলে বয়লার বিস্ফোরণ হয়। এ সময় বয়লারের আশেপাশে থাকা পাঁচ জন গুরুতর আহত হন। পরে তাৎক্ষণিক ভাবে আহতদের উদ্ধার করে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল ও নার্সিং কলেজে চিকিৎসার জন্য নেয়া হলে চীনা নাগরিক পুং জুকিকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। বাকিদের ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে।

গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) আবু তোরাব মোহাম্মদ শামসুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

;

বরিশালে কর্মস্থলমুখী জনস্রোত অব্যাহত



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, বরিশাল
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ঈদ উল ফিতরের আগে বরিশাল ও সন্নিহিত এলাকামুখী জনস্রোত ঈদ পরবর্তি সময়ে এখনো কর্মস্থলমুখী। পরিবহন বিশেষজ্ঞসহ মালিক ও শ্রমিকদের মতে এবারো ঈদ উল ফিতরের আগে পরে বরিশালসহ সন্নিহিত এলাকার সাথে রাজধানী ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের অন্তত দশ লাখ মানুষ যাতায়াত করছে। কিন্তু দেশের একমাত্র রেললাইন বিহীন বরিশাল বিভাগে এতদিন নৌপথেই ৭৫ ভাগ যাত্রী যাতায়াত করলেও পদ্মা সেতু চালু হবার পরে সড়ক পথেই ৬৫ ভাগ চলাচল করছে।

নদ-নদী বহুল বরিশাল অঞ্চলে ঐতিহ্যবাহী নৌপথে পৌনে দুশ বছরের জৌলুস হারাতে চললেও পদ্মা সেতু ও বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ে’র পরে ভাঙ্গা থেকে বরিশাল অঞ্চলের জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কগুলোর অবস্থা নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দময় নয়। বরিশাল মহানগরী থেকে ৯০ কিলোমিটার অপ্রসস্ত জাতীয় মহাসড়ক অতিক্রম করে উত্তরে ভাংগায় বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ে পর্যন্ত পৌছতেই ৩-৪ ঘন্টা পর্যন্ত লেগে যাচ্ছে। ফলে পদ্মা সেতু চালু হবার পরে বরিশাল ও সন্নিহিত এলাকা রাজধানীর যতটা কাছে আসার কথা ছিল, তা এখনো সম্ভব হয়নি। এ মহাসড়কে যানবাহনের আধিক্য ৩ গুনেরও বেশী বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীরপাশাপাশি উত্তরবঙ্গের সাথে বরিশাল অঞ্চলের সড়ক পরিবহনে বিড়ম্বনা আরো বেড়েছে।

ঈদকে সামনে রেখে গত কয়েকদিন ধরে পরিস্থিতি আরো নাজুক আকার ধারন করে। বরিশাল ও ভাংগা’র মধ্যবর্তি ৯০ কিলোমিটার মহাসড়কের বেশীরভাগ এলাকায়ই দিনরাত যানজট লেগে আছে।

এদিকে ঈদকে ঘিরে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বরিশাল নদী বন্দরে অতীতের চীরচেনা দৃশ্য না থাকলেও ঈদ পরবর্তি সময়ে যাত্রীদের পদভারে মুখরিত বিগত কয়েকটি দিন। বরিশাল-ঢাকা নৌপথে রুট পারমিটধারী প্রায় ২৯টি যাত্রীবাহী নৌযানের অন্তত ১০টি ইতোমধ্যে হারিয়ে গেলেও অবশিষ্টগুলো কোনমতে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। রোববারে বরিশাল নদী বন্দর থেকে ১২টি নৌযান যাত্রী বোঝাই করে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবার পরে সোম ও মঙ্গলবারেও প্রায় একই পরিস্থিতি অব্যাহত ছিল। এমনকি বেশীরভাগ নৌযানই ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুনেরও বেশী যাত্রী বহন করলেও এবার নৌপথে ভাড়া বাড়ায়নি মালিক পক্ষ। নিকটজনের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঘরেফেরা শ্রমজীবী ও কর্মজীবী মানুষ আগামী শনিবার পর্যন্তই বরিশাল ও সন্নিহিত এলাকা থেকে কর্মস্থলে ফিরবেন বলে আশা করছেন সড়ক ও নৌ পরিবহনের সাথে সংশ্লিষ্টজনেরা। দুটি বাস টার্মিনাল ছাড়াও বরিশাল নদী বন্দরেও গত কয়েকদিন পা ফেলার স্থান নেই।

এদিকে ঈদকে কেন্দ্র করে এবার সড়ক পথে যে যার মত করে ভাড়া আদায় করছে। এমনকি অনেক নামী দামী সড়ক পরিবহন কোম্পানী রুট পারমিটের বাইরেও বাস নিয়ে আসছেন বরিশালসহ আশেপাশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রুটে। ভাড়াও আদায় করছেন তাদের মত করেই। বরিশাল থেকে মাত্র ১৬৫ কিলোমিটার সড়ক পথে ঢাকার বাতানুকুল বাসে সাড়ে ১২'শ টাকা ভাড়া আদায় এখন স্বাভাবিক ঘটনা। অথচ বিআরটিসি একই পথে ৬'শ টাকায় যাত্রী পরিবহন করছে। তবে রাষ্ট্রীয় এ সড়ক পরিবহন সংস্থাটি ঈদ উপলক্ষে কোন বিশেষ বাস সার্ভিস চালু করতে পারেনি যানবাহন স্বল্পতায়।

রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন সংস্থাটি দিনরাতে বরিশাল-ঢাকা সড়ক পথে প্রায় ৩০টি বাসে যাত্রী পরিবহন করলেও সরকারী নৌ-বানিজ্য প্রতিষ্ঠান, বিআইডব্লিউটিসি এবারের ঈদে ছিলো সম্পূর্ণই নিরুদ্বিগ্ন। দেশের একমাত্র অভ্যন্তরীন স্টিমার সার্ভিসের জন্য সংস্থাটির হাতে ৬টি যাত্রীবাহী নৌযান থাকলেও তার কোনটিই যাত্রী পরিবহনে নেই।

রাষ্ট্রীয় আকাশ পরিবহন সংস্থা-বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বরিশালের আকাশ পথে তার সাপ্তাহিক ৪টি ফ্লাইটের বাইরে ঈদের আগে ২টি বিশেষ উড়ানোর ব্যবস্থা করলেও ঈদ পরবর্তী সময়ে ছিল চুপচাপ। তবে বিগত পুরো সপ্তাহ জুড়েই যাত্রীর চাপে জাতীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্সটিও ৩২'শ টাকার টিকেট সাড়ে ৮ হাজার টাকারও বেশী দামে বিক্রী করছে। এব্যাপারে বিমান-এর বরিশাল বিক্রয় অফিসের জেলা ব্যবস্থাপকের ল্যান্ডফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কাউকে পাওয়া যায়নি।

;

আজ ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

১৭৫৭ সালে পলাশির আম্রকাননে বাংলার স্বাধীনতার শেষ সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। ২১৪ পর একাত্তরের ১৭ এপ্রিল পলাশি থেকে ৭০ কি.মি দূরে বৈদ্যনাথতলা তথা মুজিবনগর আম্রকাননে বাংলার সূর্য় উদিত হয়েছিল।

আজ ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এ দিনে তখনকার মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ নেয়। পাশাপাশি এ দিন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অনুমোদিত হয়।

দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও মেহেরপুর জেলা প্রশাসন নানা কর্মসুচী গ্রহণ করেছে।

জনপ্রশাসনমন্ত্রী ও মেহেরপেুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরহাদ হোসেন বলেছেন, বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় ১৭ এপ্রিল এক স্মরণীয় দিন। ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উদ্‌যাপনের মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গঠনে অবদান রাখবে।

জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর গণহত্যার পর বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার গঠনের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা সমবেত হন। যুদ্ধের গতি বাড়ানো এবং আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন আদায়ে একটি সরকার গঠনের প্রয়োজনীয়তা সর্বসম্ততিক্রমে অনুমোদিত হয়। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগের নিরষ্কুশ জয় পান। এ নির্বাচনের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে ১০ এপ্রিল একটি সরকার গঠন করার সিদ্ধান্তে উপনীত হন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচরেরা।

পাকিস্তানের কারাগারেবন্দি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করেন। আরও সিদ্ধান্ত হয় সৈয়দ নজরুল ইসলাম হবেন উপ-রাষ্ট্রপতি, যিনি বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন। তাজউদ্দীন আহমদ যুদ্ধকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বে থাকবেন। সেদিনই গভীর রাতে (১১ এপ্রিল) পশ্চিমবঙ্গের কোনো এক অজ্ঞাত স্থান থেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দীন আহমদের রেকর্ড করা একটি ভাষণ গোপন বেতার কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রচারিত হয়। এই বেতার ভাষণের মধ্য দিয়েই আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের সরকার বিশ্ববাসীর সামনে আত্মপ্রকাশ করে। অস্থায়ী সরকারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ও শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানটি হওয়ার কথা ছিল ১৪ এপ্রিল ১৯৭১, চুয়াডাঙ্গায়। কিন্তু সেই গোপন সিদ্ধান্তটি সংবাদপত্রে ফাঁস হয়ে যায়। ফলে পাকিস্তানি সেনারা প্রবল বোমাবর্ষণ করে ওই স্থানে। আর এতে ভেস্তে যায় সেই পরিকল্পনা।

মুজিবনগরে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। গার্ড অব অনার প্রদানকারী ১২ মধ্যে বেঁচে আছেন মাত্র ২ আনসার সদস্য।

মেজর আবু উসমান চৌধুরীর পৌঁছাতে বিলম্ব হওয়ায় ক্যাপ্টেন মাহবুব উদ্দীন আহমেদ ইপিআর আনছারের একটি ছোট্ট দল নিয়ে নেতৃবৃন্দকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন।

গার্ড অব অনার শেষে স্থানীয় শিল্পীদের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। বাকের আলীর কোরআন তেলাওয়াত এবং ভবরপাড়া গ্রামের পিন্টু বিশ্বাসের বাইবেল পাঠের মাধ্যমে শুরু হয় আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম।

এরপর আওয়ামী লীগের চিফ হুইফ অধ্যাপক মো. ইউসুফ আলী বাংলার মুক্ত মাটিতে স্বাধীনতাকামী কয়েক হাজার জনতা এবং শতাধিক দেশি-বিদেশি সাংবাদিকের সামনে দাঁড়িয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।

ঐতিহাসিক সেই স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে চিফ হুইফ অধ্যাপক ইউসুফ আলী রাষ্ট্রপ্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে উপরাষ্ট্র প্রধান হিসেবে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে শপথবাক্য পাঠ করান।

এরপর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাজ উদ্দীন আহমেদের নাম ঘোষণা করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর সাথে পরামর্শক্রমে মন্ত্রী পরিষদের সদস্য আইন, সংসদ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে খন্দকার মোশতাক আহমদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এএইচএম কামরুজ্জামান এবং অর্থমন্ত্রী হিসেবে ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীকে পরিচয় করিয়ে দেন এবং শপথ পাঠ করান।

মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে কর্নেল এম এ জি ওসমানী এবং সেনাবাহিনীর চিফ অফ স্টাফ পদে কর্নেল আব্দুর রবের নাম ঘোষণা করা হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রী তাজ উদ্দীন আহমেদ উপস্থিত সকলের সামনে ৩০ মিনিটের এক উদ্দীপনাময় ভাষণ দেন।

তিনি বলেন, আজ থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী হবে এ বৈদ্যনাথতলা এবং এর নতুন নাম হবে মুজিবনগর। তিনি বিশ্ববাসীর কাছে নতুন রাষ্ট্রের স্বীকৃতিদান ও সামরিক সাহায্যের আবেদন জানান। সেদিন থেকেই বৈদ্যনাথতলা মুজিবনগর নামে পরিচিত।

বক্তৃতা এবং শপথগ্রহণ পর্ব শেষে নেতৃবৃন্দ মঞ্চ থেকে নেমে এলে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন মেজর আবু উসমান চৌধুরী। উপস্থিত জনতার মূহুর্মূহু জয়বাংলা ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে মুজিবনগরের আম্রকানন। সব মিলিয়ে ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ হয়।

মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বেই টানা ৯ মাস যুদ্ধ শেষে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় বাংলার স্বাধীনতা। বিশ্বের মানচিত্রে ঠাঁই করে নেয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।

;